
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, ছাতক (সুনামগঞ্জ)
সুনামগঞ্জের ছাতকে মাত্র এক বছরের দায়িত্ব পালন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে তাঁকে বর্তমান দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এর আগে ফেনীর সিনিয়র সহকারী কমিশনার মিজ ডিপ্লোমেসি চাকমাকে ছাতকের নতুন ইউএনও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
হঠাৎ এ বদলি ছাতকজুড়ে জনমনে গভীর আক্ষেপ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, প্রশাসনিক দক্ষতা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, কঠোরতা ও মানবিকতার সমন্বয়ে তরিকুল ইসলাম স্বল্প সময়েই জনবিশ্বাসের প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে সেবক প্রশাসক বলে উল্লেখ করে অনেকেই লিখেছেন-সদিচ্ছা ও নিষ্ঠা থাকলে অল্প সময়েই বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব, তার বাস্তব উদাহরণ তিনি।
২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর সুন্দরগঞ্জ থেকে ছাতকে যোগ দেওয়া এই কর্মকর্তা একসঙ্গে উপজেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন, ভূমি অফিস ও শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন। তাঁর স্বচ্ছ ও গতিশীল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় রাজস্ব আদায় প্রায় দ্বিগুণ হয়। দালালমুক্ত প্রশাসন, দুর্নীতি দমন, অফিসে শৃঙ্খলা এবং সেবা সহজীকরণের উদ্যোগে জনভোগান্তি কমে আসে।
ছাতকের সবচেয়ে আলোচিত উদ্যোগ ছিল গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্টে আধুনিক মাছবাজার নির্মাণ-৫৪ বছরের বঞ্চনা ঘোচানোর এ প্রকল্প স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকা উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। বাজারের দোকানকোটা একসনা বন্দোবস্তের মাধ্যমে জলাইযুদ্ধা, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ও অসহায় জেলেদের দেওয়ায় ব্যাপক প্রশংসা পান তিনি।
অবৈধ দখল, মাদককারবারি ও ভূমিখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, ছদ্মবেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, বাজার মনিটরিং এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মতো পদক্ষেপে তিনি অপরাধীদের আতঙ্কে পরিণত হন। শিক্ষা উন্নয়নে প্রথমবারের মতো পৌর এলাকায় মেধাবৃত্তি পরীক্ষা চালুর উদ্যোগও ছিল তাঁর।
মানবিকতার ক্ষেত্রেও তরিকুল ইসলাম ছিলেন দৃষ্টান্ত। সীমান্তে পুশইন হওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের তাৎক্ষণিক সহায়তা এবং অসহায় পরিবারে রাতেই খাবার, টিন ও নগদ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ঘটনাগুলো জনপ্রশংসা পায়।
তাঁর বিরুদ্ধে ছড়ানো বিভিন্ন অভিযোগ প্রশাসনিক তদন্তে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। স্থানীয়দের দাবি, উন্নয়ন ও সেবামুখী প্রশাসনের নতুন ধারার সূচনা করেছিলেন তরিকুল ইসলাম; তাঁর বদলি ছাতকের প্রশাসনিক অগ্রযাত্রায় একটি দৃশ্যমান শূন্যতা তৈরি করেছে।
এএমএল/এমআর