
এম. মজিবুল হক কিসলু, বরগুনা
বরগুনার প্রান্তিক নারী-শিশুদের ক্ষমতায়ন ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ২৬ বছর ধরে নিরন্তর কাজ করছে স্থানীয় এনজিও জাগোনারী। প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থেকে এই পথচলার মুখ্য প্রেরক ও সংগঠক হোসনে আরা হাসি; তার নেতৃত্বে সংগঠনটি জেলা-দেশীয় স্তরে স্বীকৃতি ও সুনাম অর্জন করেছে।
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে নিবন্ধনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে জাগোনারী। প্রতিষ্ঠার সময় বরগুনার নারীদের জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও সামাজিক স্বাধীনতার সুযোগ ছিল কাজে কম। বাল্যবিয়ে, বহু বিয়ে ও সামাজিক কুসংস্কারের কারণে নারীরা আটকে ছিলেন চার দেয়ালে। সেই প্রেক্ষাপট থেকেই নারীদের জীবনমান উন্নয়নে জাগোনারীর যাত্রা শুরু হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাগোনারীর কার্যক্রম ধারালোভাবে বিস্তৃত হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার পার্টনার হিসেবে কাজ করেছে সংগঠনটি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কার্যক্রম বরগুনা পার হয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।
হোসনে আরা হাসি গ্রামের দরিদ্রদের মাঝে গিয়ে প্রশিক্ষণ, সচেতনতা আর সহায়তা পৌঁছে দেন। নারী-প্রধান একটি এনজিও পরিচালনা করে তিনি স্থানীয় সমাজে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণের সহযোগিতায় তিনি বহু প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করেছেন।
জাগোনারীর প্রধান পাঁচটি কর্মসূচি:
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি: মা ও শিশুর প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা উন্নতকরণ।
দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু অভিযোজন: উপকূলীয়াঞ্চলে জরুরি সাড়া ও পুনরুদ্ধার ক্ষমতা বৃদ্ধি।
শিক্ষা: ইসিডি ও আজীবন শিক্ষার সুযোগ প্রসার।
খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকা: ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর আয়ের উৎস বৃদ্ধি।
পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি: নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিতকরণ।
উপকূলীয় এলাকার ঘন ঘন সাইক্লোন ও জলবায়ু ঝুঁকি নারীদের ওপর অপ্রতিম ঝুঁকি সৃষ্টি করে। জাগোনারী এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যক্রমকে কেন্দ্রীয় করে কাজ করে আসছে।
হোসনে আরা হাসি বরগুনা সদর উপজেলার শিয়ালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রয়াত হোসেন মল্লিক ও আমেনা বেগমের কনিষ্ঠ কন্যা। তার স্বামী আইনজীবী অ্যাডভোকেট বনি আমিন বহু বছর আগে প্রয়াত। একমাত্র ছেলে ডিউক তার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সামাজিক উন্নয়নে তার দীর্ঘ কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি উপজেলা, জেলা ও বরিশাল বিভাগীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় ‘জয়িতা’ সম্মাননা লাভ করেছেন।
হোসনে আরা হাসি বলেন, আমি ২৬ বছর ধরে প্রান্তিক নারী ও শিশুদের কল্যাণে কাজ করছি। পুরস্কার পেয়েছি; কিন্তু জীবনের বাকি সময়ও অসহায়দের জন্য কাজ করতেই চাই।