
মো. মহসীন খান
ডিসেম্বর বাঙালির জীবনে গৌরব ও অহংকারের মাস। দিকে দিকে উড়তে থাকে বিজয়ের পতাকা। এ মাসেই একের পর এক মুক্ত হতে থাকে শত্রুকবলিত বাংলার গ্রাম, গঞ্জ, শহর ও বন্দর। প্রতিদিন নতুন মুক্ত এলাকার তালিকায় যুক্ত হয় আরও নাম। বাঙালির বিজয়ের এই মাস পাকিস্তান ও রাজাকারদের পরাজয়ের ইতিহাসও তুলে ধরে।
আজ ৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার। ১৯৭১ সালের এই দিনে এক উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদাররা দ্রুত পিছু হটতে থাকে। এমন সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তার দেশের যুদ্ধজাহাজ ‘সপ্তম নৌবহর’কে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেন। উদ্দেশ্য ছিল-
প্রথমত, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের মনোবল দুর্বল করা;দ্বি তীয়ত, যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে চরম আঘাত হেনে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে বিপর্যস্ত করা।
কিন্তু আমেরিকার সেই অপকৌশলও বিজয়ের অগ্রযাত্রা থামাতে পারেনি। বিদেশি ষড়যন্ত্র পায়ের নিচে রেখে বীর বাঙালি এগিয়ে নিয়ে যায় স্বাধীনতার লড়াই। পাশাপাশি ভারতীয় মিত্রবাহিনীও একচুল পিছিয়ে যায়নি; বরং প্রতিরোধ আরও জোরদার করে।
একই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন সপ্তম নৌবহর পাঠানোর সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিবাদ জানায় এবং পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল আরও বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বানের জবাবে ভারত ৯ ডিসেম্বর তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে। জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন বলেন- উপমহাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি।
এদিন পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের নেতা মাহমুদ আলী পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাংবাদিকদের জানান- সোভিয়েত ইউনিয়নের উচিত ভারতের পাশ থেকে সরে এসে বিশ্বশান্তির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। একই সঙ্গে পাকিস্তানকে সমর্থন দেওয়ায় চীন ও আমেরিকার প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।
এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ আরও গতি পায়। প্রবল প্রতিরোধের মুখে একের পর এক শহর, বন্দর ও গ্রাম হানাদারমুক্ত হতে থাকে। ৯ ডিসেম্বর নতুন নতুন মুক্ত এলাকায় উড়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। মুক্তিযোদ্ধারা নতুন উদ্দীপনায় শত্রুর বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করেন।
– চলবে
লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক