গৌরনদীতে সরকারি খাল ভরাটে চলছে দখলযজ্ঞ!

প্রথম পাতা » বরিশাল » গৌরনদীতে সরকারি খাল ভরাটে চলছে দখলযজ্ঞ!
বৃহস্পতিবার ● ২৩ নভেম্বর ২০২৩


গৌরনদীতে সরকারি খাল ভরাটে চলছে দখলযজ্ঞ!

গৌরনদী (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ন ভূরঘাটা-ভায়া ইল্লা-তাঁরাকুপি খাল দখল করে  বালু ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে  প্রভাবশালী গিয়াস মুন্সীর বিরুদ্ধে। উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ভূরঘাটা গ্রামের মুন্সীবাড়ি ব্রিজ নামকস্থানে ঢাকাÑবরিশাল মহাসড়ক ঘেঁষা ওই খালের একটি ব্রিজসহ ১৬০ ফুটের মধ্যে ২টি বাঁধ দিয়ে সিমেন্টের পাইপ ফেলে বালু ভরাট করা হচ্ছে। যে কারণে এক সময়ের খরস্রোতা প্রায়  ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সরকারি খালটিতে সেচ পানির সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ১০টি ইরি বোরো ব্লকে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার অশঙ্কায় ৫ শতাধিক বোরো চাষি হতাশ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উপজেলার ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশ ঘেঁষা খরস্রোতা প্রায় আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৪০/৫০ ফুট প্রস্থের ভূরঘাটা-ভায়া ইল্ল্-া তাঁরাকুপি সরকারি খাল রয়েছে। ওই খালের ভূরঘাটা গ্রামের মুন্সীবাড়ি ব্রিজ নামকস্থানে খালের পশ্চিম পাড়ের  জমির মালিক গিয়াস মুন্সী  বিলাশ বহুল  আল-মদিনা  হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করার জন্য ইতিমধ্যে ড্রেজার দিয়ে ৬০ শতাংশ জমিতে বালু ভরাট কাজ শেষ করেছে। ওই জমির উত্তর পাশ ঘেষা ইটের সলিংয়ের একটি রাস্তা থাকায় খালের ওপর ১৯৯৭  সালে এলজিইডি বিভাগ একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ করেছে।  ওই ব্রিজের প্রায় ১০ফুট উত্তরে ও  ১৫০ ফুট দক্ষিণে  ২টি বাঁধ দিয়ে পানি নিস্কাশনের জন্য  প্রায় ১৬০ ফুট সিমেন্টের পাইপ বসিয়ে  খাল দখল করে গত ১০ নভেম্বার থেকে খালে বালু ভরাট করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থাণীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই খাল দখল করে  খালের গোড়া ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ডে ১৫টি ও ইল্লা বাসস্ট্যান্ডে ১৪টি ও বার্থী বাসস্ট্যান্ডে ১৮টি অবৈধ স্থাপনা  নির্মাণ করেছে। এখনও দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় ব্লক ম্যনেজার আ’লীগ নেতা  আরজ আলী সরদার, গাইনেরপাড় এলাকার ব্লক ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা,  ইল্লা গ্রামের ব্লক ম্যানেজার জালাল ঘরামী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মহাসড়ক ঘেঁষা ভূরঘাটা- ভায়া ইল্লা- তাঁরাকুপি খালের   আওতায় ইল্লা, বার্থী, তাঁরাকুপি, গাইনেরপাড় ও ভূরঘাটা  এলাকায় ১০টি ইরি-বোরো ব্লক রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার কারণে গিয়াস মুন্সী সরকারি  খাল অবৈধ ভাবে দখল করে ব্রিজসহ খালে প্রায় ১৬০ ফুটের মধ্যে ২টি বাঁধ দিয়ে অনেকগুলো সিমেন্টের পাইপ বসিয়ে   বালু ভরাট কাজ নিবিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে।  খাল ভরাট করা হলে সেচ পানির সংকটে  আমাদের ইরি বোরো ব্লকের চাষাবাদ ব্যাহত হবে। বোরো মৌসুমে সেচ পানির অভাবে আমরা ব্লক করতে পারব না। ফলে ৫ শতাধিক বোরো চাষি  হতাশ হয়ে পড়ছে। এ খালের আওতার ১০টি  ব্লকে ইরি-বোরো   চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।  খালটি দখল মুক্ত করার জন্য সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান তারা।
খাল দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে  গিয়াস মুন্সী বলেন, মরা ও পরিত্যক্ত খালের মধ্যে পাইপ  বসিয়ে বাঁধ দিয়ে অনেকেই বাড়িতে প্রবেশের পথ বানাইছে। বৈধভাবে ইজারা পাওয়ায় জন্য আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ জমি সার্ভে করেছে। এরপর সওজ কতৃপক্ষ প্রায় ১১ শতাংশ জমি আমাকে   ১০ বছরের ইজারা দেওয়ার জন্য প্রাক্কলন (ইজারা মাশুল) প্রস্তুত করেছে।  ওই জমি ইজারা  পাওয়ার পরই  জমি ভরাট করে    প্রবেশের পথ করা হবে।
এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আবদুল্লাহ্ খান জানান,   খবর পেয়ে  এসিল্যান্ডকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে খাল ভরাট কাজ বন্ধ  করে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করে খাল ভরাট কাজ চালালে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহামুদ সুমন বলেন,  প্রবাহমান খাল ইজারা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।  প্রবেশের পথের জন্য ভূরঘাটা গ্রামের গিয়াস মুন্সীর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক প্রাক্কলন প্রস্তুতের পর তা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।  গিয়াস মুন্সীকে  সওজের জায়গা  এখনও  ইজারা দেওয়া হয়নি।

 

 

 

এএসআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:৩২:৫৯ ● ৬১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ