
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মাদ্রাসার দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ফুসলিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার অভিযোগে অভিযুক্ত সহকারী মৌলভী শিক্ষক মো. রবিউল আলমের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।
রবিবার (৪ মে) সকাল ১০ টা থেকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত ফুলবাড়ী উপজেলার খাজাপুর একরামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সামনে হাতে ক্লাস বর্জন করে প্লাকার্ড, ব্যানার হাতে নিয়ে এই ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া প্রতিবাদি শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, রবিউল আলম এই মাদ্রাসার আরবি বিভাগের একজন সহকারী মৌলভী শিক্ষক। শিক্ষক হয়ে মেয়ের বয়সী নাবালিকা ছাত্রীকে ফুসলিয়ে কীভাবে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করতে পারে! এতে শুধু মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। মাদ্রাসায় এমন শিক্ষক থাকলে ছাত্রীদের মাদ্রাসা ত্যাগে বাধ্য হবে। মাদ্রাসা ভাবমূর্তি রক্ষায় এই নাবালিকা ছাত্রীকে বিয়ে করে সে যে অপরাধ করেছেন তার বিচার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ মাদ্রাসা থেকে তাকে অপসারণ করতে হবে।
অভিভাবক মোখলেছুর রহমান, আকরাম হোসেন ও আবু তালেব বলেন, সহকারী মৌলভী রবিউল ইসলাম তার মেয়ের সমতুল্য নাবালিকা ছাত্রীকে প্রথমে অপহরণ করেন। পরে নিজের সেই অপকর্ম ধামাচাপা দিতে জন্মনিবন্ধন তৈরি করে বয়স বাড়িয়ে ওই ছাত্রীকে বিয়ে করে বিয়ের কাবিননামা প্রদর্শন করেন। তার ঘরে স্ত্রী ও সন্তান থাকার পরও একজন নাবালিকাকে বিয়ে করার মাধ্যমে তার শিক্ষকতা করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। তাকে দ্রুত মাদ্রাসা থেকে অপসারণ করা না হলে এলাকাবাসী তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে এই মাদ্রাসায় পড়ানো বন্ধ করতে বাধ্য হবেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর জেঠা (বড়চাচা) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা বন্ধ থাকা অবস্থায় মাদ্রাসার ওই লম্পট শিক্ষক রবিউল আলম আমার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া নাবালিকা ভাতিজিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে। পরে মাদ্রাসা খোলার পর গত মার্চ মাসের ২ তারিখে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বরাবর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এরপর ১০ মার্চ মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভায় ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এদিকে ওইসময় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করলে পুলিশ আমার ভাতিজিকে উদ্ধার করে। এসময় আমরা জানতে পারি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বয়স বাড়িয়ে নাবালিকা মেয়েটিকে ওই শিক্ষক বিয়ে করেছে। এমন একজন দুশ্চরিত্র লোক কখনও মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতে পারেনা। এজন্য তার বিচারসহ তাকে মাদ্রাসা থেকে অপসারণ করতে হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সহকারী মৌলভী শিক্ষক রবিউল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আপনাদের এ নিয়ে এত বুঝতে হবে না! বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফিজ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষক রবিউল আলম এই মাদ্রাসায় ২০১১ সালে যোগদান করেন। তার এহেন কর্মকান্ডে আমরা মর্মাহত। অভিভাবকের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলে আন্দোলন করা হচ্ছে, তা যৌক্তিক। তাকে স্থায়ী বরখাস্তের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবেন। এখানে তার করণীয় কিছু নেই।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও খাজাপুর একরামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নূর-এ-আলম বলেন, এ ঘটনায় শিক্ষক রবিউল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ রোববার (৪ মে) তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, মন্ত্রণালয় থেকে তার ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এসিজি/এমআর