কলাপাড়ায় কাজ না করেই কোটি টাকার বিল তুলে নিল ঠিকাদার

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » কলাপাড়ায় কাজ না করেই কোটি টাকার বিল তুলে নিল ঠিকাদার
শনিবার ● ১৮ জুলাই ২০২০


---

কলাপাড়া (প্রতিনিধি) সাগরকন্যা অফিস॥

কাজ না করেই আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলা নির্মাণের বিল বাবদ এক কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার তিন শ’পয়ত্রিশ টাকা তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মেসার্স সারিকা ট্রেডার্স ৭এপ্রিল বিপুল পরিমান সরকারি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির গলাচিপাস্থ সোনালী ব্যাংকের হিসাব নম্বরে (চলতি- ৪৩১০২০০০০১৫০৫) কলাপাড়া হিসাব রক্ষণ অফিসের ব্যয় বরাদ্দ বিলের ভাউচারের মাধ্যমে এ টাকা হস্তান্তর হয়েছে। যদি এ সকল বিল ভাউচারের সাত নম্বর কলামে চেক ইস্যু করার জন্য আশ্রয়ন-২ প্রকল্প, কলাপাড়া উপজেলা, চলতি হিসাব নম্বর-৫০৭০৯০১০০১১৩৬, পূবালী ব্যাংক লিঃ কলাপাড়া শাখার কথা কম্পোজ করে উল্লেখ করা রয়েছে। কিন্তু ওই লাইনটি কেটে মেসার্স সারিকা এন্টারপ্রাইজের গলাচিপা শাখার সোনালী ব্যংাকের উপরোক্ত হিসাব নম্বরে বিল করে সরাসরি কলাপাড়া থেকে সমুদয় টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সিল-সই রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ন-২ প্রকল্প তেজগাও ঢাকা এর স্মারক নম্বর-০৩.০২.০০০০.৭০১.০২.০৯৬.১৯.১৩১৪ তারিখঃ ৩১ ডিসেম্বর-২০১৯ চিঠিতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কমিউনিটি সেন্টার নির্মান ব্যয় নির্বাহের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। যেখানে কলাপাড়ায় খাজুরা, চালিতাবুনিয়া, গোড়া আমখোলা, ছোট বালিয়াতলী, ফতেপুর, লক্ষ্মী বাজার, নিশানবাড়িয়া, গামুরিবুনিয়া, নীলগঞ্জ ও নিজশিববাড়িয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের জন্য প্রত্যেকটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয় নয় লাখ ৮০ হাজার ১১৩ টাকা। এছাড়া নিশানবাড়িয়া ও গামুরি বুনিয়া আশ্রয়নপ্রকল্পের দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা। নীলগঞ্জ ও গোড়াআমখোলা পাড়া আশ্রয়নের দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা এবং খাজুরা ও ফাসিপাড়া দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা। বাস্তবে এ ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলার কোন কাজ করা হয়নি। সেখানে সকল বিল বাবদ মোট এক কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার তিন শ’ পয়ত্রিশ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সারিকা এন্টার প্রাইজ তুলে নিয়েছে। এসব বিলে মার্চ মাসের ২২ তারিখে বদলী হওয়া কলাপাড়ার ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ’র সই রয়েছে।
ইউএনও মুনিবুর রহমান জানান, আমর যেসব সই দেখানো আছে তা জাল। কারণ আমার কলাপাড়ার চাকরিকালীন সই-স্বাক্ষর অফিসে রক্ষিত রয়েছে। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কোন চিঠিপত্র তিনি কলাপাড়ায় থাকাকালীন রিসিভ বরেননি। কাজকর্ম তো দুরের কথা। এধরনের কোন ফাইল চালু তথা এ প্রকল্পের কোন ব্যংাক হিসাব পর্যন্ত খোলা হয়নি। পূবালী ব্যাংকে যে একাউন্ট খোলা তার সম্পর্কে তার কিছুই জানা নেই। তার সকল স্বাক্ষর জাল করে হিসাব রক্ষণ অফিসে বিল তাও কর্মস্থল ত্যাগ করার পনের দিন পরে ব্যাংক হিসাব ছাড়া সরাসরি ঠিকাদারের হিসাবে ট্রান্সফার করার বিষয়টি কীভাবে সম্ভব হলো। গোটা কাজটি ইউএনওর দফতরের করার কথা, এমনকি অবহিত পর্যন্ত করানো হয়নি। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে এখন কলাপাড়ায় তোলপাড় চলছে।
চম্পাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার এবং লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, তার ইউনিয়নে কমিউনিটি সেন্টার ও ঘাটলার কাজ করার জন্য কোন বরাদ্দ আছে তাও জানা নেই। আর এ ধরনের কোন কাজ করা হয়নি। আর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে যেসব চিঠি ইস্যু দেখানো হয়েছে তার সব মেমো উপজেলা ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়ের। কবে টেন্ডার দেয়া হয়েছে, কীভাবে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে এবং একইদিনে ব্যাংক হিসাব ব্যতিরেকে বিলের সমুদয় টাকা ঠিকাদারের হিসাবে সরাসরি গেল এ নিয়ে জটিল রহস্য দেখা দিয়েছে।
কলাপাড়ার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, বিষয়টি জেনে আমি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে নিশ্চিত হয়েছি। ১০টি কমিউনিটি সেন্টার এবং ছয়টি ঘাটলা নির্মাণের কোন কাজ হয়নি। গোটা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় পূবালী ব্যাংকের হিসাব খোলার বিষয়টিও একটি অনিয়মের মধ্য দিয়ে খোলা হয়েছে। যেখানে যৌথ হিসাব সেখানে শুধু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সই থাকলেও ইউএনওর কোন সই নেই। অথচ ওই একাউন্টে সরকারি টাকা জমা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানান, তিনিও বিষয়টি জেনে অবাক হয়েছেন। ওই ফাইলটিও তার অফিসে নেই বলে জানান। তার সই-স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। বর্তমানে তিনি এলাকার বাইরে রয়েছেন। এসে সবকিছু ঠিকভাবে জানাতে পারবেন। ঠিকাদার মোঃ শামীম জানান, আমাকে কলাপাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ফোন করে বিল রেডি করার কথা বলা হয়েছে। আমি গিয়ে টাকা তুলেছি। তবে করোনার কারনে কোন কাজ করতে পারেন নি। পরে করে দিবেন বলেও জানান। কলাপাড়া হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের অডিটর মংখেলা জানান, তারা যথাযথ ভাবে কাজ করেছেন। কোন অনিয়ম করেননি।

এমইউএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৪:১১:৪২ ● ৫২৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ