আমফান তান্ডবে- কলাপাড়ায় তিন হাজার পরিবারে ঈদ উৎসব নেই!

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » আমফান তান্ডবে- কলাপাড়ায় তিন হাজার পরিবারে ঈদ উৎসব নেই!
শনিবার ● ২৩ মে ২০২০


কলাপাড়ায় তিন হাজার পরিবারে ঈদ উৎসব নেই!

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥

চারিপাড়া গ্রামের দিনমজুর নুর সায়েদ খলিফার এখন শুধু ঘরের ভিটি পড়ে আছে। আমফানের তান্ডবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ঘরসহ সকল মালামাল হারিয়ে ফেলেছে। এ মানুষটির এখনও ঠিকানা চারিপাড়া আশ্রয় কেন্দ্র। একই দশা কামলা দেয়া স্বামী পরিত্যাক্তা রেশমা বেগমের। চার জনের সংসার নিয়ে দিশেহারা এ নারী। ক্যান্সারে আক্রান্ত শয্যাশায়ী স্বামী সেলিমকে নিয়ে বড় বিপাকে আলে বেগম। তিন মেয়ে এক ছেলে নিয়ে ছয় জনের সংসার ঠেলত কামলা দিয়ে। এনারীর এখন দুঃখের যেন শেষ নেই। চৌধুরিপাড়ার বারেক হাওলাদারের নদী পাড়ের শুধু ভিটি পড়ে আছে। এখনর এদের মতো প্রায় এক শ’ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে চারিপাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে। এভাবে চারিপাড়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটায় সবকিছু হারিয়ে ফেলছে। বাড়ির ঘর, আসবাবপত্র, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু নেই। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। চাল-চুলো সব লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। চলাচলের রাস্তাটি পর্যন্ত নেই। নৌকায় চলাচল করছে। স্থানীয় মেম্বার রবিউল হাওলাদার ধার-দেনা করে এসব পরিবারের কাছে কিছু খাবার সামগ্রী সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় পৗছে দিচ্ছেন। তিনি জানান, শুক্রবার দুপুরে আশ্রীত ১৮০ জনকে মুড়ি আর বিস্কুট দিয়েছেন। এরপর কীভাবে চলবে তার নিজেরও জানা নেই। অনেক মানুষ শুকনো চিড়ে, কলা খেয়ে রোজা রেখেছে। এক গ্লাস পানি দিয়ে রোজা খুলেছে এমন মানুষের সংখ্যা অসংখ্য। কারও কাছে দু’চারটি টাকা থাকলেও লোনা পানিতে বন্দী থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
মেম্বার জানান, তার চারিপাড়া গ্রামে ১৩৭টি পরিবারের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এখানে ৬০০ পরিবারের বসবাস। অধিকাংশ হতদরিদ্র। রাবনাবাদ চ্যানেলে মাছ ধরে কিংবা অন্যের জেলে নৌকায় কামলা দেয়। এখন তাও বেকার। এভাবে লালুয়ার ১৭ গ্রামের চরম বেহাল দশা। কমপক্ষে তিন হাজার পরিবারে চরম দুরাবস্থা চলছে। খাদ্যাভাব রয়েছে ঘরে ঘরে। এসব পরিবারের এবছরের ঈদের উৎসব ভেস্তে গেছে। মানুষগুলো কীভাবে একেকটি দিন কাটাবেন তা নিয়ে চরম অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। অস্থির হয়ে পড়েছেন। এসব পরিবারে প্রয়োজন এখন খাদ্য সহায়তা পৌছে দেয়া। চালচুলা পর্যন্ত ভেসে যাওয়া মানুষগুলোর দরকার সকল ধরনের সহায়তা।
রাবনাবাদ পাড়ের এসব মানুষ ২০০৭ সালে সিডর তান্ডবের পরে ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় এক যুগ ধরে জলোচ্ছ্বাসের কারণে বছরের চারটি মাস মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন। আমফানে ভিটি পর্যন্ত হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর উৎযাপন অনিশ্চিত হয়ে গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ^াস জানান, সরকার এবং নিজেদের উদ্যোগে মানুষকে সকল ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তবে দুপুরের পর থেকে বাড়ি ফিরছে অনেকে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কোন ধরনের সমস্যা হবেনা।

 

এমইউএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৭:০২ ● ৪১৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ