কলাপাড়ায় আমফানে কোটি কোটি টাকার ফসলহানি

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » কলাপাড়ায় আমফানে কোটি কোটি টাকার ফসলহানি
শনিবার ● ২৩ মে ২০২০


কলাপাড়ায় আমফানে কোটি কোটি টাকার ফসলহানি

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥

৫০ শতক জমি বছরে ১৬ মন ধানের চুক্তিতে বন্দকী নিয়ে সবজির আবাদ করেছেন কৃষক আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার। প্রায় আট হাজার টাকা খরচ করে বেড (কান্দি) করেছেন। বীজ কিনেছেন ১০ হাজার টাকার। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। বর্ষাকালীন আগাম সবজি চিচিঙ্গা, ঝিঙে, শসার আবাদ করেছেন। চারা গাছগুলে কেবল ৫/৬ ইঞ্চি বড় হয়েছে। টানা খরায় সেচ দিয়ে রক্ষা করেছেন ঝিঙের পাঁচ শতাধিক, চিচিঙ্গার দুই শতাধিক এবং শসার তিন শতাধিক মাদা। কিন্তু আমফানের ঝড়োহাওয়ায় ইতোমধ্যে এক চতুর্থাংশ চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এসব চারগাছ নেতিয়ে পড়েছে। রোদ উঠলে শুকিয়ে যাবে। এক্ষেত দিয়ে দুই লাখ টাকার সবজি বিক্রির স্বপ্ন ছিল মানুষটির।
কৃষক রাজ্জাক আরও জানালেন, ১০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারতেন, এমন লাউক্ষেত সম্পুর্ণভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। চিচিঙ্গার ফলনসহ একটি ক্ষেত তছনছ হয়ে গেছে। নীলগঞ্জের সবজির ভান্ডারখ্যাত কুমিরমারা গ্রামে শুক্রবার বেলা ১১টায় গিয়ে কৃষকের এমনসব সর্বনাশা দৃশ্য দেখা গেছে। কৃষক আব্দুল মন্নান হাওলাদার জানালেন, ১২০ শতক জমির লাউ, চিচিঙ্গা, ঝিঙেসহ সবজির ফলন ধরা গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন লাগানো ক্ষেতের চারাগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এপরিমান জমি বন্দকী রাখতে বছরে ৪০ মন ধান দিতে হবে জমির মালিককে।
রুহুল আমিন জানান, পুই শাকের ক্ষেতটি এখন নষ্ট হয়ে গেছে। পাতায় লাল লাল স্পট পড়েছে। এ শাক কেউ কিনবেনা। এই মুহুর্তে বিক্রির মতো প্রায় ১০০ মন শাক মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা বিক্রি করতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পেতেন। এসব প্রান্তিক চাষীর দুরবস্থা চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। তারপরও ক্ষেতের পরিচর্যায় নেমেছেন এসব মানুষ। এদরই একজন আব্দুল বারেক হাওলাদার জানান, কৃষি প্রণোদনা তো দুরের কথা করোনার দুর্যোগ থেকে এখন পর্যন্ত এক ছটাক চাল ভাগ্যে জোটেনি। কুমিরমারা গ্রামের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ সারা বছর সবজি-শাকের আবাদ করেন। এরা ধানের আবাদ করেন না বলে জানালেন এক জাত কৃষক সুলতান গাজী। একই বক্তব্য জাকির হোসেনের। তার মন্তব্য কোন ধরনের খাদ্য থেকে শুরু করে প্রণোদনার সহায়তা জোটেনি। গ্রামটির দেড় শতাধিক শাক-সবজি চাষীর কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেল আমফানের ঝড়ো হাওয়ায়। মানুষগুলে ফের কোমর সোজা করে লড়াই করছেন সবজির ক্ষেতে।
আমফানের পরে এখন পর্যন্ত কৃষিবিভাগের কোন কর্মকর্তা তাঁদের খোঁজ-খবর নেয়নি বলে জানালেন চাষীরা। একই দশা এলেমপুর, আমিরাবাদ, পুর্বসোনাতলা, মজিদপুর, গুটাবাছা, নাওভাঙ্গা, গামইরতলার চাষীদের। এসব চাষীর লাউ, ঢেড়শ, মিষ্টি কুমরা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, করলা, শসা, কাঁচা মরিচ, বোম্বাই মরিচের ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কৃষকের বাড়ি এবং ক্ষেতে বাস্তব ক্ষতি নিরুপন করে ক্ষতিপুরনের দাবি করেছেন তারা। গোটা নীলগঞ্জে এক হাজার কৃষক পরিবার এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাঁদের সবজিসহ সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে সবজির লাখো চারা গাছ। গোটা উপজেলায় প্রায় ছয় হাজার সবজি চাষীর এমন সর্বনাশ হয়েছে। এরা পথে বসে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, তাদের হিসেব মতে এক হাজার হেক্টর সবজির ক্ষেতের ৭০ ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ৫০ হেক্টর মিষ্টি আলু, ৫৫০ হেক্টর মরিচ ক্ষেতের ফসল আমফানের তান্ডবে নষ্ট হয়ে গেছে।

এমইউএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৪:৫৬ ● ৪৪৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ