আমতলীতে মোবাইলে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার দাবী সুবিধাভোগীদের

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে মোবাইলে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার দাবী সুবিধাভোগীদের
বুধবার ● ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০


আমতলীতে মোবাইলে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার দাবী সুবিধাভোগীদের

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

‘‘আর কত কষ্ট হরমু, ভাতার টাহাডা মোবাইলে দেলে মোগো আর কষ্ট হইরড়া  ব্যাংকে আইতে অইতো না। বুড়া মানু কষ্টের শ্যাষ নাই। মোরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে মোবাইলে টাহাডা দেয়ার দাবী হরি। টাহাডা মোবাইলে দেলে ঘরে বইয়্যা পাইতাম। এ কথা বলেছেন, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্যচিলা গ্রামের ৮০ বছর বয়সি বৃদ্ধা প্রিয়বালা। তিনি আরো বলেন, চোহো দেহি না, কানে হুনি না, হাটতে পারি না। মানে মোরো লইয়্যা আয়। এতো কষ্ট আর সহ্য অয় না।
জানাগেছে, সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে, পরিবারে ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষে ১৯৯৮ সালে সরকার বয়স্ক ভাতা, ১৯৯৯ সালে বিধবাভাতা  ও ২০০৬ সালে অসচ্ছল প্রতিবন্ধিদের জন্য ভাতা চালু করে। ওই সময় থেকে এ ভাতাগুলো দিয়ে আসছে সমাজ সেবা অধিদপ্তর। এ ভাতার আওতায় বরগুনার আমতলী উপজেলায় ১২ হাজার ৫’শ ৯৪ জন উপকারভোগী রয়েছে।  এর মধ্যে বয়স্ক ভাতাভোগী  ৬ হাজার ৬’শ ৪, বিধবা ভাতাভোগী  ৩ হাজার ৪’শ ৪২ ও প্রতিবন্ধি ভাতাভোগী ২ হাজার ৫’শ ৪৮ জন। আগামী অর্থ বছরে এর সাথে আরো যুক্ত হচ্ছে ২ হাজার ৩২ জন। সব মিলে আগামী অর্থ বছরে আমতলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১৪ হাজার ৬’শ ২৬ জন ভাতা পাবেন। এ ভাতা দেয়ায় উপকারভোগীরা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তারা মহাখুশি বলে জানান চাওড়া পাতাকাটা গ্রমের বয়স্কভাতাভোগী ১২০ বছর বয়সি সেরাতুন্নেছা। বয়স্ক ও বিধবারা ৫০০ টাকা হারে এবং প্রতিবন্ধিরা ৭৫০ টাকা হারে প্রতিমাসে ভাতা পেয়ে থাকেন। শুরু থেকেই এ ভাতাগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরন করে আসছে। বর্তমানেও ভাতাগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরন করা হয়। বছরে চার ধাপে সরকারী তফসিল ব্যাংক ভাতাভোগীদের এ টাকা পরিশোধ করে থাকে। এতে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধি ও বয়স্ক মানুষের প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চল থেকে ব্যাংকে এসে ভাতা নিতে সমস্যা হচ্ছে। গ্রামাঞ্চল থেকে আসতে ভাতাভোগীদের বিভিন্ন বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয় এমনটাই জানালো ভাতাভোগীরা। এছাড়াও ভাতা বিতরণে ব্যাংকের রয়েছে দীর্ঘ কালক্ষেপন, দালালের দৌরাত্ব ও যাতায়াতের অব্যবস্থাপনা। ভাতাভোগীরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ ভাতাগুলো মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে পাওয়ার দাবী জানিয়েছেন।
বিধবা ভাতাভোগী ফাতেমা বেগম বলেন, মোর এ্যাকছের কষ্ট অয়। মানের লগে ব্যাংকে আইতে অয়। হ্যারপর ব্যাংকে হারাদিন বইয়্যা থাহা লাগে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী হরি মোগো ভাতার টাহাডা যেন মোবাইলের মাধ্যমে পাডাইয়্যা দেয়। মোগো যেন কষ্ট হইর‌্যা ব্যাংকে আইতে না অয়।
আমতলী সদর ইউনিয়নের পুজা খোলা গ্রামের ভাতাভোগী রাবেয়া বেগম ও আলোনুর বলেন, ২৫ কিলোমিটার দুর থেকে ব্যাংকে এসে ভাতা নিতে হয়। যা আমাদের পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মোবাইলের মাধ্যমে ভাতা পাওয়ার দাবী জানাই।
ভাতাভোগী শাহা ভানু ও তাজেম প্যাদা বলেন, ২০ কিলোমিটার দুর থেকে ব্যাংকে আসতে হয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে এতো কষ্ট আর ভালো লাগে না। সরকার যদি মোবাইলের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করতো তাহলে আমাদের অনেক উপকার হতো। তারা আরো বলেন, আমারা সরকারের কাছে মোবাইলের মাধ্যমে ভাতা পাওয়ার দাবী জানাই।
আমতলী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ইতিমধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তর ইএফটি (ইলেকট্রনিক্স ফান্ড ট্রান্সফার) প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তার সকল ধরনের ভাতা ইএফটির মাধ্যমে ভাতাভোগীদের কাছে পৌছে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এ প্রজেক্ট চালু হলে মধ্য-স্বত্বভোগী ও লাল ফিতার দৌড়াত্বসহ সকল ধরনের হয়রানী বন্ধ হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে, পরিবারে ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধিতে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধিদের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মোবাইলের মাধ্যমে ভাতা পেলে দালালদের দৌরাত্ব কমে যাবে এবং প্রকৃত ভাতাভোগীরা ভাতা পারেন।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৬:৩৯ ● ৩০৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ