
গৌরনদী (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরিশালের গৌরনদীতে ইউএনও এবং ওসির উপস্থিতিতে এক সালিশ বৈঠকে মো. শামচু মৃধা (৫৭) নামে এক মুসল্লিকে দারধর কারা অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টুর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুর পৌণে ২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মুসল্লীদের এক পক্ষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আহলে সুন্নাত আল জামায়াতের ইমাম চট্রগ্রামের আগ্রাবাদের পীর আল্লামা সৈয়দ মো, সাইফুর রহমান নিজামীর অনুসারী গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ বিল্বগ্রাম বাসিন্দাগণ দীর্ঘ প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে তাদের দক্ষিণ বিল্বগ্রাম জামে মসজিদে আযান ও নামাজের একামাতের পূর্বে আসলালাতু আসলালা মুআলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ্ ও আসসালাতু আসসালা মুআলাইকা ইয়া হাবিবাল্লাহ্ বলে দুরুদ পড়ে আসছিলেন। ওই দুরুদ পড়ার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মসজিদের মুসল্লীরা দ্বিধাবিভাক্ত হয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। মসজিদের ইমাম মাওলানা দেলোয়ার হোসেন দুরুদ পড়ার পক্ষে অবস্থান নেয়ায় অপর পক্ষটি মসজিদে নামাজ পড়া ছেড়ে দেন। এ নিয়ে মুসল্লীদের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলা ও থানা প্রশাসনের উদ্যোগে মুসল্লীদের বিরোধ মিমাংসার জন্য গৌরনদীর ইউএনও রিফাত আরা মৌরী ও থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া প্রখ্যাত কয়েকজন আলেম ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে ইউএনও’র কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন। দুরুদ পড়ার বিপক্ষের অবস্থানকারীদের পক্ষ হয়ে সেখানে উপস্থিত হন গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মো. বদিউজ্জামান মিন্টু। দুরুদ পড়ার পক্ষে অবস্থানকারী মুসল্লীদের মধ্যে মসজিদটির ইমাম ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন আলেম ছিলেন না। তবে তাদের পক্ষ হয়ে সেখানে উপস্থিত হন সরকারী গৌরনদী বিশ^বিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ও আগ্রাবাদের পীর আল্লামা সৈয়দ মো, সাইফুর রহমান নিজামীর অনুসারী মমতাজ খানম।
তিনি জানান, আলেমগন একতরফা ভাবে বলেছেন আযান ও নামাজের একামাতের পূর্বে দুরুদ পড়া জায়েজ নেই। অতএব ওই মসজিদে দুরুদ পড়া বন্ধ করতে হবে। আমরা তখন দাবি জানাই যে, দুরুদ পড়া হাদিসে আছে। হযরত বেল্লাল (রাঃ) আযান ও নামাজের একামাতের পূর্বে দুরুদ পড়তেন। এ নিয়ে সরকারি গৌরনদী কলেজ মাঠে উভয় পক্ষের আলেম ওলামাদের নিয়ে বাহাসের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। আলোচনার এক পর্যায়ে ইউএনও রায় দেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওসি মসজিদটিতে যাবেন এবং তিনি মুসল্লীদের নিয়ে ভোটাভুটি করবেন। যতদিন ওসি সেখানে না যাবেন ততদিন দুরুদ পড়া বন্ধ থাকবে। আমরা তার রায় মেনে নেই। এর মধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে একজন বলে ওঠেন মসজিদটির ইমাম কতদিন থাকবে। জবাবে মুসল্লী শামচু মৃধা বলেন, আজীবন থাকবে। তার এ কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মো. বদিউজ্জামান মিন্টু ইউএনও’র অফিস কক্ষের ভেতরেই ইউএনও এবং ওসির সামনে চাড়াও হয়ে মুসল্লী শামচু মৃধাকে চড়থাপ্পর মারে। এ সময় তার সাথে থাকা ৫/৬জন সহযোগী মুসল্লী শামচু মৃধাকে টেনে হেচড়ে কক্ষের বাইরে নেয়ার চেষ্টা চালায়। পরে ওসি এগিয়ে গিয়ে তাকে রক্ষা করে।
মারধরের শিকার মুসল্লী শামচু মৃধা বলেন, ‘বদিউজ্জামান মিন্টু আমাকে ৪/৫টি চড়থাপ্পর দিয়েছে। আর তার সহযোগীরা আমাকে টেনে হেচড়ে ইউএনওর কক্ষের বাইরে নেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। এ সময় তারা আমার গায়ের কাপড় (পাঞ্জাবী) ছিড়ে ফেলে। ওসি এগিয়ে এসে আমাকে রক্ষা না করলে ওরা আমাকে আরো মরধর করতো।
গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মো. বদিউজ্জামান মিন্টু বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পুর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ইমাম আজীবন থাকবে বলে মুসল্লী শামচু মৃধা ঔধত্ত্বপূর্ন আচরণ করেন। এ কারণে তার উপর সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় সেখানে একটি উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়’।
গৌরনদী থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, মুসল্লী শামচু মৃধার কথায় সেখানে উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি বলেন, ‘মুসল্লীর উক্তিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে এক পর্যায়ে জামার কলার ধরার মত ঘটনা ঘটেছে, মারধর করার কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে যেটা হয়েছে এটাও কাম্য নয়’।
এএসআর/এমআর