আমতলীর লক্ষাধীক মানুষ ১০ বছর ধরে বসবাস করছে দুষিত পরিবেশে

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীর লক্ষাধীক মানুষ ১০ বছর ধরে বসবাস করছে দুষিত পরিবেশে
সোমবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯


চাওড়া-সুবন্দি নদী
আমতলী প্রতিনিধি ॥
বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া, হলদিয়া, কুকুয়া, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার উপর দিয়ে প্রবাহিত ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০০ মিটার প্রস্থ চাওড়া-সুবন্দি বদ্ধ নদী কচুরীপানায় টুইটম্বুর। পানি পঁেচ দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দুষিত হওয়ায় চার ইউনিয়ন ও পৌরসভার লাখো মানুষ গত ১০ বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এ চাওড়া-সুবন্দি নদীর পানি নিষ্কাশন ও কচুরীপানা অপসারণে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া ৫০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের মুখ থুবরে পরেছে। প্রকল্পের কারিগরি প্রতিবেদন তিন বছর পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে জমা দিলেও এখনও পাশ হয়নি। দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পরিবেশ দুষণের হাত থেকে লক্ষাধীক মানুষকে রক্ষার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, ১৯৮২ সালে আমতলীর চাওড়া ও পায়রা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের হাত থেকে আমতলী শহরকে রক্ষায় সংযোগস্থল চৌরাস্তায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করে। কালের বিবর্তনে চাওড়া নদী মরা নদীতে পরিণত হয়। ত্রিভুজ আকৃতির ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০০ মিটার প্রস্থ এ নদীটি উপজেলার হলদিয়া, কুকুয়া, চাওড়া, আমতলী সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ২৫টি গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত। নদীর ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সুবন্দি অংশে রামনাবাঁধ নদী, ঘুঘুমারী অংশে টিয়াখালী ও আমতলীর অংশে পায়রা নদীর সাথে সংযোগ রয়েছে। প্রাকৃতিক জলোচ্ছাস ও লবনাক্ততার হাত থেকে মানুষ ও সম্পদ রক্ষায় ২০০৯ সালে বামনাবাঁধ নদীর একাংশ সুবন্দি নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করে। চাওড়া ও সবন্দি নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৫ সালে দু’ব্যান্ডের স্লুইজ নির্মাণ করেছে।

এদিকে ১৯৬৭ সালে জুলেখা খালে পাঁচ কপাট ও উত্তর টিয়াখালী খালে পাঁচ কপাট এবং ঘুঘুমারিতে এক কপাটের স্লুইজ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সুবন্দির তিনটি জলকপাট থেকে পানি নিস্কাসনের কারণে নদীর ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পানি’র স্বাভাবিক প্রবাহ রয়েছে। জুলেখা, উত্তর টিয়াখালী ও ঘুঘুমারি খালের জল কপাট বন্ধ করে একটি প্রভাবশালী মহল মাছ চাষ করে আসছে। এছাড়াও জুলেখার স্লুইজ খালের লক্ষী নামক স্থানে তিনটি বাঁধ, উত্তর টিয়াখালী স্লুইজের আউরা বৈরাগী নামক স্থানে বাঁধসহ খালের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে রেখেছে। অপরদিকে নদীর সংলগ্ন লক্ষী, নাচনাপাড়া, আমতলী খালসহ ১০টি খাল প্রভাবশালীরা অবৈধ ভাবে বাঁধ  দিয়ে মাছ চাষ এবং খাল দখল করে স্থায়ী বাড়ী ঘর নির্মাণ করছে। এতে নদীর পশ্চিম, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে ২০ কিলোমিটারের কচুরীপানা আটকে জনদুভোর্গ চরম আকার ধারণ করেছে। নদীর দু’পাড়ের মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। কচুরীপানার কারণে পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পরিবেশ দুষিত হয়ে মারাত্ত্বক আকার ধারণ করেছে। ওই খালের পানি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পরেছে। এমনকি গবাদি পশুও ওই পানি ব্যবহার করছে না। এ খালের দু’পাড়ের প্রায় লক্ষাধীক মানুষের জনদুর্ভোগে পরিনত হয়েছে। ফলে খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরণ ও অবৈধ দখল খাল মুক্ত করার দাবীতে কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে। লাখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে চাওড়া নদীর পানি নিষ্কাশন ও কচুরীপানা অপসারণে ২০১৬ সালে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদনের জন্য কারিগরি প্রতিবেদন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয় জমা দেয়।

এ প্রকল্পের মধ্যে লোচা খালে ৫ ব্যান্ডের স্লুইজ, সোনাগজা ৩ ব্যান্ডের স্লুইজ, সেনের হাট ২ ব্যান্ডের  স্লুইজ ও পূর্বচিলা ২ ব্যান্ডের স্লুইজ নির্মাণ, ছুরিকাটা মহাসড়, হলদিয়া বাজার সংলগ্ন , বলইবুনিয়া খালের গোড়ায় , লক্ষিরখালের গোড়ায় , চন্দ্রাপাতাকাটা ও কাউনিয়া বাঁধসহ ১০ টি স্থানে কালভার্ট নির্মাণ, পশ্চিম ঘটখালী ও কৃষ্ণনগর ২ টি আইটলেট নির্মাণ,৪০ কিলোমিটার খাল খনন এবং কচুরীপানা উত্তোলনের। কারিগরি প্রতিবেদন জমা দেয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি দাবী সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এতে লক্ষাধীক মানুষের দূর্ভোগ আরো চরম আকার ধারণ করেছে। দ্রুত এ প্রকল্প অনুমোদনের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

দক্ষিণ রাওঘা গ্রামের মোঃ বশির উদ্দিন বাদল মৃধা বলেন, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে জরুরী ভিত্তিতে কচুরীপানা অপসারণ করা দরকার।  তিনি আরও বলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা খালে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ বন্ধ খালগুলোর বাঁধ কেটে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবী জানাই।

চাওড়া কাউনিয়া গ্রামের জিয়া উদ্দিন জুয়েল, আবদুল আউয়াল বলেন, খালের কচুরীপানা জমে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এ পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দুর্গন্ধে পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। অতিদ্রুত কচুরীপানা অপসারনের দাবী জানাই।

আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, চাওড়া সুবন্দি খালের কচুরীপানার জলাবন্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। গত ১০ বছর ধরে মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মানুষের দুর্ভোগ লাগবে এখনই পদক্ষেপ না নিলে মহামারি আকার ধারণ করবে। লক্ষাধীক মানুষকে পরিবেশ দুষণের হাস থেকে রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানাই।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল হান্নান প্রধান বলেন, সুবন্দি খালের সমস্যা লাঘবে একটি প্রকল্পের কারিগরি প্রতিবেদন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে গত তিন বছর পূর্বে জমা দেয়া হয়। ওই কারিগরি প্রতিবেদন এখনও পাশ হয়নি। কারিগরি প্রতিবেদন পাশ হয়ে আসলে  ডিপিপি (ডকুমেন্ট অফ প্রজেক্ট প্রফর্মা) জমা দেয়া হবে।

এমএইচএকে/কেএস

বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৪:০০ ● ১০১৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ