আমতলী পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের পিআরডিপি-৩ প্রকল্পে হরিলুট!

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলী পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের পিআরডিপি-৩ প্রকল্পে হরিলুট!
মঙ্গলবার ● ৩১ অক্টোবর ২০২৩


আমতলী পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের পিআরডিপি-৩ প্রকল্পে হরিলুট!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অংশীদারিত্বমুলক পল্লী উন্নয়ন পিআরডিপি-৩ প্রকল্পে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরাদ্দের ৮০হাজার টাকার মধ্যে ৩০হাজার টাকা উপজেলা সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ও প্রকল্প সমন্বয়কারী সুজন কান্তি সিকদার ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সুফলভোগীরা। এছাড়াও ২০ টি প্রকল্পের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের হদিস নেই। টাকা উত্তোলন করে ভাগ বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেছেন ওই প্রকল্প কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা। দ্রুত এ অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তপুর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন সুফলভোগীরা।
জানাগেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড অংশীদারিত্বমুলক পল্লী উন্নয়ন পিআরডিপি-৩ প্রকল্পের অধীনে আমতলী উপজেলার আমতলী সদর, চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নে ২০টি প্রকল্প দেয়। প্রকল্পের মধ্যে ছিল ১৬ টি সলিং রাস্তা নির্মাণ, ৩ টি গভীর নলকুপ স্থাপন ও একটি ঘাটলা নির্মাণ। প্রত্যেক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ এক লক্ষ টাকা। এর মধ্যে পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ৮০হাজার, সুফলভোগী (ভিডিসির) ১৫হাজার এবং ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ ৫হাজার টাকা ব্যয় করবে। ওই প্রকল্প বরাদ্দ অংশের ৮০হাজার টাকা থেকে প্রকল্প কর্মকর্তা সুজন কান্তি সিকদার অফিস খরচ বাবদ ৩০হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। প্রকল্প সুফলভোগীর হাতে দিয়েছেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা। ওই টাকার সঙ্গে সুফলভোগী ১৫ টাকা মিলিয়ে কাজ শেষ করছেন। ওই ২০টি প্রকল্পের মধ্যে বেশ কিছু প্রকল্পের হদিস নেই। কাগজে কলমে কাজ দেখিয়ে বরাদ্দের সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অপর দিকে সুফলভোগী মাওলানা আবুল বাশার অভিযোগ করেছেন উপজেলা সহকারী পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা ও প্রকল্প সমন্বয়কারী সুজন কান্তি সিকদার গভীর নলকুপ বরাদ্দে তার কাছ থেকে ২১হাজার ঘুষ নিয়েছেন। ওই টাকা পেয়েই তার বাড়ীতে গভীর নলকুল বসানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, আমতলী সদর ইউনিয়নের পুঁজাখোলা গ্রামের মুন্সিবাড়ী নুরানী মাদ্রাসা সংলগ্ন গভীর নলকুপ বসানো হয়নি। পুরাতন নলকুপ দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা পকেটস্থ করেছেন। এ বিষয়ে মোজাম্মেল মুন্সি বলেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসে আমার বাড়ীতে নলকুপ বসানো হয়েছে। এ অর্থ বছরের নলকুপ সম্পর্কে আমার জানা নেই। একই এলাকায় আবুল বাশারের বাড়ীর নলকুপের প্রকল্প দেয়ার কথা বলে প্রকল্প কর্মকর্তা সুজন কান্তি সিকদার পুজাখোলা গ্রামের মোজাম্মেল মুন্সির মাধ্যমে ২১হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সুফলভোগী আবুল বাশার। ওই নলকুপের কাজ এখনো সমাপ্ত হয়নি। তবে প্রকল্প কর্মকর্তা ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। একই গ্রামের তালুকদার বাড়ী এবং রাজ্জাক হাওলাদার বাড়ী সলিং রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। ওই কাজ বাবদ পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের ৮০হাজার টাকা না দিয়ে ৩০হাজার টাকা দিয়েছেন। অবশিষ্ট টাকা অফিসের খরচ বলে ঘুষ নিয়েছেন। এমন চিত্র চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের প্রকল্প গুলোতে। ২০ প্রকল্পের ২০ লক্ষ টাকার কাজে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সুজন কান্তি সিকদার অফিস খরচ দেখিয়ে ৬লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ সুভলভোগীদের। এতে সরকারীভাবে দেয়া বরাদ্দের সুফল ভোগ করতে পারেনি সুফলভোগীরা। এখানেই শেষ নয়, বেশ কয়েকটি প্রকল্প আলোর মুখই দেখেনি। কাগজে কলমে কাজ দেখিয়ে প্রকল্প সভাপতি, পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প কর্মকর্তা সুজন টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও পুঁজাখোলা গ্রামে মন্টু হাওলাদারের বিরুদ্ধে চারটি প্রকল্পের ভিডিসির সভাপতি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
আমতলী উপজেলা পুঁজাখোলা গ্রামের মাওলানা আবুল বাশার বলেন, নলকুপ স্থাপনের জন্য প্রকল্প কর্মকর্তার কথা বলে মোজাম্মেল হোসেন ২১হাজার টাকা নিয়েছেন। ওই টাকা দেয়ার পর তারা নলকুপ বসিয়েছেন।
চলাভাঙ্গা গ্রামের শাহজাহান কবির বলেন, রাস্তার কাজ করতে অফিস থেকে ৫০হাজার টাকা দিয়েছেন। ওই টাকার সাথে ১৫ হাজার টাকা মিলিয়ে কাজ করেছি।
চার প্রকল্পের সভাপতি মন্টু হাওলাদার বলেন, অফিস কর্তৃপক্ষ সুফলভোগীদের কত টাকা দিয়েছেন তা আমি জানিনা। আমাকে নামে মাত্র প্রকল্প সভাপতি করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা সুজন কান্তি সিকদার টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, সকল প্রকল্পের কাজই সঠিকমত করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কর্মকতা আলমগীর হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের টাকা সুফলভোগীদের না দিয়ে আত্মসাৎ করা বে-আইনি। বিষয়টি খোজ খবর নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:১১:৪০ ● ৮৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ