পায়রা বন্দরে ক্ষতিগ্রস্ত ১২৯পরিবারের পুণর্বাসন দাবি

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » পায়রা বন্দরে ক্ষতিগ্রস্ত ১২৯পরিবারের পুণর্বাসন দাবি
সোমবার ● ৯ অক্টোবর ২০২৩


পায়রা বন্দরে ক্ষতিগ্রস্ত ১২৯ পরিবারের পুণর্বাসন দাবি

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥

আলতাফ গাজীর বসতবাড়ি ছিল কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের হাচনাপাড়া গ্রামে। চান্দুপাড়া মৌজার এসএ ৭৯ নং খতিয়ানের ২৩৭,২৩৮,২৩৯ ও ২৪০ নম্বর দাগে ছিল চৌচালা পাটাতনের একটি টিনসেড ঘরে বসবাস করতেন। এই পরিবার বাপ-দাদার আমল থেকে এখানে বসবাস করে আসছিলেন। পায়রা বন্দর নির্মাণে অধিগ্রহনের আওতায় পড়েন আলতাফ গাজীর বাড়িঘরসহ ওই এলাকার অসংখ্য মানুষের বাড়িঘর। সকলের মতো আলতাফ গাজীকে বাড়িঘরসহ ১০টি রেইনট্রি, পাঁচটি তালগাছসহ ১৯ প্রজাতির ১৬৪ টি গাছপালাসহ বসতঘরের ক্ষতিপুরন পেয়েছেন ১০ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৩ টাকা। যার অ্যাওয়ার্ড নম্বর ১৩৭৮, চেক নম্বর-০৯১৯১৭। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত এই চেকের টাকা বহু আগেই আলতাফ গাজী উত্তোলন করেছেন। যার এলএ কেস নম্বর-০৭/১৬-১৭, মিস কেস নম্বর-৪৮৬/১৯-২০। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ভূমি অধিগ্রহন শাখার যৌথ তদন্ত তালিকার (ফিল্ড বুকের) ৬৯৬ নং তালিকাভূক্ত ছিলেন আলতাফ গাজী। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আলতাফ গাজীকে আজ পর্যন্ত পুনর্বাসনের আওতায় নেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি কোন পুনর্বাসন প্রকল্পের ঘর। বর্তমানে ৭৫ বছর বয়সী এই মানুষটি স্ত্রী সেলিনা বেগমকে নিয়ে চার ছেলে, ছেলেবউসহ নাতি-নাতনি মিলে ২২ জনের সংসারে দুরাবস্থার যেন শেষ নেই।
আলতাফ গাজীর মেজ ছেলে বেল্লাল গাজী জানান, বাবার এক চিলতে জমিতে দুটি ঘর করে অনেক কষ্টে থাকছেন। অধিগ্রহণ করা এক বাড়িতে তাঁদের অন্যান্য চাচাদের সাত জনে পুনর্বাসনের ঘর পেয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাদেরটা জোটেনি। এই পরিবারের সদস্যরা বহুবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘুরেছেন। ঘুরেছেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। লিখিত আবেদন করেছেন। কিন্তু কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। একই দশায় শামীম মিয়া, সাইফুল ইসলামের। লালুয়ার মোট ১২৯ টি পরিবার এমন দুরাবস্থায় রয়েছেন। যারা ঘরবাড়ি হারিয়ে পুনর্বাসন জোটাতে পারেননি। এদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন এলোমেলো হয়ে গেছে। গেছে পেশা বদল হয়ে। সর্বশেষ গত শনিবার সকালে এসব পরিবারের সদস্যরা কলাপাড়া শহরে মানববন্ধন করেছেন। এর আগে কয়েকদফা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বর্তমানে এসব পরিবার বাড়িঘর, বসতভিটা হারিয়ে কেউ ভাড়া বাড়ি, আবার যাদের সঙ্গতি নেই তারা স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান করছেন। বছরের পর বছর ধরে হন্য হয়ে এসব কৃষিজীবি পরিবারের সদস্যরা দৌড়াচ্ছেন বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে। করছেন মানবেতর জীবন-যাপন।
লালুয়ার চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ^াস জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে এসব পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হোক। কারণ প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তার জন্য এসব মানুষ ঘরবাড়ি জমিজমা ছেড়ে দিয়েছেন। মানুষগুলো এখন ঘুরছে দ্বারে দ্বারে। তাই এসব মানুষকে দ্রুত পুনর্বাসনের আওতায় আনার দাবি তার।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বঞ্চিত এসব পরিবারের অর্ধশতাধিক পরিবারের আবেদন পেয়েছেন। বিষয়টি যথাযথ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম বলেন, যাদের ঘরবাড়ি পায়রা বন্দর নির্মাণে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যৌথভাবে তাদের একটি স্বচ্ছ তালিকা করে যাচাই-বাছাই শেষে ক্ষতিপুরনের টাকা প্রদান করা হয়েছে। এখন পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজটি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের। এটি বাস্তবায়ন করবেন তারা। এব্যাপারে পায়রা পোর্টের একাধিক প্রকল্প পরিচালককে মোবাইল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

 

 

 

এমএইএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:০৯:৩৪ ● ৫৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ