আমতলীতে স্কুলছাত্রীর অভিভাবক মাদ্রাসা কমিটির সদস্য!

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে স্কুলছাত্রীর অভিভাবক মাদ্রাসা কমিটির সদস্য!
সোমবার ● ৯ অক্টোবর ২০২৩


আমতলীতে স্কুলছাত্রীর অভিভাবক মাদ্রাসা কমিটির সদস্য!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বিদ্যালয় ছাত্রীর অভিভাবককে মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্য দেখিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জমিদাতা মোঃ ইসহাক মুসুল্লী মাদ্রাসার সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী মৌলুভী হারুন-উর রশিদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি আদালতের আদেশ অমান্য করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবৈধ কমিটি বাতিল করে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবী তার। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ মাদ্রাসার শিক্ষক ও অভিভাবকরা। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী দাখিল মাদ্রাসায়।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী দাখিল মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ গত বছর মার্চ মাসে শেষ হয়। ওই মাদ্রাসার সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী মৌলুভী মোঃ হারুন-উর-রশিদ গোপনে গুলিশাখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী অভিভাবক ফারুক হাওলাদার ও ঝরনা বেগমকে মাদ্রাসার ভুয়া অভিভাবক সদস্য দেখিয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। এতে কল্পনা বেগমকে সভাপতি  ও মজিবুর রহমানকে দাতা সদস্য করা হয়। অভিযোগ রয়েছে জমিদাতা মোঃ ইসহাক মুসুল্লী জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাকে দাতা সদস্য করা হয়নি। গত বছর ১৯ এপ্রিল ওই কমিটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড অনুমোদন দেয়।  গত দের বছর  ধরে গোপনে ওই কমিটি মাদ্রাসার কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। এ বছর জুলাই মাসে ওই কমিটির গোপন রহস্য বেড়িয়ে আসে। এরপর নড়েচড়ে বসে মাদ্রাসার অভিভাবক ও জমিদাতা মোঃ ইসহাক মুসুল্লী। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এ কমিটির দুই অভিভাবক সদস্য ফারুক হাওলাদারের কন্যা লিজা ও ঝরনা বেগমের কন্যা মীম আক্তার মাদ্রাসার পার্শ্ববতী গুলিশাখালী ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত। এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাদাত হোসেন প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন। এ অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে গত ৩ আগষ্ট জমিদাতা ইসহাক মুসুল্লী হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করেন। আদালতের বিচারক জাফর আহম্মেদ ও মোঃ বশির উল্লাহ’র দ্বৈত বেঞ্চ এ কমিটি কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবে না মর্মে মাদ্রাসা বোর্ড চেয়ারম্যানকে চার সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে কমিটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রীটের খবর শুনে মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কল্পনা বেগম ও সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী মৌলুভী হারুন-উর রশিদ সুপার, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। ভারপ্রাপ্ত সুপারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) আবু নাঈমকে প্রতিনিধি মনোনয়ন দিয়েছেন। জমিদাতা ইসহাক মুসুল্লীর অভিযোগ সভাপতি ও সুপার (ভারপ্রাপ্ত) আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে অবৈধভাবে কমিটি গঠন , অভিভাবক সদস্য মনোনয়ন ও নিয়োগ বোর্ড গঠন সম্পর্কে মাদ্রাসার  সহ-সুপার মাওলানা আব্দুল মান্নানসহ অধিকাংশ শিক্ষকরা কিছুই জানেন না। শিক্ষকদের অভিযোগ চারজন সিনিয়র শিক্ষক ডিঙ্গিয়ে অবৈধভাবে সহকারী মৌলুভী হারুন-উর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দিয়ে সভাপতি কল্পনা বেগম মাদ্রাসার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্রুত এ অবৈধ কমিটি বাতিল করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবী জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক বলেন, কমিটি গঠনের বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। সহ-সুপারসহ চারজন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে একজন সহকারী মৌলুভী কিভাবে সুপারের দায়িত্ব পায় সেটাও আমাদের  বোধগম্য নয়। তারা আরো বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও ভুয়া অভিভাবক সাজিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। এমন কাজের সাথে যারা জড়িত তাদের আল্লাহ হেদায়েত করবেন।
মাদ্রাসার জমিদাতা ইসহাক মুসুল্লী বলেন, জমিদাতা হওয়া সত্ত্বেও আমাকে দাতা সদস্য না করে অবৈধভাবে মজিবুর রহমান নামের একজনকে দাতা সদস্য করা হয়েছে। আমি এ কমিটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রীট করেছি। কিন্তু কমিটির সভাপতি কল্পনা বেগম ও সুপার (ভারপ্রাপ্ত) হারুন-উর রশিদ হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন অবৈধ কমিটি বাতিলের দাবী জানান তিনি।
মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা আব্দুল মান্নান বলেন, কমিটি গঠন , অভিভাবক সদস্য মনোনয়ন ও নিয়োগ বোর্ড গঠন সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। আমি এর সাথে জড়িত নয়। কিভাবে কমিটি গঠন হলো তা একমাত্র সুপার ( ভারপ্রাপ্ত) সহকারী মৌলুভী হারুন-উর-রশিদ বলতে পারবেন।
মাদ্রাসা সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী মৌলুভী হারুন-উর রশিদের মুঠোফোনে (০১৭১৮৬২৩৪৬৩) বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
গুলিশাখালী দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মোসাঃ কল্পনা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকেও পাওয়া যায়নি।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক মিলন মাদ্রাসার কমিটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রীটের আদেশের নথি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের অভিভাবক মাদ্রাসায় অভিভাবক কিভাবে হয়েছে তা আমার জানা নেই?
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ওই মাদ্রাসার বিষয়টি উপজেলা  মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেখেন তিনিই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

 

 

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৯:০৮ ● ২০৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ