বাবুগঞ্জের সোনার বাংলা হাইস্কলে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম!

প্রথম পাতা » বরিশাল » বাবুগঞ্জের সোনার বাংলা হাইস্কলে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম!
মঙ্গলবার ● ২৭ জুন ২০২৩


বাবুগঞ্জের সোনার বাংলা হাইস্কলে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম!

বাবুগঞ্জ (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর সোনার বাংলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাধিক পদে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

বারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সভাপতি ও অধ্যক্ষ তাদের মনোভুত প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে ব্যার্থ হয়ে নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিত করেছেন তারা।

গত শনিবার(২৪ জুন) বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী, নৈশ্য প্রহরী, আয়া ও নিরাপত্তারক্ষী ও কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে আবেদনকারীদের পরীক্ষা গ্রহন করা হয়। পরীক্ষা শেষে নিয়োগবোর্ড সুপারিশ করলেও পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে তালবাহানা করছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান মঞ্জুর রহমান টুটুল বিশ্বাস বলে অভিযোগ করেছেন অংশগ্রহণকারী একাধিক পরীক্ষার্থী।
বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে গর্ভনিংবডির প্রভাবশালী এক সদস্য (নাম প্রকাশ করার না শর্তে) বলেন, শনিবারে জনবল নিয়োগের অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় সভাপতি ও অধ্যক্ষের মনোপুত চাকরি প্রত্যাশীরা নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ প্রাপ্ত না হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করার পায়তারা করছেন তারা। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের জন্য সোমবার(২৬ জুন) গর্ভনিংবডির সভা ডেকে কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় তা স্থগিত করা হয়েছে।
আয়া পদের পরীক্ষার্থী ফারজানা ইসলাম বলেন, আমি আয়া পদের একজন আগ্রহী প্রার্থী হিসাবে আবেদন করি এবং শনিবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার ফলাফল ওই দিন জানিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল না জানিয়ে তালবাহানা করছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান মঞ্জুর রহমান টুটুল বিশ্বাস। অথচ পরীক্ষার দিন নিয়োগ বোর্ড প্রধান বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা হোসেন ম্যাডাম আমাকে বলেছে আমি প্রথম হয়েছি। অথচ আমাকে নিয়োগ না দেওয়ার পায়তারা চলছে। এখন সোনার বাংলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর সভাপতি আতাউর রহমান বিশ্বাস  ও অধ্যক্ষ মঞ্জুর রহমান টুটুল বিশ্বাস ফলাফল প্রকাশ না করে বলেন গর্ভনিং বডির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
একই অভিযোগ করেন আয়া পদের আর এক পরীক্ষার্থী মিতু আক্তার জরিনা বলেন,  দীর্ঘদিন যাবৎ বারবার চতূর্থ শ্রেণির কর্মচারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ও পরীক্ষা শেষে আর ফলাফল প্রকাশ করেনা। তাদের নিজেদের প্রার্থীরা নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ না পেলেই গর্ভনিং বডির রেজুলেশনে নিয়োগ স্থগিত করে দেয়।
প্রতিষ্ঠানের জমিদাতা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, সোনার বাংলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন আমি সভাপতি ছিলাম। বর্তমানে নিয়োগ নিয়ে বেশ কিছু লোকের সাথে লেনদেনের খবর পেয়েছি। এর আগে টাকা নিয়ে  নিয়োগ না দিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার  ঘটনা ঘটেছে। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তির ৬ লাখ টাকার কোন হদিস নাই।
এর আগে ২০১৫ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ বোর্ডের অধিনে পরীক্ষা গ্রহন করে ফলাফল প্রকাশ না করেই রেজুলেশনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে।  এমন অভিযোগ এনে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি বরিশালের বাবুগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন কেদারপুরের দক্ষিণ ভূতেরদিয়ার  ইয়াকুব আলীর ছেলে ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২১ মে মাসে কেদারপুর সোনার বাংলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (এমএলএসএস) পদে আবেদন করেন বাদী দেলোয়ার হোসেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫-র ২২ অক্টোবর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য কেদারপুর সোনার বাংলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর রহমান একটি প্রবেশপত্র প্রদান করেন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বাদীসহ ৪ জন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। পরীক্ষায় বাদী দেলোয়ার হোসেন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে নিয়োগ প্রদানের আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করেন সেই থেকে অদ্যাবধি ওই পদে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। পুনরায় ওই পদসহ একাধিক পদে জনবল নিয়োগের ২৭ জুলাই ২০২২-এ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। দেলোয়ারের হোসেন বিষয়টি জানতে পেরে বরিশাল বিজ্ঞ বাবুগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিদ্যালয় পরিদর্শক, বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করে একটি মামলা করেন।
এ বিষয়ে বাদী দেলোয়ার হোসেন বলেন, এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন পরবর্তী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। কিন্তু নিয়োগ সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে স্বপদে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হই। এ কারণে আমি আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের স্মরণাপন্ন হবো।
বারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে লোকবল নিয়োগ না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাকরি প্রত্যাশীরা।
প্রতিষ্ঠান প্রধান মঞ্জুর রহমান বলেন, রবিবার ৪র্থ শ্রেনির লোকবল নিয়োগের জন্য বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগবোর্ডের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহন করা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত গর্ভনিংবডির সভায় নেওয়া হবে।
তবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করার ব্যাপারটি এড়িয়ে যান।
প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আতাউর রহমান বিশ্বাস বলেন, একজন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের মতামতের কোন দাম নেই? নিয়োগ বোর্ডে তাদের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া হয় নি বলে তিনি জানান পরবর্তী সিদ্ধান্ত সভা ডেকে নেওয়া হবে। নিয়োগে ফেয়ার হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন চেষ্টা করব।


এএ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৮:৩৬ ● ৮২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ