চরফ্যাসনে সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » চরফ্যাসনে সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ
মঙ্গলবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৩


চরফ্যাসনে সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে আইন  ভঙ্গের অভিযোগ

চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

সরকারি সুযোগ সুবিধাসহ রাজনীতি ও আইন ভঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে সাবেক যুব ও ক্রীড়া  মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তিনি চলতি বছরের ১ জানুয়ারী তারিখে অবসরে যান। জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইন বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে, একজন সরকারি কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার তিনবছরের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সরাসরি রাজনীতি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তথ্য সূত্রে জানাযায়, সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন ঈদে চরফ্যাশন এসে রবি ও সোমবার দুলারহাট, শশীভূষণ, দক্ষিণআইচা, চেয়ারম্যান বাজারে সরকারি গাড়ী ব্যবহার করে সরাসরি নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ একজন সরকারি চাকুরীজীবী সদ্য অবসর গ্রহণ করে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে মাঠে ময়দানে প্রচার প্রচারনা করার বিধান নেই। তিনি সরকারি আমলা হয়ে আইনকে ভঙ্গ করছেন।
অন্যদিকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতি করা যাবে কিনা, এ বিষয়ে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-তে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। এসববিষয় নতুন করে সামনে এসেছে যুব ও ক্রীড়া  সচিবের দায়িত্ব থেকে মাত্রই অবসরে যাওয়া মেজবাহ উদ্দিন  দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ঘটনা।
যুব ও ক্রীড়া  সচিবের পদ থেকে ১ জানুয়ারি অবসরে যাওয়া মেজবাহ উদ্দিনকে আওয়ামীলীগে আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনো কোনো পদ বা দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন তিনি। সোমবার বিভিন্ন হাটবাজারে নিজেকে আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য পদ প্রার্থী দাবি করে    গণসংযোগে অংশ নিয়েছেন। যে ব্যক্তি সরকারি বেতন-ভাতা ও সুবিধা ভোগ করছেন, তিনি কীভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেন? এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।
কতটা নৈতিক, উঠেছে সে প্রশ্নও।
তবে সব ধরনের সরকারি সুবিধা নিয়ে অবসরে যাওয়া মাত্রই ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া কতটা নৈতিক সে প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী, মেজবাহ উদ্দিন অবসরে যাওয়ার পর এক বছর অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) ভোগ করবেন। পিআরএলে থাকা অবস্থায় সরকারি চাকরিজীবীরা তাঁদের ছুটি চলাকালীন ১২ মাস মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতাসহ অন্যান্য প্রাপ্য পেয়ে থাকেন। ছুটি শেষে পেনশন-গ্র্যাচুইটি পান। সরকারি সুবিধা নেওয়া অবস্থায় একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কতটা নৈতিক, মূলত সেই প্রশ্নই সামনে এসেছে।
২০১৫ সালের আগে সরকারি কর্মকর্তারা অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে বা এলপিআরে (লিভ প্রিপারেশন ফর রিটায়ারমেন্ট) যেতেন। ২০১৫ সালে এর নাম হয় অবসরবর্তী ছুটি বা পিআরএল (পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভ)। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ অনুসারে, ‘চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর চুক্তি ভিত্তিক কর্মরত থাকা ব্যতীত, কোনো ব্যক্তির, বৈদেশিক বা বেসরকারি চাকরি বা কোনো প্রকল্পে চাকরি গ্রহণ, অন্য কোনো পেশা গ্রহণ, ব্যবসা পরিচালনা এবং বিদেশ যাত্রার জন্য সরকার বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন হবেনা। তবে শর্ত থাকে যে সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে, অনুরূপ ভিন্ন চাকরি বা পেশা গ্রহণ, ব্যবসা পরিচালনা বা বিদেশ যাত্রা বারিত করে অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে পারবে।’
নিরুৎসাহিত করেছে আইন:
মেজবাহ উদ্দিন গতবছরের ১২ জানুয়ারি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে যোগদেন। এরপর গত ১ জানুয়ারি  তার ৫৯ বছর বয়সপূর্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে তাকে অবসর প্রদান করা হয়।
অবসরে গিয়েই রাজনীতিতে মেজবাহ উদ্দিনের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবীগণ বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা অবসরের তিন বছরের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না জাতীয় সংসদ এই আইন পাস করেছে। এর অর্থ হচ্ছে, আমলাদেও রাজনীতিতে না আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের মতোই রাজনীতিতেও অংশ নেওয়ার ব্যাপারে প্রকারাস্তরে নিষেধই করা হয়েছে।

পিআরএলে যাওয়ার পরই রাজনীতিতে যুক্ত হওয়াকে বেআইনিও মনে করেন ওই আইনজীবী। তাঁর মতে, যে ব্যক্তি সরকারি বেতন-ভাতা ও সুবিধা ভোগ করছেন, তিনি কীভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেন? এটা আইন সমর্থন করেনা। তিনি বলেন, আইনের সবকিছু সাদা-কালো এভাবে লেখা সম্ভব নয়। তাহলে আইন করতে হাজার হাজার পৃষ্টা লাগবে। আইনের ধ্যানধারণায় পিআরএলে থাকা একজন আমলার রাজনীতি করাকে সমর্থন করে না।

এএইচ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৫:৪০ ● ৮০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ