দক্ষিণাঞ্চলে ডাক বিভাগের ক্যাশ কার্ড কার্যক্রম বন্ধের পথে

প্রথম পাতা » বরিশাল বিভাগ » দক্ষিণাঞ্চলে ডাক বিভাগের ক্যাশ কার্ড কার্যক্রম বন্ধের পথে
বৃহস্পতিবার ● ৭ মার্চ ২০১৯


---

সাগরকন্যা অফিস॥
সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে মুখ থুবরে পরেছে ডাক বিভাগের ক্যাশ কার্ডের কার্যক্রম। চালুর পরে বিগত আট বছরে এ সেবার মানোন্নয়ন না হওয়ায় কমতে শুরু করেছে ক্যাশ কার্ডের গ্রাহক। চালুর পরে এক হাজার ৩২৫ জন ক্যাশ কার্ড সুবিধা গ্রহন করলেও বর্তমানে তার সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে ৯৬২ জনে। প্রচার প্রচারনার অভাব ও কার্ডের গোপন নম্বরে ত্রুটির কারণে ডাক বিভাগের ক্যাশ কার্ড কার্যক্রম প্রায় বন্ধের পথে। বরিশাল প্রধান ডাকঘর সূত্রে জানা গেছে, ডাক বিভাগের গ্রাহকদের সার্বক্ষনিক অর্থনৈতিক লেনদেনের সুবিধার্থে ২০১১ সালে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও চালু করা হয় পোষ্ট ক্যাশ কার্ড। সরকারী-বেসরকারী সকল ব্যাংকের তুলনায় দ্বিগুন সুবিধা নিয়ে চালু হওয়া ক্যাশ কার্ড প্রথমদিকে এ অঞ্চলে বেশ সারা ফেলে। যার অংশ হিসেবে শুরুর প্রথম দিকেই ক্যাশ কার্ডধারী গ্রাহকের সংখ্যা হাজারে পৌঁছে যায়। এর সুফলও ভোগ করতে শুরু করে গ্রাহকরা। প্রধান ডাকঘরে ক্যাশ কার্ডের দায়িত্বে থাকা অপারেটর আসলাম হাওলাদার বলেন, যেকোন সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকের তুলনায় ক্যাশ কার্ড খুবই লাভজনক ও সুবিধা সম্বলিত। কেননা একজন গ্রাহক কোন ঝামেলা ছাড়াই মাত্র ৪৫ টাকা ব্যায়ে ক্যাশ কার্ড পেয়ে থাকেন। তাছাড়া প্রতিটি কার্ডে এক একজন গ্রাহক প্রতিদিন সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জমা ও সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা উত্তোলন করতে পারছেন। পাঁচশ’ থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত একসাথে লেনদেনে খরচ লাগছে মাত্র পাঁচ টাকা। একটি কার্ডে সর্বোচ্চ পাঁচশ টাকা থাকলে তা থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারবে গ্রাহকরা। আসলাম হাওলাদার আরও বলেন, পোষ্ট ক্যাশ কার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এ কার্ড দিয়ে সোনালী ব্যাংক, আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ফারইস্ট ইসলামি ব্যাংক, ইউসিভি ব্যাংকসহ ১৭টি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবে গ্রাহকরা। তাও রাত-দিন যেকোন সময়। এ ক্ষেত্রে যেকোন লেনদেনের উপর চার্জ ওই পাঁচ টাকাই নির্ধারিত। তিনি বলেন, গত প্রায় আট বছরে বরিশালে মোট এক হাজার ৩২৫টি ক্যাশ কার্ড বিতরন হয়েছে। এগুলো সব প্রথমদিকেই হয়েছে। চালুর দুই বছরের মধ্যে কার্ডের চাহিদা কমে গেছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ১০ জুন একসাথে ১০টি কার্ড বিতরণ হয়েছে। সবগুলোই বরিশাল সরকারী ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়েছেন। সেই থেকে ২০১৯ সালের চলতি মাস পর্যন্ত নতুন করে একটি কার্ডও বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে ঢাকা থেকে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি আসা ১০০টি কার্ডের মধ্যে ৮৬টি কার্ডই প্রধান ডাকঘরে জমা রয়েছে। এদিকে এত সুবিধা থাকা সত্বেও এ সেবা সম্পর্কে প্রচার প্রচারনার অভাবের পাশাপাশি ক্যাশ কার্ডের গোপন নম্বরে ত্রুটির বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন গ্রাহকরা। ফলে ক্যাশ কার্ডের দিকে মানুষের আগ্রহ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ক্যাশ কার্ডের গোপন নম্বরে ত্রুটির কারণে ক্যাশ কার্ডে জমানো টাকা উত্তোলন করতে পারছে না অধিকাংশ গ্রাহক। আল-আমিন নামের একজন ক্যাশ কার্ড গ্রাহক বলেন, ২০১৬ সালের শেষের দিকে একটি ক্যাশ কার্ড ক্রয় করেছি। ওই কার্ড দিয়ে দুইবার লেনদেনও করেছি। বর্তমানে কার্ডে থাকা গোপন নম্বরটি অস্পষ্ট হয়ে গেছে। কার্ডটির মানও খারাপ হয়ে গেছে। যে কারণে ওই কার্ড দিয়ে এখন আর লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে কার্ডটিতে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মতো আটকে আছে। পোষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো সত্বেও তারা কোন সমাধান দিতে পারছেন না। নিন্মমানের ক্যাশ কার্ড নিয়ে একই অভিযোগ করেছেন অপর গ্রাহক শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশিক আল-হাসান। তিনি বলেন, পোষ্ট অফিসের লেনদেন খুব সহজ ও ঝুকিমুক্ত ছিলো। তাই পোষ্ট মাষ্টারের কথায় একটি কার্ডও উত্তোলন করেছিলাম। কার্ডটি দিয়ে তিন-চার বার লেনদেন করতে পেরেছি কিন্তু এখন কার্ডের গোপন নম্বর মুছে গেছে। যে কারণে আর লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছেনা। পোষ্ট অফিসের ক্যাশ কার্ডের অধিকাংশ গ্রাহকরা এমনই অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে বরিশাল প্রধান ডাকঘরের পোষ্ট মাস্টার মোঃ গোলাম রহমান পাটোয়ারী বলেন, ক্যাশ কার্ড একটি লাভজনক ও নিরাপদ ব্যাংকিং সেবা। এটির গ্রাহক বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা ইতঃপূর্বে অনেক সভা সেমিনারের মাধ্যমে প্রচার প্রচারনা করেছি। যে কারণে প্রথমদিকে এর চাহিদাও বেশ ভালো ছিলো কিন্তু বর্তমানে ক্যাশ কার্ডের চাহিদা কমে গেছে। তিনি আরও বলেন, মুলত ক্যাশ কার্ডের যে গোপন নম্বরটি রয়েছে সেটার কারনেই গ্রাহক কমে যাচ্ছে। ক্যাশ কার্ডে থাকা পিন নম্বরটি কিছুদিন না যেতেই মুছে যাচ্ছে বা ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারছেন না। এ কারনেই কার্ডধারীর সংখ্যা কমে গেছে। এ ধরনের সমস্যায় যারা পরেছে তারা আমাদের কাছে আসার পর ত্রুটি যুক্ত ৩৭৭টি কার্ড পরিবর্তন করে দেয়ার জন্য হেড অফিসে পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাদের মাত্র ১০০টি কার্ড পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো দীর্ঘদিনেও পাওয়া যায়নি। তাই গ্রাহকদেরও দেয়া যাচ্ছেনা। এ কারনেই পোষ্ট ক্যাশ কার্ডের প্রতি গ্রাহকের অনাগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:০০:১৩ ● ৯৮৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ