চরফ্যাশনে হতদরিদ্র শিশুরা ঝূঁকছে জেলে পেশায়!

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » চরফ্যাশনে হতদরিদ্র শিশুরা ঝূঁকছে জেলে পেশায়!
শুক্রবার ● ১৭ জুন ২০২২


চরফ্যাশনে হতদরিদ্র শিশুরা ঝূঁকছে জেলে পেশায়!

চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

চরফ্যাশন পরিবারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে জীবনের ঝুঁকিনিয়ে মেঘনা ও তেতুলীয়া নদীর উপকূলবর্তী এলাকার তিন হাজার শিশু জেলে পেশায় নিয়জিত রয়েছে। পড়াশোনার প্রতি গুরুত্ব না থাকলেও পৈত্রিক জেলে পেশার সহযোগী হচ্ছে এসব শিশুরা। তবে, জেলে পেশায় জড়িয়ে যাওয়া শিশুদেও স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করে এদের উপবৃত্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন সমাজসেবা বিভাগ।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, চরফ্যাশন উপজেলার তিন হাজার শিশুজেলে পেশায় নিয়জিত। এসব শিশুর বয়স ৭ থেকে ১৪ বছর। এসব শিশুছাড়া উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার জেলে রয়েছে। নিবন্ধিত জেলের সংখ্যাহাজার ২শ’ ৮১জন। অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার। এসবজেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে। এ অঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার ট্রলার ওনৌকা রয়েছে। এছাড়াও গভীর সমুদ্রগামী ৭ হাজার ট্রলার রয়েছে।মেঘনা নদীতে মাছ ধরেন সাইফুল (১১) ও ইব্রাহিম (১৪)। তারা চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর এলাকার কালাম মাঝির ছেলে। বাবা কালাম মাঝিরসঙ্গে মাছ ধরতে যায় নদীতে। কোনো কোনো সময় বাবারঅনুপস্থিতিতে তারা নৌকার বৈঠা ধরেন। তাদের বাবা কালাম মাঝি (৫৬) জানান, আমার পরিবারে ছয়জন মানুষ। একজনের রোজগারে পোষায় না। নদীতে জাল ফেলা, মাছ ধরা, ঘাটেবেচাসহ এত কাজ একা করা সম্ভব হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে দুই ছেলেকেনিজের সঙ্গে কাজে নিয়ে যাই। এদের মতো জেলে পরিবারের শিশুরা ব্যস্ত সময় কাটায় নদীতে। জেলেনৌকায় বড়দের সঙ্গে শ্রম দিচ্ছে এমন শিশুর বয়স সাত-চৌদ্দ বছর। তারাএ বয়সেই পরিনত হয় একজন দক্ষ মাঝি বা জেলে রূপে। দারিদ্রর কারনেউপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ শিশু  ঝুকিপূর্ন এ পেশায় যুক্ত হচ্ছে।
সামরাজ মৎস্যঘাট এলাকার জেলে কাদির (৪৫), কামরুল (৩২), জালাল মাঝি (৪২) বলেন, আমরা বাপদাদার পেশায় থেকেই মাছ ধরে আয় রোজগারকরছি, আমাদের ছেলেদেরও এই কাজই করতে হবে। দিন আনা দিন খাওয়ামানুষ আমরা। মাছ না পেলে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। নদীতে না গেলে তোজীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। লেখাপড়ার করানোর সামর্থ্য নেই। চর মাদ্রাজ এলাকার ট্রলার মালিক লোকমান হোসেন বলেন, সংসারের অভাবের তাড়নায় শিশুরা নৌকা ও ট্রলারে কাজ করে। এসব শিশুরাবাবুর্চির সহকারী, জাল টানা ও জাল থেকে মাছ বাছাই করাসহ মাছপ্রক্রিয়াজতকরনে কাজ করে থাকে। চরফ্যাসন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশ্রাফ হোসেনজানান,সরকারের পক্ষ থেকে উপবৃত্তির টাকা, বিনা মূল্যের বই ওদের জন্যও বরাদ্দ থাকে। এসব অনুদান নিয়েও পরিবারের প্রয়োজনীয় চাহিদামেটাতে কাজে নামে শিশুরা। স্কুলের হাজিরা খাতায় নাম থাকলেও দিনকাটে নদীর বুকে। এসব শিশুদের স্কুলমুখি করতে খুব শিগগিরই স্কুলের পাঠদানের চলমান সময়সূচি পরিবর্তন আসতে পারে। পৌরসভাসহ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে৬২ হাজার ৮০৬ জন। এসব শিক্ষার্থীর ৩০-৪০ শতাংশ উপকূলীয় এলাকার।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান,দারিদ্রর কষাঘাত ওদের জেলে পেশায় যেতে বাধ্য করেছে। অনেকেরই স্কুলেযাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয়না। চরফ্যাশন উপজেলায় শিশু জেলের সংখ্যাপ্রায় তিন হাজারের মতো। এ পেশায় শিশুদের যুক্ত না করতে অভিভাবকদেও সচেতন করা হচ্ছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন জানান, বাবা-মায়ের অসচেতনতার কারনে এসব শিশুর ভবিষ্যত নষ্ট হচ্ছে। শিশু জেলেদেও স্কুল ভর্তি নিশ্চিত করা গেলে এদের উপবৃত্তির আওতায় আনা হবে। তাছাড়া এতিম শিশুদের জন্য চরফ্যাশনে এতিমখানা ও ভোলাতে দুইটিশিশু পরিবার (বালক-বালিকা) রয়েছে। সেখানে ১৮ বছর পর্যন্ত এদের ভরনপোষনের দায়িত্ব সরকার নিয়েছে।

এএইচ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:১২:৩৪ ● ২৩২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ