পটুয়াখালীতে ৩ হাজার ৬শ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » পটুয়াখালীতে ৩ হাজার ৬শ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি
শনিবার ● ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
সাগরকন্যা ডেস্ক ॥
পটুয়াখালীর পায়রায় ৩৬০০ মেগাওয়াট মতার এলএনজিভিত্তিক একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে জার্মানির সিমেন্স এজির সঙ্গে ইনিশিয়াল চুক্তি করেছে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। গত শুক্রবার জার্মানির মিউনিখে হোটেল শেরাটনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এ চুক্তি সই করা হয় বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে জার্মানি সফরে রয়েছেন। মিউনিখে প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল হোটেল শেরাটনে সিমেন্স এজির প্রেসিডেন্ট ও সিইও জোয়ে কাইজার সাাৎ করতে এলে এ চুক্তি হয়। আমদানি করা এলএনজিনির্ভর এই প্রকল্পই হবে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২০১৭ সালে নভেম্বরে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে জার্মানির সিমেন্স এজির সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের এ প্রকল্পের ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন আসবে ঋণ থেকে। বাকি ৪০০ মিলিয়ন ডলার থাকবে ইক্যুইটি হিসেবে।

চুক্তি সারের পর বিদ্যুৎ সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ এবং গ্যাস আমদানির বিষয়ে ইনিশিয়াল চুক্তিটি হয়েছে। ৩৬০০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১২০০ মেগাওয়াটের মোট তিনটি ইউনিট থাকবে। আমদানি করা এলএনজি এ কেন্দ্রে কীভাবে আনা হবে, তা নিয়ে সমীা চলছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। সিমেন্স দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে ভৌত অবকাঠামোসহ স্বাস্থ্য, শিল্পখাতে কাজ করে আসছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার মতায় আসার পর দেশের দণিাঞ্চলের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে পায়রা ও এর আশপাশে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেখানে একটি বন্দরও করা হয়েছে, যেটাকে গভীর সমুদ্র বন্দর করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এ ছাড়া পায়রার আশপাশে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলারও কাজ শুরু হয়েছে। সিমেন্সের প্রধান নির্বাহীর পর জার্মানির ভেরিডোস জিএমবিএইচের প্রধান নির্বাহী হ্যান্স উল্ফগাং কুনজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাাৎ করেন।

বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট তৈরির কাজ করা ভেরিডোসের প্রধান নির্বাহীর বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, উনারা এখন যেভাবে আগাচ্ছেন তাতে আশা করা যায় ২০১৯ সালের জুন মাসে ওঁরা প্রথম পাসপোর্ট হ্যান্ডওভার করবেন। এই পাসপোর্ট প্রযুক্তিগতভাবে এত অগ্রগামী হবে যে, শুধু দুটো দেশে এই পাসপোর্ট থাকবে, জার্মানি ও বাংলাদেশে। এছাড়াও ভেরিডোস বাংলাদেশের ডেটা নিরাপত্তা এবং অন্যান্য খাতে কাজ করতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনার জার্মান সফরের সময় বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর জন্য জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়। সিমেন্স ও ভেরিডোসের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানানোর সময় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও উপস্থিত ছিলেন।

প্রথানমন্ত্রীর সঙ্গে আইসিসির প্রসিকিউটর বেনসুদারের বৈঠক:
১৯৭১ সালের গণহত্যা, ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড এবং সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-আইসিসির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা বাড়ছে বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন। গত শুক্রবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর ফাতোও বেনসুদার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমাদের রাষ্ট্রদূত আইসিসির বিভিন্ন কমিটির সদস্য। এটা একটা নতুন এলাকা, যেখানে খুব স্ট্রংলি আমরা ইনভলভড হচ্ছি। আগে খুব একটা ইনভলভমেন্ট আমাদের ছিল না। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে গত সেপ্টেম্বরে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। আগামি মার্চের শুরুতেই তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে আইসিসি প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান শহীদুল হক।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওখানে যে অ্যাট্রোসিটি ক্রাইম হয়েছে, সেটা স্টাবলিশ করার জন্য তারা এখন কেইস প্রসিডিং শুরু করেছে। তার আগে এটার এভিডেন্স কালেক্ট করতে হয়। সেটার স্টেপ হিসেবে তারা মার্চের প্রথমদিকে বাংলাদেশ ভিজিট করবেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, একইসঙ্গে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকান্ড এবং সেটার চলমান বিচারের কথাও বেনসুদাকে অবহিত করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। উনি বললেন, বিষয়টি তিনি জানেন। উনি খুব মর্মাহত এবং উনি মনে করেন, এ হত্যাকান্ডের বিচার হওয়া উচিত। উনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে ভিজিটের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। উনি বললেন, ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম টু কাম অ্যান্ড ভিজিট। স্পিক টু জাজেস অ্যানি। আমি অবশ্যই আসব, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীও বেনসুদাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী তুললেন। তিনি (বেনসুদা) সহমর্মিতা জানালেন, আলোচনা করলেন। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের মধ্যে এর আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ২০১৭ সালে নোবেলজয়ী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউকিয়ার উইপনস-আইসিএএনের নির্বাহী পরিচালক বিয়াত্রিস ফিন। গত শুক্রবার থেকে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ ছয় শতাধিক নীতি-নির্ধারক, চিন্তাবিদ, ব্যবসায়ীসহ সমাজের অগ্রাগামী শ্রেণির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে ৫৫তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন, যেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অংশ নিয়েছেন। সকালে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন আয়োজিত ‘হেলথ ইন ক্রাইসিস-হু কেয়ার্স’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আইসিসি প্রসিকিউটরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানানোর সময় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও উপস্থিত ছিলেন।

আইসিএএনের নির্বাহী পরিচালকের বৈঠক:
গত শুক্রবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ২০১৭ সালে নোবেলজয়ী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউকিয়ার উইপনস-আইসিএএনের নির্বাহী পরিচালক। দণি এশিয়ায় পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ বিষয়ে নোবেলজয়ী সংগঠন আইসিএএনের নির্বাহী পরিচালক বিয়াত্রিস ফিন।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থানের জন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে এসেছিলেন। বাংলাদেশ দণি এশিয়াকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে চায় সেই ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে। বিয়াত্রিস ফিন খুব প্রশংসা করেছেন এবং আশা করেন যে, বাংলাদেশ এ বিষয়ে দণি এশিয়ায় একটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। দণি এশিয়ার দুই বৈরী দেশ ভারত ও পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্রের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। দেশ দুটি যখন পারমানবিক বোমার পরীামূলক বিস্ফোরণ ঘটায় তখনও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা দণি এশিয়ার শান্তি স্থাপনে যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছিলেন, সে ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ফিন তার ‘অনেক প্রশংসা’ করেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

বিয়াত্রিস ফিন আরো বলেন, বাংলাদেশ প্রথম সারির দেশ যারা পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ কনভেনশনে স্বার করেছে। জাতিসংঘের পরবর্তী সাধারণ অধিবেশনে পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের ওপর সাইডলাইন ইভেন্ট করার চিন্তা করছেন তারা, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও অংশগ্রহণ চাচ্ছেন আইসিএএনের নির্বাহী পরিচালক। গত শুক্রবার থেকে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ ছয় শতাধিক নীতি-নির্ধারক, চিন্তাবিদ, ব্যবসায়ীসহ সমাজের অগ্রগামী শ্রেণির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে ৫৫তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন, যেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অংশ নিয়েছেন। সকালে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন আয়োজিত ‘হেলথ ইন ক্রাইসিস-হু কেয়ার্স’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সম্মেলনে অংশগ্রহণের মধ্যে বিয়াত্রিস ফিন ছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর ফাতোও বেনসুদা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আইসিসি প্রসিকিউটরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানানোর সময় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও উপস্থিত ছিলেন।

এফএন/কেএস

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৭:২৩ ● ৪৩৪৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ