আমতলীতে কোচিং সেন্টার ফেলে পালিয়েছে শিক্ষক

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে কোচিং সেন্টার ফেলে পালিয়েছে শিক্ষক
মঙ্গলবার ● ২০ অক্টোবর ২০২০


আমতলীতে কোচিং সেন্টার ফেলে পালিয়েছে শিক্ষক

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

আমতলী একে হাই সংলগ্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহাকরী শিক্ষক মোঃ মাইনুল ইসলাম অবশেষে কোচিং সেন্টারের নির্ধারিত পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে পালিয়ে গেছেন। সোমবার ছিল তার কোচিং সেন্টারের ইংরেজী পরীক্ষা। প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে শিক্ষক মাইনুল ওইদিন সন্ধ্যায় পরীক্ষা বন্ধ করে পালিয়ে যান। এ ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
জানাগেছে, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদূভাবের কারনে বিগত ১৭ মার্চ  সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করেন সরকার। ওই সময় থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও আমতলী একে হাই সংলগ্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাইনুল ইসলাম কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করেনি। সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে গত এপ্রিল মাস থেকে স্কুল স্ংলগ্ন পল্লবী আবাসিক এলাকায় ফজলুর রহমানের ঘর ভাড়া নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কোচিং বানিজ্য চালিয়ে আসছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে করোনা ভাইরাসে স্কুল বন্ধের সুযোগ নিয়ে শিক্ষক মাইনুল প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে দুই হাজার পাচ’শ টাকা কোচিং ফি আদায় করছেন। দুই সিফটে ভাগ করে তার কোচিং সেন্টারে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে পাঠদান করাচ্ছেন তিনি। প্রত্যেক সিফটে ৫০ জন করে পঞ্চম,চতুর্থ ও তৃর্তীয়  শ্রেনীর শিক্ষার্থী রয়েছে। তার কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের বেঞ্চে বসতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ও সামাজিক দুরত্ব ছিল না। শুরুতেই তার এ কোচিং বানিজ্যের বিষয়টি অভিভাবকরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করেন। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান অজ্ঞাত কারনে শিক্ষক মাইনুলের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো তিনি তাকে উৎসাহিত করেছেন এমন অভিযোগ অভিভাবকদের। সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে গত সাত মাসে তিনি অন্তত পনের লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি কোচিং সেন্টারে পাঠদান করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর কোচিং ফি আদায়ের জন্য একটি কক্ষে গাদা-গাদি করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েছেন। ওই পরীক্ষার ধারাবাহিকতায় গত সোমবার শিক্ষক মাইনুল পুনরায় পরীক্ষা শুরু করেন। ওই দিন ছিল ইংরেজী পরীক্ষা। বিকেলের সিফটের পরীক্ষা বিকেল চারটায় শুরু করেন। ওইদিনই তার কোচিং সেন্টার পরিচালনার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। সোমবার পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে প্রশাসন তার কোচিং সেন্টারে যান। প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে কোচিং সেন্টার পরিচালক মোঃ মাইনুল ইসলাম পরীক্ষা বন্ধ করে পালিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক বলেন,  উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করে একে হাই সংলগ্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ মাইনুল ইসলাম স্কুল বন্ধের পরপরই জোরে সোরে কোচিং বানিজ্য শুরু করেন। সরবারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে তিনি গত সাত মাস ধরে কোচিং চালিয়ে আসছেন। তারা আরো বলেন, শুধু কোচিং সেন্টার চালিয়েই খ্যান্ত হয়নি তিনি, প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর টাকা আদায় উপলক্ষে পরীক্ষা নিয়েছেন। এতে ছিল না কোন সামাজিক দুরত্ব। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার শাস্তি দাবী করছেন তারা।
সোমবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, একটি ছোট কক্ষে গাদা-গাদি করে ৪৭ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিচ্ছেন।  প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি পালিয়ে যায়। পরে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে নিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কোচিং সেন্টারের পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেনীর কয়েক জন অভিভাবক বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বাসায় রেখেই চালিয়েছিলাম কিন্তু মাইনুল স্যার বাসায় গিয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে আসেন। তারা আরো বলেন, আমরা ছেলে মেয়ে কোচিংয়ে দিতে চাইনি কিন্তু স্যারের কারনে পারিনি।
এ বিষয়ে কোচিং সেন্টার পরিচালক একে হাই সংলগ্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ মাইনুল ইসলাম বলেন, অভিভাবকের পিরাপিরিতে অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থীর ক্লাস নিয়েছি। পরীক্ষা শেষ করেই কোচিং বন্ধ করে দেব।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে  বলেন, শিক্ষক মাইনুলের কোচিং বানিজ্যের বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার এমএম মিজানুর রহমান, বিষয়টি আমার জানা নেই। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, কোচিং বানিজ্য সম্পুর্ণ বে-আইনি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪৯:২০ ● ৪৯৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ