আগৈলঝাড়ায় প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন

প্রথম পাতা » বরিশাল » আগৈলঝাড়ায় প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন
বৃহস্পতিবার ● ১৫ অক্টোবর ২০২০


আগৈলঝাড়ায় প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

ঘরের বারান্দায় বসে আছেন প্রেমিকা। তাকে ঘিরে বসেছে বাড়ি, পাড়া-প্রতিবেশি ও বিভিন্ন এলাকার লোকজনের মেলা। তার মধ্যেই বাড়ির লোক তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রেমিকা কলেজ ছাত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তার সিদ্ধান্তে অনঢ়। প্রেমিক তার ব্যাপারে সাড়া না দিলে অবস্থান ও অনশন তুলবেন না তিনি। সোমবার (১২ অক্টোবর) রাত থেকে  বুধবার (১৪ অক্টোবর) রাত অবধি ৭২ ঘণ্টা অনেক আগেই পেরিয়ে গেলেও কলেজ ছাত্রীটি তখনও প্রেমিকের বাড়ির বারান্দায় বসেছিলেন।
পাড়ার লোকজন কৌতূহলী হয়ে বিষয়টি কী জানতে চাইলে মেয়েটি বলেন, ‘ভালোবাসা ফিরে পেতে এসেছি। ও যতক্ষণ না আমায় বিয়ে করবে ততক্ষণ আমি এখান থেকে যাবোনা।’ বিয়ে না হলে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছে ওই ছাত্রী। যদিও ঘটনার পর থেকে প্রেমিকের কোন দেখা মেলেনি।
ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের পাকুরিতা গ্রামের মৌকাবাজ নামে পরিচিত একটি পাড়ায়। কলেজ পড়ুয়া মেয়েটি একই গ্রামের। মাস খানেক আগে তার বাবা মারা গেছেন। থাকছেন মায়ের কাছে। তাদের অভাবের সংসার।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, তাদের সম্পর্কের কথা এলাকার অনেকেই জানেন। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কথাবার্তাও হয়েছিল। মাস তিনেক আগে ছেলেটি অন্যত্র বিয়ে করেছে। তারপরেও কেন হঠাৎ করে এরকম ঘটনা ঘটলো তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। এই ঘটনার পরে এলাকায় লোকজনের ভিড় জমতে শুরু করেছে। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ওই ঘর থেকে কলেজ ছাত্রীকে থানায় নিয়ে গেছে।
এইচএসসি পড়ুয়া কলেজ ছাত্রী জানায়, পাকুরিতা গ্রামের হরেন জয়ধরের ছেলে সুকদেব জয়ধরের (২২) সঙ্গে বিগত দেড় বছর আগে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্কের সুযোগে সুকদেব তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। একপর্যায়ে কলেজ ছাত্রী সুকদেবকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে না করে সুকদেব তার মাথার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে তাদের বিয়ে হয়ে গেছে বলে দাবি করে ওই কলেজ ছাত্রী প্রেমিকা।
এমন কি বিয়ের বিষয়টি সুকদেবের পরিবারকে জানানোর জন্য ওই ছাত্রী চাপ দিয়ে আসছিল। এরই মধ্যে সুকদেব গোপনে উজিরপুর উপজেলার কালবিলা গ্রামের অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে। তিন মাস আগে বিয়ের পর সোমবার রাতে ছাত্রীটি একা ঘরে থাকার সুযোগে ঘরের জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে পরে। তখন ছাত্রীর ডাকচিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে এলে সুকদেব কৌশলে পালিয়ে যায়। তারপর থেকে সুকদেবকে আর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে সে অন্যত্র আত্মগোপণে রয়েছে।
সুকদেব পালিয়ে যাওয়ার পর সোমবার রাতেই বিয়ের দাবিতে শুকদেবের বাড়িতে অবস্থান নেয় ওই ছাত্রী। বাড়িতে অবস্থান নেয়ার পর থেকেই প্রেমিক সুকদেব বাড়ি থেকে গা ঢাকা দেয়। বর্তমানে বিয়ের দাবিতে সুকদেবের ঘরে অবস্থান করছে ওই কলেজ ছাত্রী। ঘরের বারান্দায় একাই থাকছেন তিনি। ঘরের ভেতরে ছেলের মা, বউ আর বড়ভাই তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। প্রতিদিন সকাল হলেই ওই বাড়িতে ভিড় জমে কলেজ ছাত্রীকে দেখার জন্য। কলেজ ছাত্রীর মা বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ নিয়ে বুধবার উপজেলা পরিষদের আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে।
কলেজ ছাত্রীর কথায়, এই সম্পর্কের কথা দুই বাড়ির সকলেই জানতেন। দু’জনের বিয়ে হবে সেটাও ঠিক হয়েছিল। তার অভিযোগ, সেই কারণে সুকদেবকে ঢাকায় চাকরির জন্য কলেজ ছাত্রীর বাড়ি থেকে নগদ টাকাও দেয়া হয়। কলেজ ছাত্রীর আরো অভিযোগ, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার সাথে অনেকবার শারীরিক সম্পর্কও করেছে সুকদেব। কিন্তু হঠাৎ করেই অজ্ঞাতকারণে সুকদেব অন্যত্র বিয়ে করে। সে সময় আমাকে বলেছিল, পারিবারিক চাপে বিয়ে করছি ঠিকই। কিন্তু কয়েকদিনের মাথায় ওই মেয়েকে আমি ছেড়ে দেবো। তারপর আমরা দু’জনে আবার বিয়ে করবো। তারপরেও কেন এই সম্পর্ক থেকে সুকদেব সড়ে দাঁড়াল বুঝতে পারছি না।’
বাকাল ইউনিয়নের স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ড সদস্য নির্মল বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি ওই বাড়িতে গিয়ে ওই কলেজ ছাত্রীর মুখে সব কথা শুনেছি। বিষয়টি বিয়ের মাধ্যমে সমাধানের জন্য ছেলের বাবা ও তার পরিবারের লোকজনকে বলেছেন। তিনি আরও বলেন, পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধান না হলে মেয়েকে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। তবে ছেলের বাবা সমাধানের আশ্বাস দিলেও সমাধান হয়নি।
আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. গোলাম সরোয়ার বুধবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বুধবার রাতেই ওই বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। কলেজ ছাত্রীকে আইনী সহযোগিতা দেয়ার জন্য তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। একই সঙ্গে ছেলের মা ও তার বড়ভাইকেও নিয়ে আসা হয়েছে।

এএলএস/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪৪:৪৪ ● ৫৫৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ