আমতলীতে এক গ্রামে তিন ইটভাটা, হুমকিতে পরিবেশ

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে এক গ্রামে তিন ইটভাটা, হুমকিতে পরিবেশ
বৃহস্পতিবার ● ২৭ আগস্ট ২০২০


আমতলীতে এক গ্রামে তিন ইটভাটা, হুমকিতে পরিবেশ

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার আমতলী উপজেলার বায়বালা গ্রামে আধা কিলোমিটারের মধ্যে জেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই তিনটি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এতে ওই এলাকার অন্তত পাঁচ’শ একর তিন ফসলি জমি, জীব বৈচিত্র্য, পরিবেশ এবং পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পরেছে। ইটভাটার কারনে ফসলি জমির উর্বরতা ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে তেমন ফসল হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকদের। ওই ইটভাটা বন্ধে রায়বালা গ্রামের সচেতন নাগরিক বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বরগুনা জেলা শাখার সমন্বয়ক কেএম মাহফুজ আফ্রিদি ২৩ জুলাই বরগুনা জেলা প্রশাসকসহ বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু বিগত এক মাসেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন বলে অভিযোগ করেন তিনি। দ্রুত অবৈধ ওই ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম বন্ধের দাবী জানিয়েছেন কৃষকরা।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার রায়বালা গ্রামে ২০১৭ সালে আব্দুল হান্নান মৃধা বিবিসিকো নামের একটি ড্রাম চিমনি ইটভাটা স্থাপন করেন। এরপর ২০১৮ সালে বিবিসিকো ইটভাটার তিন’শ গজ দুরে ফাইভ স্টার নামের আরেকটি ড্রাম চিমনি ইটভাটা স্থাপন করেন সেতু তালুকদার। বর্তমানে ওই দুই ইটভাটার পাশাপাশি মোঃ জসিম গাজী আরেকটি ইটভাটা স্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ওই ইটভাটার জন্য মাটি কেটে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বর্ষার মৌসুম শেষ হলেই ওই ইটভাটার কাজ শুরু হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ফসলি জমি নষ্ট করে এ ইটভাটা তিনটি গড়ে উঠেছে। ওই ইটভাটা তিনটিতে জেলা প্রশাসন, কৃষি অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইটভাটা তিনটি গড়ে উঠেছে। আধা কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি ইটভাটা নির্মাণ করায় ওই এলাকার অন্তত পাচ’শ একর তিন ফসলি জমি, গাছপালা, জীব বৈচিত্র্য, প্রাণী সম্পদ, খামার,গ্রামীণ সড়ক ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এতে ওই গ্রামের পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পরেছে। কৃষকরা অভিযোগ করেন ইটভাটা নির্মাণ করার পরে ওই জমির উর্বরতা হারিয়েছে। জমিতে এখন আর আগের মত ফসল ফলছে না। এছাড়া ওই ইটভাটা তিনটির পাচ’শ গজের মধ্যে রয়েছে রায়বালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিম খানা ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনে উল্লেখ আছে আবাসিক এলাকা, কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু রায়বালা গ্রামে ইটভাটার মালিকরা এই আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ইটভাটা স্থাপন করেছেন। ওই আইন লঙ্ঘন করে কেউ ইটভাটি স্থাপন করলে তাকে এক বছর অনধিক পাঁচ বছরের জেল অথবা আর্থিক জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ওই আইনের প্রতিফলন ঘটছে না ওই ইটভাটিগুলোতে। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনকে জানানোর পরেও তারা অজ্ঞাত কারনে দেখেও না দেখার ভান করেছে। এদিকে ইটভাটির মালিকরা বলেন, প্রশাসন , কৃষি অফিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনকে ম্যানেজ করেই ইটভাটি স্থাপন করেছি। ঘনবসতি এলাকা, কৃষি জমি ও পরিবেশ রক্ষায় ওই গ্রামের ইটভাটিগুলো বন্ধে রায়বালা গ্রামের সচেতন নাগরিক বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বরগুনা জেলা শাখার সমন্বয়ক কেএম মাহফুজ আফ্রিদি ২৩ জুলাই বরগুনা জেলা প্রশাসকসহ বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু বিগত এক মাসেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, বিবিসিকো, ফাইফ স্টার ও নতুন ইটভাটির তিন পাশে ঘন বসতি ঘরবাড়ী, গাছপালা ও একদিকে তিন ফসলি জমি। ওই ইটভাটিগুলোর পাশেই রয়েছে রায়বালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিম খানা ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা। বিবিসিকো ইটভাটিতে চলছে সম্প্রসারণ নির্মাণ কাজ। নতুন ইটভাটি স্থাপনে মাটি কেটে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
রায়বালা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আধা কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি ইটভাটি নির্মাণ করায় ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। এখন আর আগের মত জমিতে ফসল ফলছে না। তিনি আরো বলেন, ইটভাটির কারনে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত ওই ইটভাটি গুলো বন্ধের দাবী জানাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, প্রভাবখাটিয়ে ইটভাটির মালিকরা কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটি স্থাপন করছেন। এতে এই এলাকার অন্তত পাচ’শ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে। দ্রুত ওই ইটভাটিগুলো বন্ধের দাবী জানাই।
রায়বালা গ্রামের সচেতন নাগরিক বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বরগুনা জেলা শাখার সমন্বয়ক কেএম মাহফুজ আফ্রিদি বলেন, ইটভাটিগুলোর কারনে ওই এলাকার অন্তত পাঁচ’শ একর ফসলি জমি,জীব বৈচিত্র্য, গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হচ্ছে এবং পাঁচ হাজার মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। ওই ইটভাটিগুলো বন্ধের জন্য বরগুনা জেলা প্রশাসকসহ বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ করেছি। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে প্রশাসন গত এক মাসেও কোন পদক্ষেপ দেয়নি। তিনি আরো বলেন,ওই গ্রামের কৃষি জমি ও মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষায় ওই ইটভাটি গুলো বন্ধের দাবী জানাই।
নতুন ইটভাটির পরিচালক মোঃ জসিম গাজী বলেন, ইটভাটি স্থাপনের জন্য মাটি কেটে স্তুপ করে রেখে দিয়েছে। শুকনো মৌসুমে কাজ শুরু করবো।
বিবিসিকো ইটভাটির মালিক মোঃ হান্নান মৃধা বলেন, আমি ইটভাটি জিকঝ্যাক করতেছি। এখন আর কৃষি জমি ও পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, রায়বালা এলাকার কোন ইটভাটি স্থাপনে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। কৃষি জমিতে ইটভাটি স্থাপন করলে একদিকে আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ইটভাটি এলাকার জমির ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ আবদুল হালিম বলেন, পরিবেশ নষ্ট হয় এমন জায়গায় ইটভাটি স্থাপন করতে পারবে না। আমতলীর রায়বালা গ্রামে কোন ইটভাটি স্থাপন করার অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ওই ইটভাটিগুলো বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, সরকারী নিয়ম বর্হিভুত কোন ইটভাটা নির্মাণ করা হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৪:১৪ ● ৪৩২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ