বেতাগীতে শিক্ষার্থীদের অনুদানের টাকা শিক্ষকের পকেটে

প্রথম পাতা » বরগুনা » বেতাগীতে শিক্ষার্থীদের অনুদানের টাকা শিক্ষকের পকেটে
শনিবার ● ২৫ জুলাই ২০২০


---

বেতাগী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার বেতাগীতে বিভিন্ন মাদ্রাসার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রলায়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের আওতায় গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের  বিশেষ অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তে এর সত্যতা মেলায় ইতোমধ্যে একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার ১৬ টি দাখিল, আলীম ও কামিল  মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রলায় ১৪৫ জন গরীব, দু:স্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুকূলে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে বিশেষ অনুদানের অর্থ বরাদ্দ দেয়।  কিন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ টাকা না দিয়ে আত্মসাত করে। বিষয়টি জানাজানির পর এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দেয়।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, মোকামিয়া কাঠালতলী নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার ওই প্রতিষ্ঠানে ১৬জনের নামে টাকা উত্তোলন করা হয়। প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মো: কামাল হোসেন সোনালী ব্যাংক বরগুনা কোড বিল্ডিং শাখা থেকে সকল শিক্ষার্থীর টাকা চেকের মাধ্যমে একইসাথে উত্তোলন করে দুই হাজার ৫০০ করে টাকা কেটে রেখে বাকী টাকা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছে দেয়। নবম শ্রেনির শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার বলেন, অর্ধেক টাকা হাতে পেয়েছি। লামিয়ার মা সুফিয়া বেগম জানান, তার কাছে আড়াই হাজার টাকার কথা বলে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নেওয়া হয়। একই অভিযোগ ওই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুক্তার, দশম শ্রেনির শিক্ষার্থী লামিয়ার, একই শ্রেণির মুন্নীর, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদার, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জুবায়ের নাজণীন তোফা ও একই শ্রেণির মারিয়ার। এছাড়াও  ওই মাদ্রাসার সুপারের ছেলে মো: নাঈম যিনি ঝালকাঠী কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে এবং সুপারের ভাই একই প্রতিষ্ঠানের সহ-সুপার মো: মাছুম বিল্লাহ‘র  ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো: জিহাদ ও মেয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তারের নামেও  টাকা উত্তোলন করা হয়। ওই মাদ্রাসার সুপার মো: মারুফ বিল্লাহ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কয়েকদিন ধরে অসুস্থ তাই এ বিষয় আমার জানা নেই। তবে টাকা উত্তোলনে সহায়তা করার জন্য একজন সুপারকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তিনি কি করেছেন আমি জানিনা। অনুদান পেতে খরচ হয়েছে তাই নিজস্ব লোকের নাম দেওয়া দোষের কি?
আলহাজ্জ ময়েজ উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায়ও প্রতিষ্ঠানের সুপার মাওলানা মো: নাজমুল ৮ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ২ হাজার ৭০০ টাকা করে আত্মসাত করে। শুধু এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই নয়, বিশেষ অনুদান প্রাপ্ত উপজেলার ১৬ টি মাদ্রাসার মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেএেই একই চিত্র। ২০ জুলাই ইউপি সদস্য মো: নাসির উদ্দিন মারুফ স্থানীয়দের পক্ষ থেকে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। এ প্রেক্ষিতে উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজারকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলে তদন্তে তিনি এর সত্যতা পাওয়ায়  বুধবার (২২ আগষ্ট) সকাল ১১ টায় মোকামিয়া তাহেরীয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ওই সকল শিক্ষার্থীদের নিকট ২৫ শত করে টাকা ফেরত দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের সুপার মাওলানা মো: শাহআলম জানান,  তিনি টাকা আত্মসাত করেননি অনুদান প্রাপ্ত ১০ শিক্ষার্থী ছারাও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমন্বয় করেছিলেন। তারপরেও  সকলের সম্মানে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার মো: মাসুদুর রহমান জানান, সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সকলের উপস্থিতে একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে তাদের অনুদানের টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। তদন্তে যাদেরই আত্মসাতের প্রমান মিলবে তাদের বিরুদ্ধেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব আহসান জানান, বিশেষ অনুদান প্রাপ্ত উপজেলার সকল মাদ্রাসা এ ব্যাপারে তদন্ত করে দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমন্বয় করার পরেও অভিযোগের কারনে একটি মাদ্রাসার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে এবং ওই প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগকে বলা হয়েছে।  তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৪:১৩ ● ৩৫৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ