করোনা’র প্রভাব আমতলীতে ঋণের কিস্তি আদায়ে শক্ত অবস্থানে এনজিও কর্মীরা

প্রথম পাতা » বরগুনা » করোনা’র প্রভাব আমতলীতে ঋণের কিস্তি আদায়ে শক্ত অবস্থানে এনজিও কর্মীরা
সোমবার ● ২৩ মার্চ ২০২০


এনজিও পদক্ষেপের এক কর্মী কিস্তি আদায়ে ব্যস্ত।

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
করোনা ভাইরাসে এনজিও’র কিস্তির পরিশোধে হিমসিম খাচ্ছে আমতলী উপজেলার প্রায় লক্ষাধীক ঋণ গ্রহিতা। ঋণ গ্রহিতারা দ্রুত এনজিও’র কিস্তি বন্ধের দাবী জানিয়েছেন। এনজিও’র কিস্তি বন্ধ না হলে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে এমন দাবী ঋণ গ্রহিতাদের। এদিকে এনজিও’র লোকজন ঋণের কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছে- এমন অভিযোগ ঋণ গ্রহিতাদের।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক বে-সরকারী সংস্থা এনজিও রয়েছে। ওই এনজিওগুলো থেকে আমতলী উপজেলার প্রায় লক্ষাধীক মানুষ ঋণ নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য, গরু ও হাস মুরগী পালন করে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে। করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা দেওয়ায় আমতলী উপজেলার ব্যবসায়ী, কৃষক, জেলে ও দিন মজুর মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার ঋণ গ্রহিতারা। এক দিকে পরিবারের ভরণ পোষণ, অন্য দিকে সপ্তাহিক ও মাসিক ঋণের কিস্তির বোঝা। বর্তমানে আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় পরিবারের ভরণ পোষনই কষ্ট সাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। এনজিও’র ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার মত কোন সামর্থ নেই এমন দাবী ঋণ গ্রহিতাদের। এদিকে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বে-সরকারী সংস্থা এনজিওগুলো ঋণের কিস্তি আদায়ে সহনশীল না হয়ে ঋণ গ্রহিতাদের চাপ প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ ঋণ গ্রহিতাদের।
অপর দিকে বাংলাদেশে ব্যাংকের ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত এমন এক প্রজ্ঞাপনে আশার মুখ দেখলেও বাস্তবে এনজিও’র ঋণ গ্রহিতাদের কোন কাজে আসছে না। ওই প্রজ্ঞাপনে এনজিও’র ঋণ স্থগিতের কোন নির্দেশনা নেই। আমতলী লক্ষাধীক ঋণ গ্রহিতারা এনজিও’র ঋণের কিস্তি বন্ধের দাবী জানিয়েছেন।
আমতলী উপজেলার তালুকদার বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা প্রায় বন্ধ। একদিকে ঘরে জিনিসপত্র রয়েছে কিন্তু কোন ক্রেতা নেই, অন্য দিকে ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য এনজিও’র চাপ প্রয়োগ। ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে দিন কাটছে। দ্রুত এনজিও’র ঋণের কিস্তি বন্ধের দাবী জানাই।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের মাহিনুর বলেন, পদক্ষেপ এনজিও থেকে ৪৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গরু ক্রয় করেছি। এখন আয় রোজগার নেই কিস্তিু দিতে সমস্যা হচ্ছে। কিস্তি পরিশোধ করতে হলে গরু বিক্রি করে করতে হবে। দ্রুত কিস্তি বন্ধের দাবী জানাই।
একই এলাকার জেসমিন বলেন , পদক্ষেপ থেকে ঋণ নিয়ে জমি ক্রয় করেছি। এখন রোজগার বন্ধ, খেতেই সমস্যা হচ্ছে। কিস্তি পরিশোধের কোন উপায় পাচ্ছি না। দ্রুত কিস্তি বন্ধের দাবী জানাই।
চাওড়া কাউনিয়া গ্রামের মোটর সাইকেল চালক মাঈনুল ইসলাম বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মোটর সাইকেল কিনেছি। করোনা ভাইরাসের কারনে আয় রোজগার প্রায় বন্ধের পথে। কিভাবে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করবো তা ভেবে পাচ্ছি না?
বে-সরকারী সংস্থা পদক্ষেপ এনজিও’র গাজীপুর ব্র্যাঞ্চের সিএম মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, কিস্তি বন্ধের ব্যাপারে আমার কোন নির্দেশনা নেই। নির্দেশনা পেলে কিস্তি আদায় করবো না।
বে-সরকারী সংস্থা ব্র্যাক’র আমতলী অফিসের ক্রেডিট অফিসার (প্রগতি) মোঃ মাঈনুল ইসলাম বলেন, নির্দেশনা পেলে কিস্তি আদায় বন্ধ করবো।
ব্র্যাক আমতলী অফিসের ম্যানেজার কাজী মোঃ দুলাল হোসেন বলেন, প্রধান কার্যালয় থেকে কিস্তি বন্ধের কোন নির্দেশনা দেয়নি। বন্ধের নির্দেশনা পেলে কিস্তি আদায় করবো না।
গ্রামীন ব্যাংক আমতলী শাখার ম্যানেজার মোঃ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, কিস্তি বন্ধের কোন নির্দেশনা নেই বিধায়,কিস্তি আদায় করছি।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, মঙ্গলবার বে-সরকারী সংস্থা এনজিও’র সমন্বয় সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় সকল এনজিওকে আপত কালীন সময়ে ঋণের কিস্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৬:৫৯ ● ২৮৫৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ