কলাপাড়ায় ‘বাংলাদেশ চায়না টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ চালু

প্রথম পাতা » বিবিধ » কলাপাড়ায় ‘বাংলাদেশ চায়না টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ চালু
শনিবার ● ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০


কলাপাড়ায় ‘বাংলাদেশ চায়না টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ চালু

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥

পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুতকেন্দ্রে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন পল্লী স্বপ্নের ঠিকানায় আরেক নতুন স্বপ্নের বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু হলো। উন্নত বাংলাদেশ গঠনের নিমিত্তে কর্মদক্ষ জাতিগঠনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়েছে। যেখানটায় বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার প্লান্ট তার পাশেই সকল আধুনিক সুবিধা সংবলিত স্বপ্নের ঠিকানায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ-চায়না টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই) এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার প্লান্ট (বিসিপিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দ্বিতল এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দোতলায় কারিগরি শিক্ষার শ্রেণিকক্ষের ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, বিসিপিসিএল এর প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মওলা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিসিপিসিএলএর সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনা প্রকৌশলী মিস্টার চি।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রকল্পের জিএম মামুনুর রহমান মন্ডল, অভিভাবক মাস্টার আবুল কালাম, শিক্ষার্থী জিহাদুল ইসলাম রনি, মোসাম্মৎ সুমনা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিটিআই এর অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস সালাম।
প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, ‘ উন্নত দেশ গড়তে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই। এই এলাকায় পাওয়ার প্লান্ট করতে জায়গা অধিগ্রহণ করেছি। সূচনালগ্নে পরিকল্পনা ছিল বিদ্যুত কেন্দ্রের আশেপাশের সকল শিক্ষার্থীকে অন্তত কারিগরী শিক্ষায় উন্নত করার। এখন আমাদের সেই প্রচেষ্টার বাস্তবায়ন হতে চলেছে। এখানে পাঁচটি ট্রেডে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। আর চারটি দেশের ভাষা শেখার সুযোগ করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের হাতে-কলমের শিক্ষা ও ভাষাকে ব্যবহার করে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে মানুষ। আপাতত তিনটি ট্রেডে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এসএসসি প্রোগ্রামের অধীন নবম শ্রেণিতে ৪৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে।’ এটি একদিন বাংলাদেশের নামকরা স্কুলে পরিণত করার স্বপ্ন রয়েছে বলে প্রকৌশলী খোরশেদুল আলম বলেন। এখানে কারিগর তৈরি করতে চাচ্ছেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এটিকে তিনি উদাহরণ সৃষ্টির স্কুল বলে মন্তব্য করেন। এই দিনটি কলাপাড়ায় কর্মদক্ষ জনশক্তি গড়ার যাত্রার দিন বলে দাবি করেন।
স্বপ্নের ঠিকানায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ-চায়না টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম জানান, আপাতত কম্পিউটার, মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল তিনটি ট্রেডের এসএসসি ভোকেশনাল শাখার ক্লাশ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪৫ জন। নয়জন ছাত্রী রয়েছে। আর পুনর্বাসন পল্লী স্বপ্নের ঠিকানার বাসীন্দাদের সন্তান রয়েছে ১০ জন। বাকিরা কলাপাড়ার বিভিন্ন গ্রামের শিক্ষার্থী। আব্দুস সালাম আরও জানান, এখানে প্রথম ব্যাচে ভর্তি হওয়া ৪৫ শিক্ষার্থীর ভর্তি ফি লাগেনি। উল্টো ড্রেস, বই বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। নেই কোন বেতন। থাকছে শিক্ষায় মেধাবৃত্তির সুযোগ। এখানে তিনটি ট্রেড ছাড়াও চায়নীজ, এ্যারাবিয়ান, কোরিয়ান ও মালয়েশিয়ার ভাষা শেখার কোর্স চালু করা হবে। পুনর্বাসিত স্বপ্নের ঠিকানার বি/১৮ ঘরের বাসীন্দা জামান মৃধার ছেলে নিয়াজ জানায়, এই টেকনিক্যাল স্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে উপকৃত হয়েছে। জেনারেল মেকানিক ট্রেডে ভর্তি হওয়া মধুপাড়া গ্রামের আসাদুল, কম্পিউটার ট্রেডের ছাত্রী গরাৎ খা গ্রামের মনিরা আক্তার জানায়, তাঁদের কর্মমূখি শিক্ষা বর্তমানে কর্মসংস্থানের খুব সহায়ক হবে। সর্বোপরি ডিজিটাল বাংলা গড়তে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলেও বক্তারা মতামত ব্যক্ত করেন।
অনগ্রসর জনপদ ধানখালীর এই জনপদে ইতোপূর্বে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে জমিহারাদের পুনর্বাসন পল্লী স্বপ্নের ঠিকানায় ১৩৫ পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে নিজ হাতে চাবি তুলে দেন। এ পল্লীতে আধুনিক বাস উপযোগী তিন ইউনিটের সেমি পাকা ভবন। ডাবল লেনের সংযোগ সড়ক। পর্যাপ্ত গভীর নলকূপ। ব্যবহারের নিরাপদ পানির জন্য একটি দৃষ্টি নন্দন পুকুর, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, খেলার মাঠ, বহুমুখী সুবিধা সংবলিত একটি সাইক্লোন শেল্টার, ফুল-ফলের বাগান করার মতো স্পেস, একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। সবশেষ পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের চলাচলের জন্য একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আজ যেন আলোকিত জনপদে পরিণত হয়েছে এ জনপদ।

এমইউএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৪:৪৮ ● ৩৫১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ