বানারীপাড়ায় ট্রিপল মার্ডারের প্রধান আসামীসহ গ্রেফতার-২

প্রথম পাতা » বরিশাল » বানারীপাড়ায় ট্রিপল মার্ডারের প্রধান আসামীসহ গ্রেফতার-২
রবিবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০১৯


বানারীপাড়ায় ট্রিপল মার্ডারের প্রধান আসামীসহ গ্রেফতার-২

বানারীপাড়া সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বানারীপাড়ায় কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের বাড়িতে বৃদ্ধা মা মরিয়ম বেগম ও তার বোন জামাতা অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক শফিকুল আলম সহ তিন জনকে লোমহর্ষক হত্যার ঘটনায় দুই জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শনিবার রাতে প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের ছোট ভাই ঢাকার গুলশান এন.আর.বি ব্যাংক শাখার কর্মকর্তা সুলতান মাহামুদ বাদী হয়ে থানায় এ মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটি থানার অফিসার ইনচার্জ শিশির কুমার পাল নিজেই তদন্ত শুরু করেছেন। তিনি এ মামলাটি তদন্তকালে প্রবাসীর বাড়িতে ট্রিপল হত্যার আলামত ও লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকা এজাহার নামীয় দুই আসামী জিনের বাদশা জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল হাওলাদারকে র‌্যাব-৮ এর সহায়তায় গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। পরে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.রকিব উদ্দিন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.আনোয়ার সাঈদ ও র‌্যাব-৮ এর উর্ধতন কর্মকর্তারা গ্রেফতার হওয়া আসামী জিনের বাদশা জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল হাওলাদারকে পৃথক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এ সময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর আসামীদের শিকারোক্তি অনুযায়ী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাগরদীর মুন্সি বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে জাকির হোসেনের ভাড়া বাড়ি থেকে লন্ঠিত স্বর্ণালংকার ও তিনটি মোবাইল ফোনসহ একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করেন। পরে তিনি গ্রেফতার হওয়া আসামী জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েলের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রবাসীর বাড়িতে তিন জনকে হত্যার রহস্য উদ্ঘটন করেন। এ সময় অর্থ লোভী জিনের বাদশা জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল প্রবাসীর বাড়িতে ট্রিপল মার্ডারের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় বলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান। তবে তদন্তের সার্থে এ ব্যাপারে এখনই তিনি মূখ খুলতে চাইছেন না বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি শিশির কুমার পাল জানান।

এব্যাপারে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে, আজ কালের মধ্যে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রিপল মাডারের আসামী জিনের বাদশা জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল হাওলাদারের শিকারোক্তি মূলক জবানবন্দি তুলে ধরবেন বলে জানান।

এদিকে পূর্বে সলিয়াবাকপুর ৫নং ওয়ার্ডের কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের চাচাতো ভাই চান মিয়া জানান, দুই বছর আগে জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল ওই বাড়িতে রাজ মিস্ত্ররীর কাজ করে। সেই থেকেই রবের ঘরে তাদের যাওয়া-আসা। ঘটনার দিন রাতে তারা জাকির হোসেনকে ওই বাড়িতে দেখেছেন। এর পর ভোর রাতে রবের মেঝ ভাইয়ের মেয়ে আছিয়া খাতুন তার বাবা হারুন হাওলাদারকে ডেকে আনেন। সে গিয়ে তার মাকে ব্যালকুনিতে পড়ে থাকতে দেখে ডাক-চিৎকার দিয়ে বাড়ির সকলকে সজাক করেন। এর পর তারা ঘুম থেকে জেগে ওই ঘরে তার মা ও বোন জামাই এবং পিছনের পুকুরে তার খালাতো ভাইয়ের লাশ দেখতে পান।

পরে খবর পেয়ে থানার ওসি শিশির কুমার পাল ও ওসি (তদন্ত) জাফর আহম্মেদ সহ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠান। পরে ওই দিন রাত ৯টায় প্রবাসীর বড় বোন জামাই হারুন শিকদার শেবাচিম হাসপাতাল থেকে তিন জনের লাশ বুঝে নেন। রোববার বাদ জোহর এরব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তাদের লাশ পৃথক ভাবে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বরিশাল র‌্যাব-৮ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার ভোর রাতে বানারীপাড়ায় কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রবের বাড়ীতে অজ্ঞাত আসামীরা তিন জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করে স্বর্ণালংকার ও তিনটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। দ্রুততম সময়ের মাঝে এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের গ্রেফতারে র‌্যাব সব সময় জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। সে অনুযায়ী পুলিশের পাশাপাশি এ সংক্রান্তে র‌্যাব-৮ ওই ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে।

শনিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ও র‌্যাব-৮ যৌথ অভিযান চালিয়ে প্রবাসীর বাড়িতে বৃদ্ধাসহ তিন জন হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে মোঃ জাকির হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। প্রথমে জাকির হোসেন ওই বাড়ীর নির্মান শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে সে জ্বীন হাজির ও ঝাড় ফুকের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করে বলে প্রচার করে ওই বাড়ীর সবার বিশ্বস্ততা অর্জন করে। এ সুযোগ নিয়ে সে ওই বাড়ীতে জ্বীন আসবে বলে রাতে দরজা খোলা রাখার কথা বলে কৌশলে প্রবেশ করে এবং এক জন সহযোগীকে নিয়ে পর্যায়ক্রমে কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রবের বৃদ্ধা মা মরিয়ম বেগম, বোন জামাই শফিকুল আলম ও খালাতো ভাই ইউসুফকে হত্যা করে।

পরবর্তীতে র‌্যাব-৮ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও আটক জিনের বাদশা জাকির হোসেনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার সহযোগী এবং তিন জন হত্যাকান্ডের অপর আসামী মোঃ জুয়েল হাওলাদার (৩৪) কে বরিশাল মহানগরীর কোতয়ালী থানার পশ্চিম মতাশুর মুহুরীকান্দা এলাকা থেকে আটক করে। আকটকৃত দুই জনই প্রাথমিক ভাবে প্রবাসীর বাড়িতে তিন জনকে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এর পর জাকির হোসেন ও জুয়েল হাওলাদারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী র‌্যাব-৮ ও পুলিশ সাগরদীর মুন্সি বাড়ীতে যৌথ অভিযান চালায়। এ সময় তারা জাকির হোসেনের ভাড়া বাড়ি থেকে প্রবাসীর বাড়িতে তিন জনকে হত্যাকান্ডের পর লুট করে আনা স্বর্ণালংকার, তিনটি মোবাইল ফোন ও একটি চাকু উদ্ধার করে। পরে গ্রেফতারকৃত আসামী জাকির হোসেন ও জুয়েলকে উদ্ধারকৃত আলামত সহ বানারীপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। এ ব্যাপারে র‌্যাব-৮ ধারণা, আসামীরা লোভের বশবর্তী হয়ে এধরণের ঘৃন্য কাজ করেছে।

জিএমআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৬:১১:৩২ ● ৫০৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ