
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশালের বগুড়া রোডে অবস্থিত ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অপসোনিন ফার্মার স্যালাইন ইউনিটের সামনে চলছে এক ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ কর্মসূচি। সোমবার রাতেও কারখানার ফটকে তালা, সামনে বসে শতাধিক শ্রমিক। কেউ হাতে ব্যানার, তাতে লেখা- ছাঁটাই নয়, কর্মস্থল ফেরত চাই; কেউ বা ঠান্ডা পানির বোতল হাতে ঘাম মুছছেন।
কিন্তু পরিবেশ ভারী নয়, বরং ভাসছে হাসির শব্দ। কারণ, শ্রমিকদের এই প্রতিবাদস্থলে চলছে চার্লি চ্যাপলিনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র মডার্ন টাইমস। হাসির আড়ালেই লুকিয়ে আছে তাঁদের ক্ষোভ ও কষ্ট। চ্যাপলিনের পর্দার নীরব প্রশ্ন যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে- আধুনিক সময়েও কী শ্রমিকের হাসি এমনই কষ্টের?
শ্রমিকদের অভিযোগ, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন পাওয়ার পরই প্রতিষ্ঠানটি ৫৭০ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করে। এরপর থেকেই তাঁদের হাতে ছাঁটাইপত্র ও তালাবদ্ধ কারখানা। ১ নভেম্বর থেকে তাঁরা টানা আন্দোলনে, যার নতুন রূপ এখন চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রতিবাদ।
শ্রমিক নেতা মো. খোকন সাংবাদিকদের বলেন, চ্যাপলিন যেমন মেশিনের চাপে পিষ্ট হয়েছিল, আমরাও আজ আধুনিক ব্যবস্থার চাপে পিষ্ট হচ্ছি। ছাঁটাই মানে শুধু চাকরি হারানো নয়, পরিবারের চাকা থেমে যাওয়া।
সোমবার সন্ধ্যায় শ্রমিকেরা কারখানার ফটকে প্রজেক্টর বসিয়ে মডার্ন টাইমস দেখেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে যোগ দেন সেই প্রদর্শনীতে। চলচ্চিত্রের হাসির মাঝেই হঠাৎ শোনা যায় স্লোগান- শ্রমিকের ঘাম, মালিকের লাভ নয়, চাই ন্যায্য অধিকার। এক তরুণ শ্রমিক বলেন, চ্যাপলিন যদি আজ বেঁচে থাকতেন, নিশ্চয় আমাদের সঙ্গে থাকতেন।
শ্রমিকদের এ কর্মসূচির পেছনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাসদ সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক আগামী ১২ নভেম্বর মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন। যদি পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত না আসে, আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এর আগে রবিবার সকালে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকেরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। প্রশাসনের আশ্বাসে তাঁরা পরে মিছিল নিয়ে ফিরে আসেন কারখানার সামনে। সোমবার রাতেও তাঁদের অবস্থান অব্যাহত থাকে।
শ্রমিক নেতা খোকনের প্রশ্ন, শ্রমিকের করের টাকায় রাষ্ট্র চলে, অথচ এক কলমে ৫৭০ জনের জীবিকা বন্ধ করে দেওয়া হলো। পরিবারগুলো বাঁচবে কীভাবে? শ্রমিকদের দাবি, অপসোনিনের ৪০ বছরের ইতিহাসে একসঙ্গে এত শ্রমিক ছাঁটাইয়ের নজির নেই। অনেকে ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে কাজ করছিলেন। বর্তমানে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এবং গত মাসের বেতনও এখনো পরিশোধ করা হয়নি।