
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় স্বাস্থ্যসেবার যে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে, তা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, ভয়াবহ বললেও কম বলা হবে। প্রায় ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভরসাস্থল ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতাল এবং কুয়াকাটার ২০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক আছেন মাত্র তিনজন। বাস্তবে একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও দুজন কনসালটেন্ট মিলে পুরো উপজেলার চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন- এ চিত্র একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কলাপাড়ায় ২৪৬টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ১০৪টি শূন্য। সবচেয়ে বিপর্যয়কর অবস্থা চিকিৎসক পদে- যেখানে সাতজন কর্মরত দেখানো হলেও চারজন অনুপস্থিত। অথচ প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসছেন গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন, আর ভর্তি থাকেন ১১০-১২০ জন রোগী। তালতলী, আমতলী, রাঙ্গাবালী এমনকি কুয়াকাটা ও মহিপুরের রোগীরাও এই হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই সংকটের গভীরতা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যখন দেখা যায়, কুয়াকাটা হাসপাতাল চলছে মাত্র একজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসারের কাঁধে। মহিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তো কোনো চিকিৎসকই নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে চিঠি পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।
এ অবস্থায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী নিয়োগ বা রোস্টার ভিত্তিক চিকিৎসক মোতায়েন করা যেতে পারে, যতক্ষণ না পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ কার্যকর হয়। চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, আবাসন ও প্রণোদনার ব্যবস্থা না থাকলে দুর্গম ও প্রান্তিক অঞ্চলে চিকিৎসক বসানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। জাতীয় বাজেট ও পরিকল্পনায় কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র, পায়রা বন্দর ও মহিপুর মৎস্যবন্দরকে ঘিরে স্বাস্থ্যখাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার বলেও আমরা মনে করি।
একটি হাসপাতাল শুধু ভবন বা যন্ত্রপাতির উপর নির্ভর করে না, এর প্রাণ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। কলাপাড়ার মানুষের মৌলিক অধিকার- স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার দায় সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদেরই নিতে হবে।