মহিপুরে সরকারী জমি দখলের মহোৎসব

প্রথম পাতা » কুয়াকাটা » মহিপুরে সরকারী জমি দখলের মহোৎসব
সোমবার ● ১৫ জুলাই ২০১৯


মহিপুরে সরকারী জমি দখলের মহোৎসব

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

মহিপুরে সরকারী খাস জমি দখল করে নির্মান করা হচ্ছে পাকা আধা পাকা অসংখ্য স্থাপনা। দিনে দুপুরে ফ্রি স্টাইলে চলছে এসব স্থাপনার কাজ। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী ও স্থানীয় তহসিল অফিসের কর্তাদের ম্যানেজ করে কতিপয় ভূমি দস্যুরা এসব স্থাপনা তুলছেন। চলছে দখলের মহোৎসব। ফলে বে-দখল হচ্ছে সরকারী জমি।
জানা য়ায়, মহিপুর বাজারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় ১০ একর জমি রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ জমি বর্তমানে বে-দখল রয়েছে। এদিকে ভূমি অফিসের রয়েছে ৯.২৩ একর জমি। এর মধ্যে বেশির ভাগই প্রভাবশালী মহলের দখলে রয়েছে। এছাড়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের শেখ রাসেল সেতুর নিচের জমি দখল করে প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা নির্মান করা হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভূমি অফিসের একমাত্র খাস পুকুরটি দখল করে তোলা হয়েছে প্রায় অর্ধশত দোকান ঘর। তহসিল অফিসের নিজস্ব পুকুরটিও দখল করে তোলা হয়েছে প্রায় আট-দশটি দোকান ঘর। বর্তমানে অনেক স্থাপনা নির্মানধীন। দিনে দুপুরেই কাজ চলছে এসব স্থাপনার। কোন অদৃশ্য কারনে পুকুরটি রক্ষায় তহসিল অফিসের কর্মকর্তারা নিচ্ছেনা উদ্যোগ। এছাড়া মহিপুর বাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কালি বাড়ি পুকুরের চার পাশ দখল করে প্রায় শতেক খানে আবাসিক বাড়ি ঘর ও দোকান ঘর নির্মান করা হয়েছে। এর মধ্যে এখানে প্রভাবশালী এক জনের চার তলা ভবনও রয়েছে।
এদিকে শেখ রাসেল সেতুর স্লপসহ সড়ক ও জনপদ বিভাগের যায়গা দখল করে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা তোলা হয়েছে। শেখ রাসেল সেতুর স্লোপে বর্তমানে অনেক স্থাপনা নির্মানাধীন রয়েছে। এছাড়া মহিপুরের ফেরিঘাট, মধ্য বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কয়েকশ পাকা আধা পাকা স্থাপনা নির্মান করা হয়েছে। বর্তমানে মহিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গেটের বিপরীতে জমি দখল করে নতুন স্থাপনার কাজ চলছে। সব মিলিয়ে মহিপুর বাজারের বিভিন্ন স্থানে সরকারী জমি দখল করে ঘর তোলার হিড়িক চলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ কতিপয় সরকারী কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ম্যানেজ করে তোলা হচ্ছে এসব স্থাপনা। জরুরি ভিত্তিতে এসব স্থাপনা তোলার কাজ বন্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন না করলে মহিপুরের সব সরকারী যায়গা বে-দখল হয়ে যাবে বলে মনে করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
মহিপুর এস আর ও এস বি লিমিটেডের সভাপতি ওমর ফারুক আকন জানান, তাদের সমিতির সামনে সড়ক ও জনপদ বিভাগের যায়গা দখল করে একটি অবৈধ স্থাপনা তুলেছে শানু মাঝি নামে এক ব্যক্তি। এভাবে মহিপুর বাজারের বিভিন্ন স্থানে সরকারী জমি দখল করে প্রায় দুইশতাধিক অবৈধ স্থাপনা নির্মান করা হয়েছে। আবার অনেক স্থানে স্থাপনা নির্মানের কাজ চলছে। এমতাবস্থায় যদি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা না হয় তাহলে এ মৎস্য বন্দরকে নিয়ে সরকারের নেয়া উদ্যোগ ভেস্তে যাবে। মহিপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব সত্তার হাওলাদার বলেন, রাতের আধারে এসব অবৈধ স্থাপনা তোলা হয়েছে। এর ফলে বাজারের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। সাবেক ইউপি সদস্য হাজী আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, এসব পুকুর ছিল সাধারন মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের একমাত্র অবলম্বন। এ পুকুরে মাছের চাষ হত। বড় বড় মাছ ছিল। মানুষ ধরে খেত। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে পুকুর গুলির অস্তিত্ব এখন বিলীন হয়ে গেছে।
মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আজিজুর রহমান (তহশিলদার) বলেন, পূর্বতন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারা এক বছরের বন্দোবস্ত দিয়ে গেছেন। আর এ সুযোগ কাছে লাগিয়ে বন্দোবস্ত গ্রহীতারা পাকা স্থাপনা তুলেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় একের পর এক নতুন স্থাপনা উঠছে। এর বিরোধিতা করায় আমার পূর্বতন কর্মকর্তাকে ন্যাকক্কারজনকভাবে বিদায় নিতে হয়েছে। আমি যোগদানের পর সকল বিষয় উর্ধ্বতনদের অবহিত করেছি।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিবুর রহমান বলেন, মহিপুরের যে সমস্ত খাস পুকুর ও খাস জমি বেদখল হয়ে গেছে তা উদ্বারে খুব দ্রুত এবং জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন প্রভাবশালীকেও ছাড় দেয়া হবেনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো.অলিউজ্জামান বলেন, আমাদের সকল বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। মহিপুরে যেসব বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে তার মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হয়ে গেছে। এখন যেসব স্থাপনা রয়েছে তা সম্পূর্ন অবৈধ। ইতোমধ্যে ৩০.১০.২০১৭ তারিখে ২৯৭ নংস্মারকের মাধ্যমে এসব উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ মোহাম্মদ শামস মোকাদ্দেস বলেন, যারা সড়ক ও জনপদের বিভাগের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ স্থাপনা তুলেছেন তাদের বিরূদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এমই/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৪১:৫৬ ● ১১৪০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ