শিংহভাগ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নাজিরপুরে বিশেষ বরাদ্দের ৪০ লাখ টাকার কাজে নামমাত্র বাস্তবায়ন

হোম পেজ » লিড নিউজ » শিংহভাগ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নাজিরপুরে বিশেষ বরাদ্দের ৪০ লাখ টাকার কাজে নামমাত্র বাস্তবায়ন
সোমবার ● ২২ ডিসেম্বর ২০২৫


 

নাজিরপুরে বিশেষ বরাদ্দের ৪০ লাখ টাকার কাজে নামমাত্র বাস্তবায়ন, শিংহভাগ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

আল-আমিন হোসাইন, সাগরকন্যা প্রতিবেদক, নাজিরপুর (পিরোজপুর)

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের বিশেষ বরাদ্দের ৪০ লাখ টাকার একাধিক প্রকল্পে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে শিংহভাগ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সি.এ মো. ইয়াসির আরাফাতের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে এসব প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র গায়েব করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশেষ বরাদ্দের ওই ৪০ লাখ টাকা তিনটি প্রকল্পে দেখানো হয়। এর মধ্যে উপজেলার একটি ডরমেটরি ভবন সংস্কারের নামে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বন্ধু শফিকুল ইসলাম শফিকের মালিকানাধীন ‘শফিক এন্টারপ্রাইজ’-এর লাইসেন্সে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে সড়ক সংস্কারের নামে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয় মো. মোজাম খানের ‘মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ’-এর লাইসেন্সে। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সংস্কারের নামে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী কাউখালী উপজেলার ‘মেসার্স আল-মাহামুদ এন্টারপ্রাইজ’-এর লাইসেন্সে, যার মালিক কাউখালী ছাত্রদলের আহ্বায়ক।

অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রকল্পে বাস্তবে উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ না করেই বিল উত্তোলনের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করলেও অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রভাবের কারণে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয় এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বির যোগসাজশে ইউএনও (ডিভিও) একাউন্ট ব্যবহার করে বিল উত্তোলন করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সি.এ ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে শুধু লাইসেন্স ব্যবহার করতে দিয়েছেন। তারা কোনো কাজ করেছেন কি না বা বিল উত্তোলন হয়েছে কি না- সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই এবং এখন পর্যন্ত তারা কোনো চেকও গ্রহণ করেননি।

আরও অভিযোগ রয়েছে, বিধি-বিধান উপেক্ষা করে এসব লাইসেন্সে আরএফকিউ দেখিয়ে চাপা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কাজ নেওয়া হয় এবং নামমাত্র পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে এসব কাজের নথিপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে গায়েব করা হয়।

সম্প্রতি উপজেলা পরিষদে অডিট টিম গেলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর কোনো ফাইল দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ সময় অডিটর নূরে আলম জানান, তদন্তে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত অর্থে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, নাজিরপুর সদরের পাকমঞ্জিল মাদরাসা ও বৈরাগী এলাকায় প্রকল্প দেখিয়ে কোনো কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন স্বাক্ষর করে প্রধান কার্যালয়ে দাখিল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলে রাব্বি বলেন, অফিসের কোনো ফাইল গায়েব হওয়ার কথা নয়। তিনি দাবি করেন, উপজেলা প্রকৌশলীর স্বাক্ষর ছাড়া তিনি কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেননি। কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিল উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানানোর কথা বলেন।

এদিকে অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যানের সি.এ মো. ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে মানসিকভাবে অসুস্থ দাবি করে এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং ফোন কেটে দেন।

বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাজিয়া শাহনাজ তমা বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন এবং এসব কাজ তার যোগদানের আগের। এ বিষয়ে তার কোনো তথ্য জানা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৫:২১ ● ৩৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ