নাজিরপুরে কচুরিপানার ডগায় আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা, রপ্তানি ২৫টি দেশে

হোম পেজ » পিরোজপুর » নাজিরপুরে কচুরিপানার ডগায় আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা, রপ্তানি ২৫টি দেশে
মঙ্গলবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫


নাজিরপুরে কচুরিপানার ডগায় আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা, রপ্তানি হচ্ছে ২৫টি দেশে

সাগরকন্যা প্রতিবেদক, নাজিরপুর(পিরোজপুর)

এক সময় অযত্নে পড়ে থাকা জলজ আগাছা কচুরিপানার ডগা এখন পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের মানুষের জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস। এই ফেলে দেওয়া উদ্ভিদ থেকেই এলাকার অনেক পরিবার নিজেদের ভাগ্য বদলে ফেলছে।

এই প্রক্রিয়াজাত কচুরিপানার ডগা দিয়ে তৈরি হস্তশিল্প সামগ্রী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, জাপানসহ অন্তত ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর মাধ্যমে এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এক নতুন সম্ভাবনাময় পণ্য হিসেবে উঠে এসেছে।

পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার নিম্নবিত্তদের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে কচুরিপানা। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা গাওখালীর সোনাপুর গ্রামের নদী আর বিলে মাইলের পর মাইল দিগন্ত বিস্তৃত কচুরি পানা সংগ্রহে কাজ করছেন স্থানীয়রা। সব বয়সের নারী-পুরুষ এমনকি শিক্ষার্থীরাও তাদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে সহযোগী পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এ কাজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল হলেই ছোট-ছোট নৌকা নিয়ে স্থানীয়রা বেড়িয়ে পড়েন কচুরিপানার ডগা  সংগ্রহে। কোন ব্যয় না হওয়ায় শুধু নামমাত্র খরচে সংগ্রহ করা হচ্ছে এগুলো। এলাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ পরিবার সংযুক্ত এ কাজে।

স্থানীয়দের কাছে এটি ‘বিনা পুঁজির ব্যবসা’ হিসেবে পরিচিত, কারণ কচুরিপানা সংগ্রহ, শুকানো এবং পরিবহন ছাড়া এখানে আর কোনো খরচ নেই।

গৃহবধূ ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরাও এই কাজের সঙ্গে জড়িত। নদী, খাল ও পুকুর থেকে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া কচুরিপানা সংগ্রহ করে রোদে শুকানো হয়। এরপর সেই শুকনো কচুরিপানার ডগা কুটির শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে পাঠানো হয় বিভিন্ন অঞ্চলে। এই কচুরিপানার ডগা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প তৈরি করেন। এর মধ্যে রয়েছে: রঙিন পাটি, টুপি, জায়নামাজ, ব্যাগ, পাপোশ, ঝাড়ু এবং অন্যান্য হস্তশিল্প।

স্থানীয় বাসিন্দা পাইকারি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান কচুরিপানার তৈরি হস্তশিল্পের বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেউলবাড়ি ইউনিয়নের সোনাপুর এলাকায় প্রতি মাসে প্রায় ১০ টন শুকনো কচুরিপানার লেনদেন হয়, যা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় হয়। প্রতি কেজি শুকনো কচুরিপানা বিক্রি হয় ৫০ টাকায়।

কচুরিপানা সংগ্রহ কাজে জড়িতরা জানান, মাঘ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ভরা মৌসুম থাকলেও এর সংগ্রহ চলে সারাবছর। কচুরিপানা সংগ্রহ করে কাটার পর প্রক্রিয়াজাত করে শুকাতে প্রায় ৫-৬ দিন লেগে যায়। এর পরে বিক্রি। প্রতি কেজি শুকনো কচুরিপানা বিক্রি হয় ৫০ টাকা দরে। ১ কেজি শুকনো পণ্য পেতে সংগ্রহ করতে হয় প্রায় আড়াই কেজি কচুরিপানা। এই সম্ভাবনাময় শিল্পটির প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্থানীয় কৃষক বলেন, “নৌকা ছাড়া এখানে কোনো রাস্তা নেই। যদি ভ্যান চলার মতো রাস্তাও থাকত, তবে আমাদের দারিদ্র্য অনেকটা কমে যেত।”

এ বিষয়ে নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাতুন নেসা জানান নাজিরপুরে দুইটি ইউনিয়ন কলার দোয়ানিয়া ও দেউলবাড়ি দুবড়া ইউনিয়ন হাওর খাল বিলে পরিপূর্ণ। এখানে সারা বছরের কচুরিপানায় পরিপূর্ণ থাকে। এখানে অনেক মানুষ কচুরিপানা ডগা কেটে শুকিয়ে ৫০ টাকা কেজি মুলে বিক্রি করে এ ব্যাপারে আমরা শুনেছি এবং আমি ওখানে গিয়ে পরিদর্শনও করেছি। এটি একটি সম্ভাবনাময়িক কার্যক্রমের অগ্রযাত্রা। কিন্তু এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে এই কচুরিপনানির্ভর শিল্প পুরো অঞ্চলের অর্থনীতিতে একটি নতুন শিল্পবিপ্লব নিয়ে আসতে পারে। এটি শুধু একটি জলজ আগাছা নয়, বরং একটি নতুন সম্ভাবনা।


এএএইচ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৫২:৫৮ ● ২২৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ