টুঙ্গিপাড়ার একরাম মোল্লার অসহায় জীবন

প্রথম পাতা » ঢাকা » টুঙ্গিপাড়ার একরাম মোল্লার অসহায় জীবন
বৃহস্পতিবার ● ২৯ আগস্ট ২০১৯


টুঙ্গিপাড়ার একরাম মোল্লার অসহায় জীবন

টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

আমার বয়সী অনেক লোকই মারা গিয়েছে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে জীবিত রেখেছেন। কিন্তু বেচে থেকেও প্রতিদিন যন্ত্রনা ভোগ করছি। দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে পার করেছি প্রায় ৭০ বছর। বাকি জীবনও হয়তো এভাবেই কাটবে। একটু ভালো থাকার আশায় চেয়ারম্যান মেম্বারদের দারস্থ হলেও কেউ কোন সাহায্য সহযোগিতা করেনি। এখন আর তাদের কাছে যেতে মন চায় না। আমাদের বাড়ির কাছে কেউ চাল পায়, কেউ ভাতা পায় কিন্তু আমি কিছু পাই না। এখন বুড়ো হাড়ে আর সয় না। আমি না থাকলে আমার পরিবারের কি হবে সেটাই ভাবি। এভাবেই তার আক্ষেপ করে কথা গুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত কাসেম মোল্লার ছেলে একরাম মোল্লা।

একরাম মোল্লা তার দারিদ্রতার কথা তুলে ধরে এ প্রতিবেদককে বলেন, দেড় মাস বয়সে আমার বাবা মারা যায়। ছোটবেলা থেকেই অনেক অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। ছেলেবেলা থেকেই অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসাবে চাষাবাদ ও বিল থেকে শাপলা উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করে তার সংসার চলে আমার । স্থানীয়দের সহযোগিতা ও ধারদেনা করে চারটি মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। নিজের ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে মেয়ে জামাইরা মিলে একটি ঘর করে দেয়। বর্তমানে অবিবাহিত দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আমার সংসার। এছাড়া আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। তাই একটু ভালো থাকার জন্য সরকারি সাহায্য সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

স্থানীয় এক মুরব্বি জানান, তিনি ও একরাম মোল্লা একই বয়সের। ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে তারা। কিন্তু তিনি বয়স্ক ভাতা পেলেও সে পায় না। এছাড়া সে কোন ভাতাই পায়না। ছোট বেলা থেকেই দেখেছি একরাম অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। কিন্তু এখন বয়সের ভারে আক্রান্ত হয়েছেন সে। এখন তার সংসার চালাতে বড্ড কষ্ট হয়। তার এখনো দুইটি মেয়ে অবিবাহিত। তাই একরাম যাতে একটু ভালো থাকতে পারে সেজন্য প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

সরজমিনে দেখা যায়, একটি নৌকায় বসে লাঠি দিয়ে নৌকাটি ঠেলে ঠেলে খালে পাট জাগ দিচ্ছেন একরাম মোল্লা। পাট আপনার কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন অন্যের পাট জাগ দিয়ে আমি কিছু টাকা পাই। আর যখন যে কাজ পাই সেটা করেই দিন যায় আমার। বয়স ৭০ এর কাছাকাছি হলেও কিন্তু ভোটার আইডি কার্ডে দেখা যায় তার বয়স প্রায় ৬৩ বছর। তখন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মূর্খ মানুষ। ভোটার আইডি কার্ড করার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। পরে জানতে পারলাম আমার প্রকৃত বয়স থেকে সেখানে অনেক কম দেয়া।

এবিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানব রঞ্জন বাছাড় বলেন, যদি ভোটার আইডি কার্ড অনুসারে তার বয়স ৬৫ বছর হয় তাহলে আমরা তাকে ভাতার আওতায় আনতে পারবো।

এব্যাপারে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাকিব হাসান তরফদার বলেন, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম সে একজন গরীব ও অসহায় ব্যাক্তি। আমাদের পক্ষ থেকে  সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে তাকে সাহায্য সহযোগিতা করার।

এসএস/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৯:০০ ● ৫০২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ