রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণ নেই: বাণিজ্য সচিব

প্রথম পাতা » জাতীয় » রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণ নেই: বাণিজ্য সচিব
বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০১৯


রমজানে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণ নেই: বাণিজ্য সচিব

চট্টগ্রাম সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

 রমজানের অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যের মজুদ যথেষ্ট, তাই দাম বাড়ার কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ওপর চাপ আছে। কোটি কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। ক্রেতারা যাতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য পায় সেটি আমাদের উদ্দেশ্য। ব্যবসায়ীরা লাভ করবে। তবে মজুদ, সিন্ডিকেট অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তখন আইনের কঠোর প্রয়োগের বিকল্প থাকে না। বিদেশে বড় দিন উপলক্ষে ছাড় দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমি অনুরোধ জানাতে এসেছি, লাভ কম করে ক্রেতাদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য দিয়ে সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন। যদি প্রয়োজন হয়, এখনো যথেষ্ট সময় আছে আরও আমদানি করতে পারেন। তিনি বলেন, দেশে খাঁটি ঘি, দুধ, সরিষার তেল ছাড়া বাজারে কিছু নেই! বাস্তবে কি পাই? ব্যবসায়ীরা বলেন, রমজানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ে। পরিবহন সমস্যা, খুচরা বিক্রেতার বেশি মুনাফা, ক্রেতারা একসঙ্গে অনেক পণ্য কেনেন। বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের এককভাবে দায়ী করা যায় না। এর পেছনে অনেক কারণ আছে। রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সরকার এবার শক্ত অবস্থান নিয়েছে। মজুদের হিসাব জানি আমরা। আত্মপ্রত্যয় নিয়ে বলতে পারি, বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব। ব্যবসায়ীরা যাতে সফল হন সে লক্ষ্যে সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। প্রধানমন্ত্রী ভোক্তাদের অধিকারের ব্যাপারে সজাগ। ভেজাল যাতে না হয়, ওজনে যেন কম না দেন। ভেজাল করা হত্যা করার সমান। ব্যবসায়ীদের ভেজালমুক্ত পণ্য ন্যায্য দামে বিক্রি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে এর বিকল্প নেই। চট্টগ্রামের মানুষকে গরুর মাংস কম খাওয়ার অনুরোধ জানান বাণিজ্য সচিব।
সভায় রমজানের প্রতিদিন জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। পচা-বাসি ইফতারি, পোড়া তেল ব্যবহার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শঙ্কর রঞ্জন সাহা বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় সভার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। জনগণকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অমরা সজাগ থাকবো। দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীলতা আমাদের নজরদারিতে থাকবে। মজুদ, কালোবাজারি সরকার বরদাশত করবে না। তথ্যকেন্দ্র চালু করবো আমরা। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন সভায় সভাপতিত্ব করেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুব্লু আলম বলেন, একসময় চট্টগ্রামের দুঃখ ছিল চাক্তাই খাল, এখন দুঃখ হচ্ছে ১৩ টন। ছোলা, মশুর ডালের দাম এবার কম। মাসের শেষ দিকে খুচরায় হু হু করে দাম বেড়ে যায়। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরদারিতে আনতে হবে। ক্যাব সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ঘি, সেমাইতে বেশি ভেজাল হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আশ্বাস রমজানের শেষ দিকে ঠিক থাকে না। তাই মনিটরিং টিম যেন নিয়মিত অভিযান চালায়। বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান এসএম আবুল বশর বলেন, চিনি, ছোলা, ডাল, আদা, রসুনের দাম গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আকস্মিক নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে। ব্যাংক সুদ, ডলারের দাম, পরিবহন ব্যয়, ভ্যাট ইত্যাদি হিসাব করে পণ্যের পাইকারি দাম নির্ধারণ করা হয়।
এক মাস আগে ৩৮০ ডলারের মশুর এখন ৪৬০ ডলার। অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মশুর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা। টনপ্রতি ছোলা ৭৮০ ডলারে কিনেছি। ৬৬-৬৭ টাকার বেশি দামে ছোলা বিক্রি হচ্ছে না খাতুনগঞ্জে। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, ভোক্তাদের এক সপ্তাহের বাজার করা উচিত। পুরো রমজান মাসের বাজার একসঙ্গে করার কোনো মানে নেই। আমাদের ভেজালের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী এসএম মহিউদ্দিন মাহিন বলেন, আমরা ষড়যন্ত্রের মুখে পড়েছি। ১৩ টনের বেশি পণ্য ট্রাকে পাঠাতে পারি না। সিলেট, রাজশাহী পণ্য পাঠাতে পারি না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছাড়া দেশের আর কোথাও ওজন স্কেল নেই। ৭৫০ ডলারের ছোলা পাইকারি বাজারে এবার ৬৫-৭০ টাকার বেশি হবে না। কাজীর দেউড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের ছোলা ৭১ টাকায় কিনে ৭৩ টাকা বিক্রি করছি। চিনি কিনছি ৪৮ টাকা। ভেজাল ঘি রোধে কমিউনিটি সেন্টারে অভিযান চালাতে হবে। ৯০০-১০০০ টাকা ঘি বাজারে। এর অর্ধেক দামে নানা নামে বিএসটিআইয়ের লোগোসহ ঘি বিক্রি হচ্ছে কীভাবে? ওষুধ ছাড়া কলা পাকতে ৭ দিন লাগে। চিংড়িতে জেলি মেশানো হচ্ছে। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান বলেন, রমজানের রাতে মা-বোনদের নির্বিঘেœ চলাচল নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে। কামাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি মো. খালেদ খান চৌধুরী বলেন, বাজারে ভেজাল ঘি’র ছড়াছড়ি। পিরানহা, রং দেওয়া মাছ, হাইড্রোজ দেওয়া জিলাপি বিক্রি হচ্ছে বাজারে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৭:০১ ● ৪৪৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ