কলাপাড়ায় যুবদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ!

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » কলাপাড়ায় যুবদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ!
বুধবার ● ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩


কলাপাড়ায় যুবদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ!

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মাকসুদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সাধারন মানুষ। তাকে চাঁদা না দিয়ে ব্যবসা করতে পারছে না কোন ব্যবসায়ী। দোকান থেকে পন্য নিয়ে টাকা না দেয়া, নিজ হাতে দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া, নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী নিয়ে রাতভর আড্ডা দেয়া, রাতে ব্যবসায়ীদের দোকানের পন্য চুরি ও ছিনতাইসহ একাধীক অভিযোগ রয়েছে এই যুবদল নেতা মাকসুদের বিরুদ্ধে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। ভয়ে মুখ খুলছে না অনেকেই। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরাও নিরবে সহ্য করছে তার অত্যাচার। অথচ একজন উপজেলা যুবদল নেতা কিভাবে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজী করার সাহস পায় সে প্রশ্ন এখন স্থানীয় সকলের মুখে মুখে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা এমদাদুল ইসলাম কাবুল মজুমদারের ছেলে মাকসুদ মজুমদার। বিএনপি’র সময়কালে সরকারী মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের এজিএস ছিলেন তিনি। তৎকালীন সময়ে ভাগিনা ক্যাডার মাকসুদ হিসাবে পরিচিত ছিলো তার। সেসময় শুধু সাধারন মানুষের উপর অত্যাচার করেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি। নিজ পরিবারের সদস্যদের উপরেও নির্যাতন চালান মাকসুদ। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তার মামা পা ভেঙ্গে দেয় মাকসুদের। এরপর কিছুদিন শান্ত ছিলেন তিনি। স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়েছিলো এলাকাবাসী। আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে উপজেলা যুবদলের ক্যাডার মাকসুদ। অসহায় মানুষ ও ব্যবসায়ীদের উপর চালাচ্ছে তার চাঁদাবাজীর হুলিয়া। তার আপন ছোট ভাই বিজন মজুমদার ও স্থানীয় বাসিন্দা মঙ্গল চন্দ্র হাওলাদারের পুত্র বিজন হাওলাদরসহ একাধিক সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে একচ্ছত্র আদিপত্ত বিস্তার করেছে স্থানীয় সলিমপুর বাজারসহ ইউনিয়নের একাধিক এলাকায়। তাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র থাকায় সর্বক্ষন আতংক ও ভীত হয়ে থাকে সাধারন মানুষ। প্রকাশ্যে চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানী করছে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সাধারন মানুষদের। পেট্রলের দোকান থেকে নিজ হাতে পেট্রল নিয়ে টাকা না দেয়া, দোকান থেকে বাকী নিয়ে টাকা না দেয়া, জোড় করে ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ একাধিক কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে মাকসুদ। পাওনা টাকা চাইতে গেলে তার উপর চলে নানা ধরনের নির্যাতন। কেহ মুখ খুললে তার উপর চলে অমানুবিক অত্যাচার। এমনকি রাতের অন্ধকারে দোকানের মালামাল আত্মসাৎ করে মুখ বন্ধ করতে বাধ্য করেন ব্যবসায়ীদের। সোমবার দুপুরে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছে তার দাবীকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ওই ব্যবসায়ীর উপর অত্যাচার ও হামলার ভিডিও ফুটেজ মোবাইলে রেকর্ড হলে বিষয়টি সকলের নজরে আসে। নির্যাতিত ওই ব্যবসায়ী হারুন বলেন, দুইদিন আগে আমার দোকানের ক্যাশ বাক্সে হাত দিয়ে টাকা নিলে আমি প্রতিবাদ জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয় মাকসুদ। ঘটনার দিন আমি স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। এসময় মাকসুদ এসে আমার কাছে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন। আমি তা দিতে অস্বিকার করলে আমাকে মারধরসহ ওই দোকানে ভাঙ্গচুর করেন। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমার উপর হামলার চেষ্টা চালায়। জীবনের ভয়ে দোকানের পিছন দিয়ে পাশের একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে ৯৯৯ এ কল করে কলাপাড়া থানা পুলিশের সাহায্য কামনা করি। পরে পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। তিনি আরোও বলেন, এই মাকসুদ সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। তার কাছে এলাকার প্রতিটি ব্যবসায়ী জিম্মি হয়ে পরেছে। কেহ মুখ খুললে তার উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালায় মাকসুদ। আমি নিজেও এখন শংকায় রয়েছি। আবারও যে কোন সময় তার উপর হামলা চালাতে পারে বলে মনে করছেন নির্যাতিত ব্যবসায়ী হারুন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধীক ব্যবসায়ী বলেন, সন্ত্রাসী মাকসুদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পরেছি।
অভিযুক্ত উপজেলা যুবদলের নেতা মাকসুদ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এগুলো সব ষড়যন্ত্র। আমি একজন ব্যবসায়ী। ওই বাজারে আমার তৈল ও ফ্লাক্সির দোকান রয়েছে। এছাড়া আমার ডিশ ব্যবসাও রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, দোকান ঘড় ভাংচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। শালিস বৈঠকে তা মিমাংসা করার কথা ছিলো কিন্তু অভিযুক্ত মাকসুদ মজুমদার সেখানে আসেনি। তাই আমি নির্যাতিত ওই ব্যবসায়ীকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি।
এবিষয়ে কলাপাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম বলেন, ৯৯৯ এ কল করলে তাৎক্ষনিক পুলিশ সদস্য পাঠিয়ে তাকে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে এবিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে, অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসকেআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:০১:২০ ● ১৩২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ