গলাচিপায় দাদনের ফাঁদে জিম্মি জেলেরা

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » গলাচিপায় দাদনের ফাঁদে জিম্মি জেলেরা
সোমবার ● ১০ আগস্ট ২০২০


গলাচিপায় দাদনের ফাঁদে জিম্মি জেলেরা

গলাচিপা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

পটুয়াখালীর গলাচিপায় দাদনের ফাঁদে আটকে পড়েছে উপজেলার জেলেরা। মৎস্য সম্পদ আহরনের কাজে নিয়োজিত মানুষগুলোর হাড্ডিসার দেহ দেখে বিশ্বাস হবে না, এরাই প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা তুলে আনে ডাঙ্গায়। ঝড়ঝঞ্জা প্রচন্ডশীত উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে গভীর সমূদ্রে ছুটে যায়। তাদের এ শ্রমের ফলে কোটি টাকার মালিক হচ্ছে আড়তদার, দাদন দার আর মহাজনরা। লালখাতার মারপ্যাঁচে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয় ঐসব জেলেরা। উপজেলার প্রায় ২২শতাংশ লোক মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত। ব্যাপক ভাবে চাহিদা বৃদ্ধি, জনসংখ্যার উর্ধগতি, নদী ভাঙ্গনে ফসলি জমি বিলীন, বেকারত্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্যে বর্তমানে শুধু জেলে নয় অন্যসব সম্প্রদায়ের লোকেরা মাছ ধরছে। মোট অমিষের ৫ভাগের ৪ভাগই আসে মাছ থেকে। আর মৃত্যুকে তুচ্ছ ভেবে যারা আমিষের যোগান দিচ্ছে তারা অপুষ্টি, নিরক্ষরতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতায় ভুগছে। মাছধরা থেকে পুর্নাঙ্গ ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়ায় ঠকছে জেলে সম্প্রদায়। দাদনের ফাঁদশৃঙ্খলে বন্ধি তারা প্রতি বছর কোটি টাকার মাছ ধওে মহাজনদের আড়তে জমা দিয়েও ৪/৫ হাজার টাকার দাদনের দায় থেকে নিস্কৃতি পায় না। নদী উপকূলে কয়েকটি মৎস্য আড়ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক একটি আড়তে দুই থেকে ১০ জনের অংশিদার থাকে। এছাড়া ম্যানেজার, হকার ও মাছ মাপার জন্য থাকে ৫/৭ জনকর্মী। কার্তিক মাস থেকে জেলেরা বৈশাখ মাস পর্যন্ত জাল, নৌকা ও টাকার জন্য ঋন নিতে হয় জ্যৈষ্ঠ থেকে ইলিশ মৌসুম শুরু হয়ে চলে আশ্বিন পর্যন্ত। সকাল বিকাল দুবার জেলেদের জাল তুলতে হয়। দু বারই তীরে দারিয়ে থাকে আড়তের হকাররা। এসব মাছ নিয়ে যায় আড়তে। আড়তদাররা গ্রেড অনুযায়ী মাছ বিক্রি করলেও জেলেদের মাছ গ্রহন করে কেজির মাপে। সপ্তাহ অনুযায়ী দর কাটা হয়। সপ্তাহের নিম্ন দরে হিসাব হয় জেলেদের সাথে। ইচ্ছে থাকলেও নগদ এবং বেশি দামে মাছ বিক্রি করতে পাওে না তারা। রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিচারের নামে প্রহসন। প্রতি মনে ২কেজি আড়তের ফ্রি দিতে হয়। এটাই নিয়ম! চোখের সামনে অড়তদার ও দাদনদাররা উপজেলা ও জেলা সদরগুলোর আড়তে প্রতি কেজি ৫০/৬০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে। প্রতি বছর আড়তদাররা লাখ লাখ টাকা লাভ করে থকে। নতুন আঙ্গিকে সাজায় আড়ৎ আর ক্যাশ বাক্স।  মৌসুমে শেষে হিসাব কষে দেখা যায় আড়তদার প্রতি জেলের কাছে ৪/১০হাজার পায়। আবার শুরু হয় দেনা, শুরু হয় দাদন। আড়তদার আর সরকারের সুদৃষ্টি যাদের উপর পড়ে তাদের ভাগ্য ফেরে শুধু ওদেও ভাগ্য ফেরেনা। আড়ৎ গুলোর মালিকদের মঝে সারা বছর প্রভাব বিস্তারের দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। কিন্তু ব্যবসার জন্য তাদের রয়েছে সিন্ডিকেট। মাছের দর নির্ধারণ কওে সিন্ডিকেট এর নেতৃবৃন্দ। সাগর ও নদীতে মাছ ধরা পড়ার ওপর নির্ভর করে দাম। মাছ যত বেশি ধরা পড়ে দাম ততো কমে যাবে। কেজি প্রতি কেউ ৫টাকা দাম বাড়ালে সিন্ডেকেটের নেতৃবৃন্দ তাকে প্রতিহত করে এবং মাছের দাম কমাতে বাধ্য করে। জেলেরা জানতে চাইলে শিক্ষাজ্ঞানহীন জেলেদের লাল খাতার হিসাব দেখায়। জেলেরাও লাল খাতার হিসাব উপেক্ষা করতে পারেনা। কারন তাদের পূর্ব পুরুষ থেকেই এই লাল খাতার সম্মান দেখায় ধর্মীও অনুভুতিতে বিশ্বাস করে।

এসডি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:২৫:৫৬ ● ৭৫৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ