আমতলী মাদ্রাসা কেন্দ্রে নকলের ছড়াছড়ি, পোড়ালেন ইউএনও

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলী মাদ্রাসা কেন্দ্রে নকলের ছড়াছড়ি, পোড়ালেন ইউএনও
বৃহস্পতিবার ● ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


---

আমতলী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী সরকারী কলেজের মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলের ছড়াছড়িতে পরিনত হয়েছে। কেন্দ্র প্রশাসনিক কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপার ভাইজার মোঃ গোলাম মাহমুদ সেলিম ও কেন্দ্রে সচিব ঘটখালী আমিনুদ্দিন বালিকা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুস ছালামের সহযোগীতায় চলছে এ নকলের ছড়াছড়ি। বৃহস্পতিবার গণিত বিষয়ের পরীক্ষায় গণিতের শিক্ষকদের কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র সচিব। বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন কেন্দ্র পরিদর্শন করে নকল কপি উদ্ধার করেছেন। ওই নকল কপি পরীক্ষা কেন্দ্র প্রাঙ্গণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি পুড়িয়ে ফেলেছেন। নকলের অপরাধে এক ছাত্রকে বহিস্কার ও গনিত বিষয়ের তিন শিক্ষককে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। সরকারী আইন অমান্য করায় দুই অভিভাবককে অর্থদন্ড করা হয়েছে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার মাদ্রাসা কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষায় এ বছর ৫’শ ৬২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। মাদ্রাসার পরীক্ষা আমতলী সরকারী কলেজ কেন্দ্রে চলছে। পরীক্ষা শুরু থেকেই ওই কেন্দ্রে প্রশাসনিক কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপার ভাইজার মোঃ গোলাম মাহমুদ সেলিম ও কেন্দ্র সচিব মাওলানা আবদুস ছালামের সহযোগীতায় নকলের ছড়াছড়িতে পরীক্ষা চলছে। বৃহস্পতিবার ওই কেন্দ্রে গণিত পরীক্ষা চলছিল। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন কেন্দ্র পরিদর্শন করে নকল কপি (গণিত বইয়ের পাতা) উদ্ধার করেছেন। ওই নকলের কপি উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে ফেলেছেন। এদিকে গণিত বিষয়ের পরীক্ষায় গণিতের শিক্ষকদের কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব দিয়ে পরীক্ষা পরিচালনা করছিল প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র সচিব। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন কেন্দ্র পরিদর্শন কালে শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামান, সাকিব হোসেন, দেলোয়ার হোসেন নামের তিন শিক্ষককে কেন্দ্র থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। অপর দিকে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য আমিন উদ্দিন বালিকা আলিম মাদ্রাসার গণিত বিষয়ের শিক্ষক মোঃ মাহবুবুল আলম সাগরকে কেন্দ্র কম্পিউটার ডাটা অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই শিক্ষক গণিত বিষয়ের পরীক্ষায় অফিস কক্ষে বসে গনিত প্রশ্ন সমাধান করে কক্ষে সরবরাহ করছেন এমন অভিযোগ অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষকদের। গনিত পরীক্ষায় নকলের অপরাধে পশ্চিম চিলা ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী রাকিবুল ইসলামকে (২৫৭৯১৬) বহিস্কার ও একই মাদ্রাসার দুই অভিভাবক আবুল হাসান ও নুরুজ্জামানকে সরকারী আইন অমান্য করে কেন্দ্রে প্রবেশ করায় ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক মোঃ সরোয়ার হোসেন প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে অর্থদন্ড করেছেন। গত মঙ্গলবার আকাইদ ও ফিকাহ বিষয়ের পরীক্ষায় নকল করার অপরাধে উত্তর পশ্চিম টিয়াখালী দাখিল মাদ্রাসার মোঃ সাইফুল পরীক্ষার্থীকে (২৫৮৪১৫) ও নকলে সহায়তার জন্য ঘোপখালী আল আমিন দাখিল মাদ্রাসার শাহ আলম নামের এক শিক্ষককে বহিস্কার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র সচিব যোগসাজসে পরীক্ষায় নকলে সুযোগের জন্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঠান্ডা ফি আদায় করেছেন।
উত্তর টিয়াখালী দাখিল মাদ্রাসার জীব বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আমাকে পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন কিন্তু কক্ষে আরো গণিত বিষয়ের শিক্ষক রয়েছে তাদেরকেও অব্যাহতি দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, অফিস কক্ষে বসে গনিত শিক্ষকরা  গনিত প্রশ্ন সমাধান করে দিচ্ছেন তাদেরকেও ধরতে হবে।
কেন্দ্র সচিব ঘটখালী আমিন উদ্দিন বালিকা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা  আবদুস ছালাম নকলের ছড়াছড়ি ও গণিত প্রশ্ন সমাধানের কথা অস্বীকার করে বলেন, ইউএনও মোঃ সরোয়ার হোসেন কেন্দ্র পরিদর্শন করে তিন শিক্ষককে কক্ষ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন এক ছাত্রকে বহিস্কার করেছেন।
পরীক্ষা কেন্দ্র প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মাহমুদ সেলিম নকল ও গণিত শিক্ষক কক্ষে পরিদর্শকের দায়িত্ব দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন পরীক্ষা ভালো ভাবেই চলছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্র পরিদর্শন কালে কক্ষের পাশ থেকে নকলের কপি (বইয়ের ছেড়া পাতা) উদ্ধার করে পুড়িয়ে ফেলেছি। তিনি আরো বলেন, তিন শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়েছি এবং দুই অভিভাবককে অর্থদন্ড করা হয়েছে।


এইচকেএ/এনইউবি

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৬:৪৩ ● ৭০৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ