
মো. মহসীন খান
ডিসেম্বর বাঙালির জীবনে অহংকারের মাস। দিকে দিকে উড়তে থাকে বিজয়ের পতাকা। এটি মহান বিজয়ের মাস। এই মাসেই একে একে শত্রুকবলিত বাংলার গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দর মুক্ত হতে থাকে। প্রতিদিন নতুন নতুন মুক্ত এলাকায় উড়তে থাকে স্বাধীনতার পতাকা। ডিসেম্বর মানেই বাঙালির বিজয়, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের পরাজয়ের মাস।
আজ ১৫ ডিসেম্বর, সোমবার। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি এসে দাঁড়ায় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। একাত্তরের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মরণপণ যুদ্ধ করে দেশের অধিকাংশ এলাকা শত্রুমুক্ত করেন এবং সর্বত্র উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। নিশ্চিত পরাজয় জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কেবল আত্মসমর্পণের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা যুদ্ধবাজ শাসকগোষ্ঠী তখন তাদের পরাজয় মেনে নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। পাক বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজি মিত্রবাহিনীর কাছে বিমান হামলা স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান। তার সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত মিত্রবাহিনী বিমান হামলা স্থগিত রাখে।
এই দিনেই বিজয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্ত উদযাপনের যাবতীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে মুক্তিবাহিনী ও সাধারণ মানুষ। আন্তর্জাতিক চাপ, গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী নিধন- কোনো কিছুই পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের পরাজয় ঠেকাতে পারেনি।
১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যার আগে মিত্রবাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব, উত্তর-পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে ঢাকাকে মুক্ত করতে অগ্রসর হয়। তারা ঢাকার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। ঢাকাকে মুক্ত করার মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে গোটা জাতি।
জেনারেল নিয়াজির আর কোনো পথ খোলা ছিল না- হাল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া। কারণ বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসরমান মার্কিন সপ্তম নৌবহরের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় ভারত মহাসাগরে ২০টি সোভিয়েত রণতরী প্রবেশের খবর আর গোপন থাকেনি। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ ভরসার জায়গাটিও ভেঙে পড়ে।
চলবে…
লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক