
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য বন্দর পটুয়াখালীর আলীপুর-মহিপুরে জাটকা ইলিশে সয়লাব বাজার। প্রতিদিন গড়ে অর্ধকোটি টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে এখানে। অথচ সরকার ঘোষিত ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত জাটকা শিকারে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা কার্যত কাগজেই সীমিত, এমন মন্তব্য ছিল স্থানীেদের।
সরেজমিনে শুক্রবার সকালে দেখা গেছে, বন্দরের প্রায় সব আড়ৎয়ে জাটকা ইলিশের স্তূপ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে ক্রয়-বিক্রয়। প্রশাসনের উপস্থিতি কেবল মহাসড়ক পর্যন্ত সীমিত।
গত পাঁচ দিনে কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ, নিজামপুর কোস্টগার্ড ও উপজেলা প্রশাসন কয়েকটি অভিযানে কিছু জাটকা জব্দ করেছে। তবে সেগুলো মূলত পরিবহন ও মহাসড়ককেন্দ্রিক ছিল। পরে জব্দকৃত মাছ বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদরাসায় বিতরণ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আড়ৎ শ্রমিক জানান, প্রতিদিন বন্দরে শত শত মণ জাটকা বিক্রি হয়। কোস্টগার্ড শুধু ক্যাম্পের সামনে মহাসড়কে দু-একটা ট্রাক থামায়, কিন্তু বন্দরের ভেতরে ঢোকে না।
আলীপুরের জেলে শাহে আলম (ছদ্মনাম) বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে জাটকা ধরি। সাগরে এখন বড় ইলিশ নেই, জাল ফেললেই ছোট জাটকা আসে। এগুলো না ধরলে ঘরের চুলা জ্বালবে না।
আরেক জেলে খবির ঘরামি বলেন, সরকার যদি বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতো, আমরা জাটকা ধরতাম না। কিন্তু এনজিওর কিস্তি আর সংসারের খরচ মেটাতে এখন জাটকাই ভরসা।
স্থানীয় আড়ৎদার কাওসার বলেন, জাটকা ধরা বা বিক্রির দায় শুধু জেলেদের নয়। বাজারে চাহিদা আছে, ক্রেতারা কিনতে আসে। প্রশাসন অভিযান করলেও সব জায়গা কভার করা সম্ভব হয় না।
এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা সড়কে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণে ছিলেন, তাই বন্দরে অভিযান সম্ভব হয়নি। আগামীকাল শনিবার থেকে বন্দরে অভিযান শুরু হবে।
কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসিন সাদেক বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি জাটকা বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। জব্দকৃত মাছ এতিমখানা ও মাদরাসায় বিতরণ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, শুধু মহাসড়কে নয়, মূল বন্দর এলাকাতেও নিয়মিত অভিযান না চালালে সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার সুফল পাওয়া যাবে না।