
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, দুমকি (পটুয়াখালী)
পটুয়াখালীর দুমকিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। ল্যাবরেটরি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে হাতে-কলমে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোথাও কিছু যন্ত্র থাকলেও তা অব্যবহৃত থেকে মরিচায় নষ্ট হয়ে গেছে।
পরীক্ষার শিডিউলে ব্যবহারিক অংশ থাকলেও বাস্তবে ল্যাব ব্যবহার না করে শুধু খাতা জমার ওপর ভিত্তি করে নম্বর দেওয়া হয়। দুই দশক ধরে পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় এবং বিজ্ঞান শিক্ষকদের ‘ভূরিভোজ আয়োজনের’ অভিযোগও রয়েছে।
পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব থাকলেও আইসিটি শিক্ষার্থীরা বাস্তবে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারছে না। শিক্ষক ও প্রধানদের অবহেলায় এই সংকট আরও গভীর হয়েছে বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ। তাদের মতে, সঠিক ব্যবহারিক শিক্ষা ছাড়া বিজ্ঞানে দক্ষ জনশক্তি তৈরি সম্ভব নয়। দ্রুত ল্যাব সংস্কার ও হাতে-কলমে শিক্ষা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুমকিতে ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৮টি কলেজ ও ১৫টি মাদ্রাসায় বিজ্ঞান শাখা রয়েছে। দুমকি একে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নামেমাত্র বিজ্ঞানাগার থাকলেও তা তালাবদ্ধ,ময়লা-আবর্জনায় একাকার। দু‘চারমাসে ব্যবহৃত হয়েছে বলে মনে হয় না। যদিও বিজ্ঞান শিক্ষকের দাবি ব্যবহারিক ক্লাশ মাঝে মধ্যে নেয়া হয়ে। তবে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানাগেল গত ৬মাসেও ব্যবহারিক ক্লাশ হয়নি। দুমকি নাসিমা কেরামত আলী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রহিমা বেগম অকপটে স্বীকার করেন, শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে বিজ্ঞানাগারেই সাধারন ক্লাশ হয়। বিদ্যুৎ সংকট, বেসিন নেই, ফলে ব্যবহারিক ক্লাশ করানো যাচ্ছে না। সৃজনী বিদ্যানিকেতন এবং সরকারি জনতা কলেজের অবস্থাও অনুরূপ। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দাবি-মাঝে মধ্যে ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়া হয়। বাকিগুলোর অধিকাংশে গত ২০ বছরে নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস হয়নি।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সাতানী আমির উদ্দীন স্মৃতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল জব্বার বলেন, রুটিনে ব্যবহারিক ক্লাস রাখা আছে, কিন্তু যন্ত্রপাতির অভাবে নিয়মিত নেওয়া যায় না। সরকারি জনতা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শহিদুল ইসলামও বলেন, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ল্যাব নেই বা যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে।
সরেজমিনে উত্তর শ্রীরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চরবয়েড়া মা/বি, জয়গুননেছা মা/বি, সালামপুর আমিনিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় একই চিত্র দেখা গেছে। নবম থেকে একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও জানিয়েছেন, তারা নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস পাচ্ছেন না।
দুমকি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম সফিকুল ইসলাম বলেন,
যখন পরিদর্শনে যাই, তখন ল্যাবগুলো গুছিয়ে রাখা হয়, পরে আবার একই অবস্থা হয়। একা মানুষ হওয়ায় সব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। সরকার থেকে যে যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে, অনেক জায়গায় সেগুলো খুলেও দেখা হয় না। এই সমস্যা শুধু দুমকিতে নয়, সারাদেশেই বিদ্যমান। তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারিক শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো. এজাজুল হক বলেন, বিষয়টি আমি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে।
এমআর