
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, ছাতক (সুনামগঞ্জ)
সুনামগঞ্জের ছাতকে দীর্ঘদিন ধরে চলা ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও সিন্ডিকেট-নিয়ন্ত্রিত লুটপাটের অভিযোগের মুখে বিতর্কিত স্থানীয় সরবরাহ কর্মকর্তা (এলএসডি) সুলতানা পারভীনকে শেষ পর্যন্ত বদলি করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) খাদ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সংস্থাপন) মো. মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। তবে, সচেতন মহলের দাবি শুধু বদলি নয়, সুলতানা পারভীন ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এখানে কেবল একজনকে সরিয়ে দায়মুক্তি হচ্ছে, নাকি বড় দুর্নীতির গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে অদৃশ্য সুরক্ষায়?
সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে ভয়াবহ অনিয়ম চালিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে সরকারি গুদামে ধান বিক্রির সুযোগ করে দিতেন এবং প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করতেন। এতে অর্ধকোটি টাকার বেশি সরকারি অর্থ লোপাট হয়েছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ২৪ জুন স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি বহাল তবিয়তেই কর্মরত ছিলেন।
গোপন সূত্র জানায়, বদলি ঠেকাতে সুলতানা পারভীন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্তরে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। চেষ্টা করা হয় মিডিয়াকে প্রভাবিত করতেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির তথ্য, গণমাধ্যমের চাপ ও জনমতের কারণে বদলির সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
এদিকে, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পিনাক পাণি ভট্টাচার্যের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এলএসডির কার্যক্রমের ওপর যার সরাসরি নজরদারির দায়িত্ব, তার জ্ঞাতসারে এমন দুর্নীতি কীভাবে সম্ভব? তিনি দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করেছেন অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে চোখ বন্ধ রেখেছেন।
এ বিষয়ে পিনাক পাণি ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক দপ্তরে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ রয়েছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অগোচরে এসব অনিয়ম দূর্নীতি ঘটে। এখানে যারা ঘুষ বা দুর্নীতি করেছেন, তারা তাদের ফায়দা হাসিলের জন্য ঘুষ দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তারা কখনো বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাবে না। এরকম কোনও তথ্য আমাদের কাছে আসেনি।। তিনি আরও বলেন, ঘুষ দেওয়া এবং নেওয়া দুটোই সমান অপরাধ। আমি যথেষ্ট তদারকি করেছি, এরপরও যদি কিছু ঘটে থাকে, তাহলে এটা আমার ব্যাড লাক বা ব্যর্থতা এটাই বাস্তবতা।
ধান সংগ্রহ ক্ষেত্রে কৃষি কার্ড ও কৃষি প্রত্যয়ন সংক্রান্ত রেজুলেশন প্রসঙ্গে তিনি জানান, এটি জাতীয় সিদ্ধান্ত না জাতীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন কৃষক যাতে সহজে ধান বিক্রি করতে পারে আর রেজুলেশনে বলা হয়েছে, কৃষি কার্ডধারী এবং কৃষি প্রত্যয়নধারীদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে। ২০২৪ সাল থেকে ধান সংগ্রহ নীতিমালা করা হয়েছে যে, শুধু এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে কৃষকরাদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা যাবে। এখানে কোন ধরনের পত্যয়নের কথা উল্লেখ করা হয় নাই। ২০১৩ সাল থেকে কৃষি অফিস নতুন করে কৃষি কার্ড ইস্যু করছে না। তাই অনেক প্রকৃত কৃষক কার্ড না পাওয়ায় ধান বিক্রির সুযোগ পাননি। আমরা প্রথমে কার্ড অনুযায়ী সংগ্রহ করেছি, পরে ইউএনও স্যারের নির্দেশে প্রত্যয়ন সংগ্রহ করা হয়েছে।
এব্যপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. হুমায়ূন কবির এলএসডি সুলতানা পারভীনের বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রশাসনিক কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে। তবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।
এএমএল/এমআর