জনগণকে পদে পদে মৃত্যুর ফাঁদে ঠেলে দিয়েছে সরকার: রিজভী

প্রথম পাতা » রাজনীতি » জনগণকে পদে পদে মৃত্যুর ফাঁদে ঠেলে দিয়েছে সরকার: রিজভী
শনিবার ● ৩ আগস্ট ২০১৯


জনগণকে পদে পদে মৃত্যুর ফাঁদে ঠেলে দিয়েছে সরকার: রিজভী

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

বিএনপির জেষ্ঠ্য যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এ অকার্যকর সরকার দেশের সাধারণ জনগণকে পদে পদে মৃত্যুর ফাঁদে ঠেলে দিয়েছে।
শনিবার (৩ আগস্ট) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। তাতে অংশ নিয়ে মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্যে এসব কথা বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, এ অকার্যকর সরকার দেশের সাধারণ জনগণকে পদে পদে মৃত্যুর ফাঁদে ঠেলে দিয়েছে। দেশের জনগণ বন্যা, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু, ভেজাল খাদ্য, বিনা কারণে গণপিটুনি, আগুনে পুড়ে মৃত্যু, প্রকাশ্য দিবালোকে গলাকেটে মৃত্যু, নৃশংস ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যু এবং ক্রসফায়ারে গুলি খেয়ে মৃত্যুসহ নানা মৃত্যুফাঁদে নিপতিত। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতে ভোট চুরির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়ে বর্তমান সরকার দেশে বর্বর, বন্য শাসন জারি রেখেছে। একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জনগণের বেঁচে থাকার অধিকারসহ নূন্যতম নাগরিক অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে সরকার। মনে হচ্ছে আমরা এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার স্বেচ্ছাচারী জনপদে বসবাস করছি। যেখানে কারো কথা বলার স্বাধীনতা নেই, সরকারের সমালোচনা করার অধিকার নেই, গুম কিংবা বিনা বিচারে হত্যা নিত্যদিনের ঘটনা।
রিজভী আরো বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের মানুষের প্রাণহানি ঘটছে, অথচ সরকার প্রধান দেশের বাইরে। মানুষ বলছে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ ক্রয়ের নামে সরকারের মন্ত্রী ও মেয়ররা জনগণের সঙ্গে নিষ্ঠুর তামাশা শুরু করেছেন। তামাশা বন্ধ করুন, জনগণকে নিয়ে পরিহাস বন্ধ করুন। বিএনপির চেয়ারপারসনের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার ভয়াবহ অসুস্থতার পরও এই সরকার অমানুষের মতো আচরণ করছে। তাঁর পছন্দমতো চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেওয়া হচ্ছে না। ৭৪ বছর বয়সী ও শারীরিকভাবে চরম অসুস্থ একজন নারী, আইনের গতিতেই মামলায় যাঁর স্বাভাবিক জামিন পাওয়ার কথা, কিন্তু সরকার তাঁর জামিনে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। তাঁর জামিনের তারিখ নিয়ে টালবাহানা করা হয়। বিচার বিভাগও সরকারের হুকুম তামিলে ব্যস্ত। এহেন কোনো কাজ নেই যে, এই সরকার তাঁর মামলায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে না। এমন হিং¯্র আচরণের উদাহরণ পৃথিবীতে বিরল। রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, সরকারের এসব কর্মকা-ে জনগণের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, শেখ হাসিনা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি রেখে হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করছেন। আমি অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির জন্য আবারও জোর দাবি করছি।
রিজভী বলেন, আজকে বিচার বিভাগকে করায়াত্ত করা হয়েছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগকে দিয়ে যেমন প্রশাসন সাজানো হয়েছে, তেমনি নানাভাবেই তারা (সরকার) এদেরকে ঢোকাচ্ছে। উচ্চ আদালতে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সবার আশা-ভরসার স্থল হচ্ছে উচ্চতর আদালত। সেই আদালতে যে রায় দেন দেশনেত্রীর জামিনের ব্যাপারে, গোটা জাতি হতবাক হয়েছে, হতাশ হয়েছে। আমরা যাব কোথায়? আমাদের আশ্রয়ের জায়গা কোথায়? কারণ রাস্তায় দাঁড়ালে যুবলীগ-ছাত্রলীগ, যদি গলির মধ্যে যাই, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাহলে আমাদের যাওয়ার জায়গা কোথায় আছে? আমরা একটা উপন্যাসে পড়েছিলাম, এক দিকে সমুদ্র, আরেক দিকে শয়তান, যাবে কোথায়? আজকে বাংলাদেশ ঠিক সেইরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে আছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি কি বাকশাল? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি কি একদলীয় শাসন? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তি কি এক ব্যক্তির শাসন? রিজভী বলেন, ডেঙ্গু হচ্ছে, এটা মোকাবেলার খবর নাই। সবাই বলছে, তার যাতে ডেঙ্গু না হয় প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে অবস্থান করছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। নিজেরা বাঁচবেন, জনগণ মরুক ডেঙ্গুতে, বন্যায় ভেসে যাক, কোনো পরোয়া নেই প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের। কারণ তারা তো দিনের আলোয় ভোটে নির্বাচিত নয়, তাদেরকে রাতের অন্ধকারের নির্বাচনে জিততে হয়। এই ধরনের সরকারের জনগণের প্রতি দায়িত্ব থাকবে কেন? নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন রিজভী।
মিছিলটি কাকরাইলে নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত গিয়ে আবার কার্যালয়ে ফিরে আসে। এই মিছিলে রিজভী ছাড়াও ছিলেন বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মো. আবু জাফর, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতারা।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৫:১৯ ● ৩৫৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ