আগৈলঝাড়ায় গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনায় ৮ লক্ষাধিক গ্রাহক

প্রথম পাতা » বরিশাল » আগৈলঝাড়ায় গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনায় ৮ লক্ষাধিক গ্রাহক
বুধবার ● ৮ মে ২০১৯


---

অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে॥
ঘুর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা আর প্রতারণার শিকার হয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসনসহ উপজেলার ৮ লক্ষাধিক গ্রাহক। নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনায় পরে ঘুর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় গঠিত উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ সরকারী পদস্থ কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ পদে পদে কাস্টমার কেয়ারের সেবা নিতেও চরম হয়রানির শিকারের অভিযোগ করেছেন গ্রামীণফোনের গ্রাহকরা। এই অপারেটরের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গ্রাহক প্রতারণা ও নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা দূর করে সেবার মান বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনসহ বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।
বিক্ষুব্ধ গ্রাহক আগৈলঝাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত জানান, টু-জি থেকে থ্রি-জি নেটওয়ার্ক ঘোষণার পরেই আগৈলঝাড়ায় গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা শুরু হয়। এই কোম্পানী সরকারের কাছ থেকে থ্রি-জি কিনে উচ্চমূল্যে গ্রাহকদের কাছে এমবি ও এয়ারটাইম বিক্রি করলেও পূর্বের টু-জি নেটওয়ার্কের গতিও পাচ্ছেনা এই উপজেলার গ্রামীণফোনের গ্রাহকেরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস জানান, নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার সাথে নতুন মাত্রায় গ্রামীণফোন অপারেটরে যোগ হয়েছে ‘বিদ্যুৎ বন্ধের সাথে সাথে নেটওয়ার্ক বন্ধ’।
উপজেলা সদরে স্থাপিত গ্রামীণফোনের টাওয়ারে অটো জেনারেটর চালু না থাকায় বিদ্যুৎ বন্ধের সাথে সাথে পুরো উপজেলা সদর এলাকার নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি। ফলে গ্রামীণফোন অপারেটর ব্যবহারকারী গ্রাহকদের সাথে ফোন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। নেটওয়ার্ক বন্ধ হবার কারণে সরকারী জরুরী সেবার আওতায় থাকা উপজেলা পরিষদ, থানা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্টানের তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, সাধারণ জনগণের সেবা ও তথ্য আদান প্রদান স্থবির হয়ে পরে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ দাস আরও বলেন, ঘুর্ণিঝড় ‘ফনি’ মোকাবেলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি গ্রহণের পরে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে গত শুক্রবার (৩ মে) মধ্য রাত থেকে শনিবার (৪ মে)  সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার সকল এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধের সাথে সাথে উপজেলার সরকারী দপ্তরসহ গ্রামীণফোন ব্যবহারকারী কয়েক লাখ গ্রাহক নেটওয়ার্ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ‘ফনি’ মোকাবেলায় সরকারের খোলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষর সাথে জেলা ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। একইভাবে জিপি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারী গ্রাহকেরা একে অপরের সাথে ‘ফনি’র ছোবলের সর্বশেষ খবর আদান প্রদানের তথ্য সেবা থেকে ছিট্কে পরে। জেলায় খোলা ‘ফনি’র নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সময়মতো প্রেরণ করা যায়নি সরকারের চাহিত তথ্যসমূহ।
উপজেলার একাধিক মোবাইল অপারেটর ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই উপজেলায় জিপির রেজিস্ট্রেশনকৃত গ্রাহক সংখ্যা আট লাখের উপরে। নতুন করে দেশে গ্রামীণফোনের ফোর-জি নেটওয়ার্ক চালু করার উদ্যোগ নিলেও বরিশাল জেলা শহরে সম্প্রতি ফোর-জি-নেটওয়ার্ক চালু করলেও তারা আগৈলঝাড়া উপজেলায় এখনও র্তা চালু করেনি। অথচ কোম্পানীটি প্রতারণা করে আগৈলঝাড়ায় তাদের গ্রাহকদের এসএমএস-এর মাধ্যমে ফোর-জি নেটওয়ার্কের যাবার অনুরোধ জানিয়ে আসছে।
নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনায় পরে ইতোমধ্যেই যে সকল গ্রাহক ১শ’ টাকা দিয়ে থ্রি-জি’র সিম ফোর-জি’তে রিপ্লেসমেন্ট করেছেন তাদের ওই ১শ’ টাকা গচ্ছা গেছে বলেও অভিযোগ করেছেন গ্রাহকেরা। ফোর-জি নেটওয়ার্ক তো দূরের কথা, জিপি তার গ্রাহকদের কাছ থেকে থ্রি-জি নেটওয়ার্কের টাকা হাতিয়ে নিলেও এখন পর্যন্ত আগৈলঝাড়ায় পুরো থ্রি-জি নেটওয়ার্ক সেবা দিতে পারেনি গ্রাহকদের। গ্রাহকদের স্বয়ংক্রিয়ভাবেই থ্রি-জি থেকে ফোর-জি’র সেবা পাবার অধিকার থাকলেও সীম রিপ্লেসমেন্টের নামে গ্রামীণ ফোন কোম্পানী অতিরিক্ত ১শ’ টাকা করে অবৈধভাবে আদায় করে আসছে। এদিকে গ্রাহক আকৃষ্ট করতে গ্রামীণফোন কোম্পানী সর্বপ্রথম উপজেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে তাদের টাওয়ার স্থাপন করলেও গ্রাম তো দুরের কথা উপজেলা শহরের গ্রাহকেরাই নেটওয়ার্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। উপজেলা সদরের টিএ্যান্ডটি এলাকায় স্থাপন করা টাওয়ার এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক কেএম আজাদ রহমান জানান, তার বাসার পাশে টাওয়ার থাকলেও জিপি’র নেটওয়ার্ক না থাকায় কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না তিনি। একই কথা জানিয়েছেন এফএম নাজমুল রিপন, স্বúন দাসসহ গ্রামীণ নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারী গ্রাহকেরা। একই অবস্থা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থাপন করা টাওয়ারের নেটওয়ার্ক।
সূত্র মতে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হবার সাথে সাথে গ্রামীণ সিমে কোন নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। ফলে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন দপ্তরের গ্রামীণফোন গ্রাহকেরা যথা সময়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে না পারায় তাদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে পিছিয়ে পরেছে আগৈলঝাড়া উপজেলার আট লক্ষাধিক গ্রাহকেরা। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ বা লোডশেডিং এর সময় আগে গ্রামীণফোন টাওয়ারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেনারেটর চালু থাকত। দীর্ঘদিন যাবৎ জেনারেটর চালুর ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যুৎ যাবার সাথে সাথে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কে কোন কাজ করতে পারছে না গ্রাহকেরা।
প্রতারণা ও গ্রাহক হয়রানির ব্যাপারে গ্রামীণফোনের খুলনা সার্কেলের বানিজ্যিক বিভাগের টেরিটরি ম্যানেজার (বিক্রয় ও বিতরণ) মো. জাবিদ হোসেনের (০১৭১১-৫০৪২৩৮) নম্বরে ৪ বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৪০:০৪ ● ১৯৪৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ