ঢালচরে ৪২শ’একর খাসজমি, ঠাঁই হচ্ছে না ভূমিহীনদের!

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » ঢালচরে ৪২শ’একর খাসজমি, ঠাঁই হচ্ছে না ভূমিহীনদের!
মঙ্গলবার ● ২০ এপ্রিল ২০২১


ঢালচরে ৪২শ’একর খাসজমি, ঠাঁই হচ্ছে না ভূমিহীনদের!

চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

চরফ্যাশনের ঢালচর ইউনিয়নে মেঘনার ভাঙনে আশ্রয়হীন গৃহহারা ১৫শ’ ভূমিহীন পরিবারের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলছে। প্রমত্তা মেঘানা ভাঙনে প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঢালচর ইউনিয়ন। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে সরেজমিনে সীমানা নির্ধারণ করে ভূমিহীন কৃষকদেও জমি বুঝিয়ে দেয়ার দ্বারপ্রান্তে এলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ঝুলে গেছে সেই ৪২শ’ একর জমির বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া।               সূত্রে জানাযায়, উপজেলার বিছিন্নদ্বীপ ঢালচরের ১৫শ’ আশ্রয়হীন পরিবার উপকূল জুড়ে ছড়িয়ে থানা সদরের স্বজনদের বাড়িবাড়ি কিংবা বেঁড়ি বাধের ঢালে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন বিভাগের জবর দখলের কারনে ক্ষোভ বাড়ছে গৃহহারা ভূমিহীন পরিবারের মাঝে। সাগর মোহনার ঢালচর ২০১০ সনে চরফ্যাশন উপজেলার ১৯ নং ইউনিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। দুর্ভাগ্যবশতঃ ইউনিয়নের মর্যাদা পাওয়ার পর প্রমত্তা মেঘনা ঢালচরের প্রতি বিরূপ হয়। মেঘনার থাবায় গত একদশকে ঢালচরের ১থেকে ৬ নম্বরওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশ আর ৯ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ঢালচর ইউনিয়নটি এখনও টিকে আছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই-তৃতীয়াংশ মেঘনায় বিলীন হলেও গোটা ঢালচরে ১৭শ’ পরিবারের ১৮ হাজার মানুষ এখন ৭ থেকে ৯ নম্বর পর্যন্ত এই ৩টি ওয়ার্ডে ভীড় করেছে। কিন্ত এখানে এ পরিমান জনবসতির সংকুলান যেমন সম্ভব নয় তেমনি এখানে তাদের নিজস্ব কোন জমিও নেই। ভূমিহীন কৃষকদের নিজস্ব জমি না থাকলেও ঢালচর থেকে  তারুয়া পর্যন্ত প্রায় ৪২শ’ একর জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মেঘনার ভাঙ্গনে গৃহহীন ভূমিহীন পরিবার গুলোর পরিত্যক্ত চাষযোগ্য ৪২শ’ একর জমিতে নিজেদেও অধিকারের দাবী নিয়ে ৩৫ বছর ধওে হাইকোটর্ থেকে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ফিরছে।
ঢালচরের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার জানান, ঢালচর থেকে তারুয়া পর্যন্ত জেগে উঠা চাষযোগ্য ৪২শ’ একর জমির বয়স প্রায় ৫০ বছর। অর্ধশত বছর আগে জেগে উঠা বিশাল বিস্তৃত এই জমি নিজেদের দাবী করে বন বিভাগ আটকে রাখলেও কোন বনায়ন করেনি, এখন চাষযোগ্য এই জমি বনায়নের যোগ্যও নয়। এছাড়াও পূর্ব ঢালচরে ১৫শ’ একর জমি কৃষকদের নামে বন্দোবস্ত দেয়া হলেও বন বিভাগের হামলা মামলার কারণে কৃষকরা সেই জমিতে যেতে পারে নি। পাশাপাশি বন বিভাগও সেই জমিতে বনায়ণ করেনি, এখন বনায়নের যোগ্যও নয় ওই জমি।
ভূমিহীন কৃষক আব্দুল কালাম মেম্বার জানান, ঢালচরের পূর্বাশং মেঘনায় ভাঙ্গনের ফলে গৃহহীন ১৫শ’ পরিবার দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরের পরিত্যক্ত চাষ যোগ্য ২৭শ’ একর জমি বন্দোবস্ত চেয়ে আসছে। বন বিভাগের বাঁধার কারণে ভূমিহীন কৃষকরা ১৯৮৬ সনে ভোলা সাব জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। দ্বীর্ঘ শুনানীর পর ১৯৯০ সনে ঢালচর চরসত্যেন যৌথ ভূমিহীন কৃষক সমবায় সমিতির পক্ষে রায় প্রদান করেন। ১৯৯২ সনে বন বিভাগে হাইকোর্ট  এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করলে আপীল বিভাগ মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ১৯৯৭সনেই  চরফ্যাশন সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে প্রেরণ করেন। এই আদালত ২০১৯ সনে দোতরফা সূত্রে ভূমিহীন কৃষকদের অনুকূলে বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য রায় প্রাদন করেন। এই রায়ের প্রেক্ষিতে  ২০২০ সনে ২৭২৭.২৭ একর জমি  ভোলা জেলা প্রশাসক ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে ওই জমি বন্দোবস্ত প্রদানের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ প্রাপ্তির পর চরফ্যাসন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঢালচরের ৪২শ’ একর জমির সীমানা নির্ধারণ করে বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া শুরু করেন। সে সময় কিছু কিছ ুভূমিহীন কৃষক পরিবার ওই জমিতে ঘর নির্মাণ করে বসতি শুরু করেন।
এই বসতি উচ্ছেদের জন্য বন বিভাগ ওই পরিবার গুলোর ওপর হামলা ও মামলা দিয়ে নানান ভাবে আতংক সৃষ্টি করেন। বসতি গড়ার এই প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত করতে বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তফিকুল ইসলাম স্থানীয় ভূমি প্রশাসনসহ ভূমিহীন কৃষকদের জড়িয়ে  ভোলা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ  দাখিল করেন। এই অভিযোগকে পূজিঁ করে বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া স্থগিত করেন ভোলা জেলা প্রশাসক। সে থেকে ঢালচরের চাষযোগ্য ২৭শ’ একর এবংপূর্ব ঢালচরের চাষযোগ্য ১৫শ’ একর জমি পরিত্যক্ত পড়ে আছে, যা বন বিভাগের কোন কাজে লাগেনি আবার ভূমিহীন গৃহহীন কৃষকদেরও আশ্রয়ের ঠিকানা হতে পারেনি। ঢালচরের অসহায় ও ভিটেবাড়ী নদীর গর্ভে বিলীন হওয়া পরিবারের দাবী সরকারের এত জমি থাকতে আমরা মাথা গুজার ঠাই পাচ্ছিনা। আমাদেরকে সরকারি খাস জমিগুলো বন্দোবস্ত দেয়া হোক।
ঢালচরের বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন জানান, পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরে ৪২শ’ একর খাসজমি পরিত্যক্ত আছে, যেখানে ঢালচরের মেঘনার ভাঙ্গনে আশ্রয়হীন সব পরিবারের বসতি সম্ভব। কিন্ত বন বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধন্ত ছাড়া আমার একার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না চরফ্যাশন উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) রিপন বিশ^াস জানান, বিষয়টি নিয়ে যেহেতু ভুমি মন্ত্রণালয় ও বন মন্ত্রণালয়ের টানাপোড়েন রয়েছে। সেহেতু উভয় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে আমরা যে নির্দেশনা পাবো সে অনুযায়ী কাজ করে যাবো।

 

 

এএইচ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:০০:৪৭ ● ৩৯৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ