অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধনের নীতিমালা হচ্ছে

প্রথম পাতা » জাতীয় » অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধনের নীতিমালা হচ্ছে
মঙ্গলবার ● ২৩ এপ্রিল ২০১৯


অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধনের নীতিমালা হচ্ছে

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে পরিশোধনের সুযোগ পেতে যাচ্ছে। সরকারের  জ্বালানি বিভাগ এ বিষয়ে খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। বর্তমানে বেসরকারি পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্টের মালিকরা শুধুমাত্র কনডেনসেট (গ্যাসের উপজাত), ন্যাপথা আমদানি করে তা পরিশোধন করে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু সরকারের নতুন নীতিমালা চূড়ান্ত করার পর বেসরকারী উদ্যোক্তারা অপরিশোধিত জ¦ালানি তেল আমদানি করে দেশে পরিশোধন করতে পারবে। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগ যে খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে তার ধারা ৩ এ অপরিশোধিত তেল বা ক্রুড অয়েল আমদানির বিধান সংযোজন করা হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধনের সুযোগ চেয়ে আসছিল। নতুন নীতিমালার উদ্যোগে তাদের চাওয়ার অর্ধেকটা পূরণ হতে যচ্ছে। তবে পরিশোধনের পর ওই তেল খোলা বাজারে চুরি করে বিক্রি করলে সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে। ওই কারণে সংশ্লিষ্টরা নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে বিষয়টি বিশেষ বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। এতোদিন দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে বেসরকারী উদ্যোক্তারা গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট নিয়ে পরিশোধন করে বিপিসির কাছে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিপিসির তেলে বিক্রি বৃদ্ধির বদলে কমে গেলে বিষয়টির অনুসন্ধানে নামে বিপিসি। দেশের পেট্রোলপাম্পগুলোতে অভিযান চালিয়ে দেখা যায় পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্টের মালিকরা পরিশোধন না করে সরাসরি খোলাবাজারে ওসব তেল বিক্রি করছে। পরে এ বিষয়ে বিপিসি কঠোর হয়।
সূত্র জানায়, দেশে এখন একমাত্র ইস্টার্ন রিফাইনারির জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা রয়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৫ লাখ টন জ¦ালানি তেল পরিশোধন করতে পারে। তার বাইরে দেশের কনডেনসেট থেকে উৎপাদিত পেট্রোল ও অকটেন সরবরাহ করে থাকে পেট্রোবাংলা এবং বেসরকারী উদ্যোক্তাদের ফ্যাকশনেসন প্ল্যান্ট। ওসব কারখানা গ্যাস ক্ষেত্রের উপজাত কনডেনসেট ব্যবহার করে। তার বাইরে সব জ্বালানি তেলই দেশের বাইরে থেকে পরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করা হয়। প্রতি বছর দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে ৬০ লাখ টনের মতো। ওই চাহিদা দিনের পর দিন আরো বাড়ছে। এখন লিটার প্রতি জ্বালানি তেল বিক্রি থেকে সরকার ৭ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত কর আদায় করে। ওই কর ভোক্তার কাছ থেকে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আদায় করে সরকারের কাছে জমা দেয়। কিন্তুধারণা করা হচ্ছে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দিলে ওই রাজস্ব আদায়েও টান পড়তে পারে। তাছাড়া বর্তমানে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তাতে দেশে জ্বালানি তেলের পরিশোধন ক্ষমতা বেড়ে হবে ৪৫ লাখ টন। তার মধ্যে বেসরকারি খাতে পরিশোধন ব্যবস্থা ছেড়ে দিলে সরকারি এই পরিশোধনাগারকে বসে থাকতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, নীতিমালায় বলা হয়েছে, ক্রুড অয়েল আমদানির ক্ষেত্রে বিপিসিকে নির্ধারিত হারে সরকারী রয়্যালটি দিতে হবে। উৎপাদিত ডিজেল সরকার নির্ধারিত দামে বিপিসির কাছে বিক্রি করা যাবে বা নিজস্ব উদ্যোগে রফতানি করা যাবে। কোন অবস্থায়ই দেশের বাজারে বিক্রি করা যাবে না। একই নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে জেট ফুয়েল, কেরোসিন ও অকটেনের ক্ষেত্রেও। তবে নীতিমালায় ফার্নেস অয়েল দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে সরাসরি বিক্রি করার বিধান রাখা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, দেশের অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্ট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বিপিসি। এখন ক্রুড অয়েল আমদানি করে বড় আকারের পরিশোধন ক্ষমতা দিলে তারা যে পরিশোধিত তেল দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি করবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? এতোদিন যেসব পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্ট খোলা বাজারে তেল বিক্রি করছিল তাদের পেট্রোবাংলা কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু পরে নানামুখী চাপে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৯:৩৫ ● ৩৭৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ