ক্ষমা চাওয়ার পরে জামায়াতের বিষয়ে মন্তব্য: ওবায়দুল কাদের

প্রথম পাতা » রাজনীতি » ক্ষমা চাওয়ার পরে জামায়াতের বিষয়ে মন্তব্য: ওবায়দুল কাদের
শুক্রবার ● ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


ওবায়দুল কাদের
ঢাকা সাগরকন্যা অফিস ॥
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলাম যদি জাতির কাছে মা চায় তাহলে তাদের পুনর্মূল্যায়ন করা হবে কি না সে বিষয়টি ভেবে দেখবেন তারা। এখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য দেশের মানুষের কাছে ‘মা না চাওয়ার’ কারণ দেখিয়ে জামায়াতে ইসলামি থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। শুক্রবার তার পদত্যাগের খবর প্রকাশের পরপরই ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, আমি আবার এটাও দেখেছি কোনো কোনো মিডিয়ায়, জামায়াতের নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্বটা খুবই স্পষ্ট। যারা প্রবীণ তারা তাদের পুরনো নীতি-কৌশল-আদর্শ সেটা আঁকড়ে থাকতেই অটল। নতুনরা চেঞ্জ চাচ্ছে। এটাকে কেন্দ্র করে জামায়াত সিদ্ধান্তহীনতায় আছে। তারা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে সেটা তাদের ইন্টারনাল ম্যাটার, তারা কী সিদ্ধান্ত নেবে। আদালতের আদেশের পর নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করে দিলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ কোনো ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ হারালেও দল হিসেবে সক্রিয় রয়েছে জামায়াত। একাদশ নির্বাচনে জামায়াতের ২৫ জন নেতা স্বতন্ত্রভাবে ও ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে অংশ নেয়। নিজেদের অস্তিত্ব রায় মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা জামায়াতের নাম বদল করে নতুভাবে রাজনীতিতে আসার জন্য দলের একাংশ প্রস্তাব করেছে বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। তারা নতুনভাবে রাজনীতিতে এলে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী হবে-প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাগত জানাবে কি জানাবে না সেটা তো এখানে কোনো বিষয় নয়। তারা অতীতের ভুলের জন্য মা চাইবে কি না? তারা মাপ্রার্থী কি না? তারা মাটা আগে চাক। তারপর বলব।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতকে নিয়ে কাদের বলেন, তারা মা চাওয়ার পরেই এ ব্যাপারে আমাদের মূল্যায়নটা, আমাদের বিশ্লেষণ নিয়ে, আমাদের রিঅ্যাকশনটা আমরা প্রকাশ করতে পারি। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে দন্ডিতদের দল জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়েও জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল’ সংগঠন বলা হয়েছিল। গোলাম আযমসহ দলটির শীর্ষনেতাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় পর্যবেণে বলা হয়, ‘ক্রিমিনাল দল’ জামায়াত একাত্তরে তাদের ভূমিকার জন্য কখনো মা চায়নি। আর আদালতে মামলা থাকার কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে সরকার নিষিদ্ধ করতে পারছে না উল্লেখ করে ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, নিবন্ধনের মতো আদালতের রায়েই জামায়াত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। তবে একাত্তরের কর্মকা-ের জন্য মা চাইলে জামায়াতের জন্য ‘দরজা খোলা’ রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে এর আগে মন্তব্য করেছিলেন স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য ‘বীর উত্তম’ খেতাব পাওয়া আবদুল কাদের সিদ্দিকী। আর ২০১৪ সালে বিবিসি সংলাপের এক পর্বে সে সসময় আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা জাতীয় পার্টির নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছিলেন, একাত্তরের ভূমিকার জন্য যদি মা প্রার্থনা করে তাহলে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করাটাই ‘বেটার’।

তারেককে ফেরাতে কূটনৈতিক উদ্যোগ:

একুশে অগাস্ট হামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলায় সাজা নিয়ে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে থাকা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য যা যা করণীয় তা তা করা হচ্ছে। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক যে উদ্যোগ, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবং এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মামলা, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা এবং মুদ্রাপাচারের এক মামলায় দন্ডিত। দেশে ফিরলে তাকে যাবজ্জীবন সাজা খাটতে হবে। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেফতার হয়ে তারেক পরের বছর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি নিয়ে লন্ডনে যান। তারপর থেকে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে সেখানেই রয়েছেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে তার দ- কাযর্করের উদ্যোগ নেওয়ার কথা এর আগেও সরকারের প থেকে বলা হয়েছিল। তবে তার কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

বিএনপি প্রার্থীদের মামলার বিষয়টি দেখবে নির্বাচন কমিশন:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে হাইকোর্টে বিএনপি প্রার্থীদের মামলার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বিষয়টি নির্বাচন কমিশন দেখবে। এ ছাড়া আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলটির প্রার্থীরা অংশ নিয়ে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার আশা করেন কাদের। গত দুদিন ধরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ কী ভাবছে, তা নিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, মামলার বিষয়টি আমলে নেওয়ার কিছু নেই। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ট্রাইব্যুনালে যদি কেউ মামলা করেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের পর, এ বিষয়ের দায়টা বর্তায় নির্বাচন কমিশনের ওপর। তারা এখন আদালতে গিয়ে মোকাবিলা করবে, আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হবে। এটাই নিয়ম। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। ৭৪টি মামলার প্রসঙ্গে কাদের বলেন, যে কোনো সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি মামলা করতে পারে। তার ােভ প্রকাশ করতে পারে। নির্বাচনে পরাজিতরা ট্রাইব্যুনালের সম্মুখীন হয়, ট্রাইব্যুনালে তাদের অভিযোগ পেশ করে, এটা নতুন কিছু নয়। এটা তাদের অধিকারও আছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর ভোট নিয়ে প্রশ্ন করার নৈতিক অধিকার বিএনপি হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেন কাদের।

তিনি বলেন, আজকে (শুক্রবার) ১৫ ফেব্রুয়ারি। ওই ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচনের মতো প্রহসনের নির্বাচন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনও হয়নি। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যারা কলঙ্কিত, তাদের মুখে অন্য কোনো নির্বাচনের শুচিতা নিয়ে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে, স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত না। বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় নির্বাচনের উত্তাপ হারাচ্ছে এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচন এক না। স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়গুলো স্থানীয় সরকারের বিষয়। সে কারণে এটার ল্যও ভিন্ন, কাজের পরিধিটাও ভিন্ন। স্থানীয় নির্বাচনের একটা উত্তাপ আছে, থাকে। কারণ স্থানীয় নির্বাচনে অনান্য দলের প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে। কাজেই এখানে ইলেকশন একেবারে উত্তাপহীন ও প্রাণহীন পরিবেশে হবে- এমনটা বলা যায় না। ‘দু-চারটা জায়গায়’ একক প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়া নতুন কিছু নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেশিরভাগ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং জমবে। সবেমাত্র মনোনয়ন জমা দিয়েছে, এরপর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরেই আসলে ইলেকশনের উত্তাপটা বোঝা যাবে। জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর স্থানীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন কাদের।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে, বিএনপি দলীয়ভাবে বা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের অনেকে অনেক জায়গায় স্থানীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই হিসেবে তারা দলীয়ভাবে না করলেও তাদের উপস্থিতি এখানে থাকছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সাত্তার ও কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন।

এফএন/কেএস

বাংলাদেশ সময়: ১৭:১১:৩৩ ● ৪২৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ