বাউফলে জোড়া খুনের মূলহোতা রফিক-রাসেলের অজানা অধ্যায়

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » বাউফলে জোড়া খুনের মূলহোতা রফিক-রাসেলের অজানা অধ্যায়
রবিবার ● ১৬ আগস্ট ২০২০


বাউফলে জোড়া খুনের মূল হোতা রফিক-রাসেলের অজানা অধ্যায়

বাউফল (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

পটুয়াখালীর বাউফলে যুবলীগ নেতা রকিব উদ্দিন রুমন তালুকদার ও ইশাদ তালুকদার খুন হওয়ার পর আলোচনায় আসে কেশবপুর ইউনিয়ন যুব লীগের সহ সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম(৩৫) ও যুবলীগ কর্মী মোঃ রাসেল হাওলাদারের(৩৪) নাম।
২আগষ্ট সন্ধ্যায় ফিল্মি স্টাইলে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা রুমন তালুকদার ও ইশাদ তালুকদারকে। অভিযোগ রয়েছে এই হত্যা মিশনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয় রফিক এবং রাসেল। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত রফিক-রাসেলের অপকর্ম আর আর সম্পদের হিসেব শুনলে যে কারো চোখ উঠতে পারে কপালে।
অভাব অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা রফিক ছাত্রজীবন থেকেই বেপরোয়া জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলো। রফিকের বাবা মতলেব হাওলাদার ছিলেন মালবাহী নৌকার মাঝি। ইভটিজিং ও কলেজের নিয়ম শৃঙ্খলা না মানায় কেশবপুর মহাবিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয় তাঁকে। এসময় রফিকের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে ওই একই ইউনিয়নের মজিবর হাওলাদারের ছেলে রাসেল হাওলাদারের সাথে। স্থানীয়দের কাছে ছিঁচকে চোর হিসেবে পরিচিত ছিলো রাসেলের। রাসেলও ছিল দরিদ্র পরিবারের সন্তান। রাসেলের বাবা ছিলেন কেশবপুর বাজারে একজন সবজি বিক্রেতা। টিউবয়েল চুরি করে ধরা পরায় দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে ছিলো রাসেল। এলাকার বাইরে গেলেও নিজের অভ্যাস বদলায়নি সে বরং প্রতারণামূলক জুয়া খেলা রপ্ত করে ৬বছর পর নিজ গ্রামে ফিরে আসে রাসেল।  এরপর রাসেল এবং রফিক মিলে তৈরী করে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। এই বাহিনীর অধিকাংশই ছিলো স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। শুরু হয় রফিক-রাসেল অপরাধ জগতে নতুন যাত্রা। কেপশবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণামূলক জুয়া খেলার আসর বসিয়ে জুয়াড়িদের থেকে টাকা হাতিয়ে নিতো রফিক-রাসেল সিন্ডিকেট। এর বাইরে কালাইয়া-ঢাকাগামী লঞ্চে নিয়মিত জুয়ার বোর্ড বসিয়ে সাধারন যাত্রীদের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়াও ছিলো এই সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রধান কাজ। লঞ্চে ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত ছিলো রফিক-রাসেল সিন্ডিকেট। এর বাইরে চোরাই গরু জবাই করে মাংস বিক্রী করাও ছিলো রফিক রাসেলের অন্যতম পেশা। জলদস্যু মহসিন ডাকাতের সাথেও রফিক-রাসেলের ছিলো বিশেষ সখ্যতা। চুরি ডাকাতি ছিনতাই এবং প্রতারণামূলক নানা কাজের মধ্য দিয়ে রাতারাতি বিপুল পরিমান অর্থ বিত্তের মালিক বনে যায় রফিক ও রাসেল। অবৈধ মাদকের চালান পরিবহনেরও কাজ করতো রফিক-রাসেল। ১১ বছর পূর্বে পার্শ্ববর্তী গলাচিপা উপজেলার এক মোটরসাইকেল চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার হন রফিক। ২০১৭সালে বাউফল পৌরসভায় বীনা জুয়েলার্সে ডাকাতির ঘটনায়ও গ্রেফতার হন রফিক। রাসেলের বিরুদ্ধেও রয়েছে চুরি ডাকাতির একাধিক অভিযোগে। বেশ কয়েকবার জেলও খেটেছেন রাসেল। অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ হালাল করার জন্য এরপর রফিক ও রাসেল নাম লেখান আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে। এর আগে রফিক এবং রাসেল বিএনপি দলীয় রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত ছিলো বলে জানান স্থানীয়রা।
রফিক ও রাসেলের সম্পদ অনুসন্ধানে জানা যায় চাঞ্চল্যকর সব  তথ্য।
কেশবপুর বাজারের কাছে তিনতলা ভবন তৈরীর কাজ চলমান রয়েছে রফিকের। একটি জাহাজ দুইটি মাইক্রোবাস রয়েছে রফিকের। এছাড়াও ভাড়ায় চালিত রয়েছে ৭টি মটর সাইকেল রয়েছে তাঁর। কেশবপুর বাজারে রফিকের রয়েছে একটি রড সিমেন্টের আড়ৎ। এছাড়াও নামে বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমান জমি আর নগদ অর্থ।
সম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে একই পথে হেটেছেন রাসেল। কেশবপুর বাজার সংলগ্ন বিলাসবহুল একটি দ্বিতল ভবন গড়েছেন রাসেল। ওই ভবনে বর্তমানে তাঁর দুই স্ত্রী বসবাস করছেন। কেশবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় নামে বেনামে কিনেছেন অর্ধকোটি টাকার সম্পত্তি। বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্ঠানে প্রায় দেড় কোটি টাকা চড়া সুদে বিনিয়োগ করা রয়েছে রাসেলের। সুদ সমেত টাকা ফেরত না দিতে পারলে জায়গা জমি নিজের নামে লিখে নিতেন রাসেল। এসব কাজে কৌশলে দলীয় প্রভাব ব্যবহার করতো রাসেল। এছাড়াও রাসেল তাঁর আপন দুই ভাইকে কেশবপুর বাজারে মুদী মনোহরী পন্যের বিশাল দুইটি দোকান করে দিয়েছেন। রফিক রাসেলের এসব অবৈধ কর্মকান্ড এবং অর্থ উপার্জণের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্যও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন স্থানীয়রা।
রুমন ও ইশাদ তালুকদার হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ মহিবুল্লাহর নিকট রফিক এবং রাসেলের অবৈধ কর্মকান্ড এবং অর্থ উপার্জনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, রফিক ও রাসেলসহ মামলার সকল আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখছি।


এসএস/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৬:১৫ ● ১৯৮৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ