আমতলীতে শিক্ষক বদলি বাণিজ্য চরমে

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে শিক্ষক বদলি বাণিজ্য চরমে
মঙ্গলবার ● ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০


প্রতীকী ছবি

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক বদলিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ের কোটা কেটে শহরের বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। এতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা ধংস হয়ে যাচ্ছে- এমন অভিযোগ এনে অভিভাবক মোঃ হাসান মৃধা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলায় ১৫২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আমতলী পৌর শহরে ৯টি বিদ্যালয়। ওই সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ রয়েছে ৯’শ ১০ টি। বর্তমানে কর্মরত আছে ৭’শ ৮৫ জন। ১’শ২৫ জন শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। এদিকে এ বছর জানুয়ারী মাসে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে শিক্ষক বদলি বাণিজ্য। মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকরা কোটা কর্তন করে আমতলী পৌর শহরের বিদ্যালয় বদলি হয়ে আসছেন। এতে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম ধংসের মুখে পরেছে। শিক্ষা ব্যবস্থার এমন করুন দশার অবস্থা জানিয়ে শিক্ষানুরাগী মোঃ হাসান মৃধা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের আমতলী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৩টি কিন্তু ওই বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন ২১ জন। আমতলী একে সংলগ্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদ রয়েছে ১৪টি কিন্তু শিক্ষক কর্তরত আছেন ১৮ জন। ছুরিকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদ রয়েছে ৬ টি কিন্তু শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন ৯ জন। গ্রামের বিদ্যালয়গুলো থেকে কোঠা কর্তন করে শিক্ষকরা পৌর শহরের বিদ্যালয়ে কোঠা সৃষ্টি করে বদলি হয়ে এসেছেন। এতে গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা ধংসের মুখে পরেছে। দ্রুত শহরের বিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষক পদ কর্তন করে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সমন্বয় করার দাবী জানিয়েছেন অভিভাবকরা। কুকুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৫’শ৫০ জন। ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক থাকার কথা ১৪ জন কিন্তু শিক্ষক কর্মরত রয়েছে মাত্র ৮ জন। গ্রামের অনেক বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও ওই সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২ জন। গ্রামের ৮০ ভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংঙ্কট রয়েছে। এদিকে ২০১৬ সালে আমতলী পৌর শহরের বিদ্যালয়গুলোতে যোগদানকৃত শিক্ষকরা কোন বিধিতে বদলি হয়ে আমতলী পৌর শহরের বিদ্যালয়গুলোতে এসেছেন এমন কোন তথ্য আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে নেই। অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটির অনুমোদন ছাড়াই তারা পৌর শহরের বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
আমতলী পৌর শহরের কলেজ রোডের বাসিন্দা অভিভাবক মোঃ হাসান মৃধা বলেন, গ্রামের বিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষকরা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সুবিধামত কোঠা কর্তন করে  পৌর শহরের বিদ্যালয়ে কোঠা সৃষ্টি করে বদলি হয়ে এসেছেন। এতে গ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা ধংসের মুখে পরেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রামাঞ্চল ও পৌর শহরের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সমন্বয়ের দাবী জানাই।
আমতলী বন্দর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, অনেক শিক্ষক গ্রামের বিদ্যালয়ের কোঠা কর্তন করে আমার বিদ্যালয়ে কোঠা সৃষ্টি করে বদলি হয়ে এসেছেন। এখানে আমার কোন দায় নেই। তিনি আরো বলেন এগুলো করেছে উপজেলা শিক্ষা কমিটি। আমতলী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, এ অনিয়মগুলো একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র অনুপাতে শিক্ষক সমন্বয় করা হবে।
বরগুনা জেলা প্রাথমকি শিক্ষা অফিসার এম মিজানুর রহমান বলেন, গ্রামের বিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষকরা পৌর শহরের বিদ্যালয়ে এসে জড়ো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থী অনুপাতে সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমন্বয় করা হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাইন বিল্লাহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম সরোয়ার ফোরকান বলেন, গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুগম করতে শহরের অবৈধভাবে সৃষ্ট কোঠা বন্ধ করে সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষক সমন্বয় করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৬:০২ ● ৩৫৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ