সৎ, সাহসী ও যোগ্য শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ: আপোষহীন শিক্ষক নেতার প্রতিচ্ছবি

হোম পেজ » মুক্তমত » সৎ, সাহসী ও যোগ্য শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ: আপোষহীন শিক্ষক নেতার প্রতিচ্ছবি
সোমবার ● ২৭ অক্টোবর ২০২৫


অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ। ছবি- সংগৃহীত

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির

জাতির অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি শিক্ষা, আর সেই শিক্ষার চালিকাশক্তি শিক্ষক। তবে সব শিক্ষক একরকম নন- কেউ শুধুমাত্র পাঠদানেই সীমাবদ্ধ থাকেন, কেউ আবার সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত হয়ে ওঠেন। এমনই এক অসাধারণ শিক্ষক নেতা, যিনি সত্য, সাহস ও ন্যায়ের প্রতীক হয়ে আলোকিত করেছেন শিক্ষক সমাজকে- তিনি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ।

একদিকে তিনি একজন সফল সংসদ সদস্য, অন্যদিকে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষানেতা। শিক্ষক সমাজের ন্যায্য দাবি আদায়ে তিনি আজীবন ছিলেন অগ্রভাগে। সততা, দৃঢ়তা ও আপোষহীন নেতৃত্ব তাঁকে পরিণত করেছে শিক্ষকদের প্রেরণার প্রতীকে।

 

শিক্ষক নেতা হিসেবে উত্থান

অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজের জীবনের শুরুটা ছিল একেবারে সাধারণ। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী, সৎ ও পরিশ্রমী। শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের পর তিনি উপলব্ধি করেন- দেশের শিক্ষক সমাজের অবস্থা কতটা শোচনীয়, তাদের প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার কতটা উপেক্ষিত। এই উপলব্ধিই তাঁকে পরিণত করে এক আন্দোলনকারী নেতায়। তিনি বুঝেছিলেন, শুধু পাঠদান নয়, শিক্ষকদের ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারলেই শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন সম্ভব। এই বিশ্বাস থেকেই তিনি যোগ দেন শিক্ষক আন্দোলনে এবং ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন শিক্ষক সমাজের মুখপাত্র।

 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে লড়াই

বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষকদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ‘এমপিও’- Monthly Pay Order. এটি তাঁদের জীবিকা, সম্মান ও টিকে থাকবার ভিত্তি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অবহেলিত ছিলেন। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, পদোন্নতি, চিকিৎসা সুবিধা, পেনশনসহ নানা দাবিতে আন্দোলন চলেছে বছরের পর বছর।

এই দাবিগুলোর নেতৃত্বে যাঁর নাম সবচেয়ে উজ্জ্বল, তিনি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ।

তিনি কেবল মিছিলে বক্তৃতা দেননি- তিনি ছিলেন মাঠে, রোদে-বৃষ্টিতে, সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত হয় সেই অমর বাক্য- ‘শিক্ষকের সম্মান কোনো দয়া নয়, এটি অধিকার’।

এই এক উক্তিই ৬ লক্ষাধিক এমপিওভুক্ত শিক্ষকের হৃদয়ে জাগিয়েছে নতুন সাহস ও ঐক্য।

 

আপোষহীনতার প্রতীক

অধ্যক্ষ আজিজের জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁর আপোষহীন মনোভাব। ক্ষমতার প্রলোভন, রাজনৈতিক চাপ বা ব্যক্তিগত সুবিধা- কিছুই তাঁকে ন্যায়ের পথ থেকে সরাতে পারেনি।

তিনি বিশ্বাস করেন- ন্যায়ের পথে আপোষ মানে অন্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ।

এই বিশ্বাস তাঁকে যেমন অসংখ্য সমর্থক দিয়েছে, তেমনি অনেক বিরোধীরও মুখোমুখি করেছে। কিন্তু তিনি জানেন-  ইতিহাসে স্থান পায় সেই মানুষই, যিনি সত্যের পথে অবিচল থাকেন।

 

নেতৃত্বে মেধা ও মানবতা

একজন সত্যিকারের নেতা কেবল বক্তা নন- তিনি অনুপ্রেরণার উৎস। দেলোয়ার হোসেন আজিজ সেই বিরল নেতাদের একজন, যিনি মানুষকে সাহস দেন, বিশ্বাস জাগান, আশার আলো জ্বালান। শিক্ষক সমাজে তিনি নেতা, অভিভাবক ও সহযোদ্ধা; শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি প্রিয় শিক্ষক।

তিনি বলেন, শিক্ষক সমাজের দায়িত্ব শুধু জ্ঞান বিতরণ নয়, সত্য ও ন্যায়ের শিক্ষা দেওয়া। আর এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।

 

দাবি আদায়ের সংগ্রাম- এক নিরন্তর যুদ্ধ

অধ্যক্ষ আজিজের নেতৃত্বে শিক্ষক সমাজের আন্দোলন কেবল বেতন বাড়ানোর দাবি ছিল না; এটি ছিল মর্যাদা ও ন্যায়ের দাবি। তিনি বলতেন,

আমরা শিক্ষকেরা জাতি গড়ি। আমাদের দাবি পূরণ মানে জাতি গঠনের স্বীকৃতি।

রাজপথে, মাঠে-ময়দানে তাঁর নেতৃত্বে ছড়িয়ে পড়েছে এক প্রতীকী নাম- দাবির সৈনিক দেলোয়ার হোসেন আজিজ।

 

সততা ও ত্যাগের প্রতিচ্ছবি

অধ্যক্ষ আজিজ কখনোই নিজের স্বার্থে আন্দোলন ব্যবহার করেননি। সহকর্মীদের অধিকারই ছিল তাঁর কাছে সর্বাগ্রে।

তিনি জানেন, সত্যিকারের নেতা সেই, যিনি নিজের চেয়ে সমাজের স্বার্থকে বড় করে দেখেন।

তাঁর এই সততা ও ত্যাগ তাঁকে শিক্ষক সমাজের কাছে অনন্য করেছে- এক লোভহীন, সাহসী ও নৈতিকতার প্রতীক।

 

শিক্ষার আলো ও মানবিকতার মিশেল

শিক্ষা উন্নয়ন, শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠন ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায়ও তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর প্রিয় উক্তি- একজন শিক্ষকের কলম থেমে গেলে, সমাজের বিবেক নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এই দর্শন থেকেই তিনি নিজের প্রতিষ্ঠান কাতলা সেন কামিল মাদ্রাসাকে গড়ে তুলেছেন এক আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, যেখানে শৃঙ্খলা, সৃজনশীলতা ও নৈতিকতার মেলবন্ধন ঘটে প্রতিদিন।

 

মানুষের নেতা, শিক্ষকদের প্রেরণা

যাঁরা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা জানেন-  তাঁর ব্যক্তিত্বে রয়েছে মমতা, শাসনে রয়েছে ন্যায়। একজন শিক্ষার্থী একবার বলেছিলেন,

আপনার শিক্ষার্থী হতে পেরে আমি ধন্য। এই একটি বাক্যই তাঁর জীবনের সর্বোচ্চ পুরস্কার।

 

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা

একদিন হয়তো অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ থাকবেন না, কিন্তু তাঁর আদর্শ থাকবে চিরন্তন। ভবিষ্যতের শিক্ষক সমাজ যখন ন্যায্য দাবিতে সংগঠিত হবে, তখন তাঁর নাম উচ্চারিত হবে প্রেরণার উৎস হিসেবে। তাঁর সংগ্রাম ও নৈতিক দৃঢ়তা ইতিহাসের পাতায় অমলিন থাকবে।

মোট কথা, অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজ কেবল একজন শিক্ষক নন- তিনি একজন আদর্শ, একজন সংগ্রামী যোদ্ধা, একজন সত্যভাষী নেতা। তিনি প্রমাণ করেছেন-

শিক্ষক শুধু পাঠদাতা নয়, সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত। তাঁর সততা, সাহস ও ত্যাগ শিক্ষক সমাজকে পথ দেখাবে, যতদিন বাংলাদেশে শিক্ষা টিকে থাকবে। তিনি এক অমর আলোকবর্তিক-  যার আলো নিভে গেলেও দীপ্তি থেকে যাবে অনন্তকাল।

 

লেখক-

চেয়ারম্যান, জাতীয় মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (কেন্দ্রীয় কমিটি)

চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ এমপিও অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা কর্মচারী কল্যাণ ফোরাম।

বাংলাদেশ সময়: ১০:০৬:০৮ ● ১০৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ