সাগরকন্যা প্রতিবেদক, আমতলী (বরগুনা)
বিএনপির নেতাকর্মী-কর্মীদের দাওয়াত না দেয়ায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের আয়োজন করা সকল খাবার খেয়ে ও নষ্ট করে ফেলেছেন উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব কাজী ও সাধারণ সম্পাদক রিপন কাজীর নেতৃত্বে আসা ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী। ন.ম.ম আমজাদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোসেন এমন অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আজ সোমবার এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার কালিবাড়ী ন.ম.ম আমজাদিয়া আলিম মাদ্রাসায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ন.ম.ম আমজাদিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি গত ৪ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয়। আমতলী সরকারী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ ফজলুল হককে কমিটির সভাপতি করা হয়। কমিটির প্রথম সভা গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। সভা উপলক্ষে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৫০ জন আমন্ত্রিত অতিথির জন্য ওইদিন দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন। কিন্তু মাদ্রাসার সভায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের দাওয়াত দেয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হন গুলিশাখালী ইউনিয়ন ও ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদ্রাসার এক শিক্ষককে রিপন হাজী নামের এক বিএনপির নেতা তার দলের নেতাকর্মীদের দাওয়াত না দেয়ার কারণ জানতে চান। পরে ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব কাজী ও সাধারণ সম্পাদক রিপন কাজীর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী মাদ্রাসায় এসে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে এবং তাদের দাওয়াত না দেয়ার কারণ জানতে চাইলেন। পরে শিক্ষকদের গালাগাল করে তারা রান্নাকরা খাবার খেয়ে ফেলেন। আয়োজন করা সব খাবার শেষ করতে না পারায় যাতে আমন্ত্রিত অতিথিরা খেতে না পারেন, সে জন্য পাতিলে টিস্যু, পানি ও তাদের খাওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার ঢেলে দেন। পরে তারা শিক্ষক, কর্মচারী ও সভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের হুমকি দিয়ে চলে যান বলেও অভিযোগ শিক্ষকদের।
তাদের ভয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আইনী পদক্ষেপ নিতে সাহস পাচ্ছে না বলেও জানানো হয়। ঘটনায় জড়িত রিপন কাজী তার ফেইসবুক আইডি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ ছবি দিয়ে পোস্ট করেন- ‘ন.ম.ম আমজাদিয়া আলিম মাদ্রাসায় পিকনিকের কিছু স্মৃতি।’ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী ওঠে নেটিজেনদের মাঝে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথি বলেন, ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতা মাহবুব কাজী ও রিপন কাজীর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী দাওয়াত না দেয়ার কারণ জানতে মাদ্রাসায় প্রবেশ করেন। তারা শিক্ষকদের গালাগাল করে অতিথিদের জন্য রান্না করা খাবার খেয়ে বাড়ি নিয়ে যান। অবশিষ্ট খাবার অতিথিরা যাতে খেতে না পারে, তাই পাতিলে টিস্যু, উচ্ছিষ্ট খাবার ও নোংরা পানি ফেলে নষ্ট করে দেন।
তারা আরও ন.ম.ম আমজাদিয়া মাদ্রাসার ঘটনা আওয়ামীলীগ সরকারের আমলকেও হার মানিয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
গুলিশাখালী ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব কাজী স্বীকার করে জানান, মাদ্রাসায় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীর জন্য অনুষ্ঠান হওয়ায় ও তাদের দাওয়াত না দেয়ায় তারা খাবার খেয়েছেন, তবে কোনো খাবার নষ্ট করেননি।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোসেন জানান, নেতাকর্মীরা সভা কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষক ও অতিথিদের গালাগাল করেছেন। পরে খাবার খেয়ে অবশিষ্ট খাবারে টিস্যু, উচ্ছিষ্ট খাবার ও নোংড়া পানি ঢেলে দিয়েছেন। তারা খাবার শেষে হুমকিও দিয়েছেন। অধ্যক্ষ এসব ঘটনার শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম মৃধা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গর্হিত। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মামুন ভিপি জানান, দলীয় তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান জানান, অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
