উন্নয়ন বঞ্চিত জনপদ শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন কাদা মাড়িয়ে পৌঁছাতে হয় স্কুলে

হোম পেজ » পটুয়াখালী » উন্নয়ন বঞ্চিত জনপদ শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন কাদা মাড়িয়ে পৌঁছাতে হয় স্কুলে
শুক্রবার ● ২৯ আগস্ট ২০২৫


উন্নয়ন বঞ্চিত জনপদ, শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন কাদা মাড়িয়ে পৌঁছাতে হয় স্কুলে

সাগরকন্যা প্রতিবেদক, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নে খাজুরা গ্রামে অবস্থিত ৭৮ নং খাজুরা সরকারি (পাইলট) প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের পৌঁছাতে প্রতিদিন কাদা মাড়িয়ে যেতে হয়। কলাপাড়ার উন্নয়ন বঞ্চিত অন্যতম জনপদ এটি। কুয়াকাটা পর্যটন নগরীর পাশের এই গ্রাম। বিদ্যালয়ের সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অবর্ণনীয় দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই ক্লাসে যেতে বাধ্য হয়।

বিদ্যালয়টি কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের চারপাশে কোনো পাকা রাস্তা নেই। ফলে বর্ষা মৌসুমে কর্দমাক্ত কাঁচা রাস্তায় হাঁটা শিশু শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। ভেজা জামা-কাপড় পরে স্কুলে ক্লাসে বসতে হয় তাদের। অনেক সময় হাঁটুসমান কাদা পেরোতে হয়। এতে বই-খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বৃষ্টির দিনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি ক্লাসে আসতে পারছে না। সরকারের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বিদ্যালয়ের পাশের দুটি ভাঙা কাঠের সাঁকো। ছোট ছোট শিশুরা প্রতিদিন জীবন বাজি রেখে সাঁকো পার হয়। ব্যাগ ও ভেজা জামা সামলাতে গিয়ে অনেকেই পড়ে যায়। দুর্ঘটনায় হাত-পা ভাঙা কিংবা গুরুতর আঘাত পাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এতে শিশুদের শিক্ষার প্রতি অনীহা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।

বিদ্যালয়ের চারপাশে প্রায় সাত থেকে আট কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে মংথয়পাড়া খালেক ভিডিবির বাড়ি থেকে আলম শিকদারের বাড়ি হয়ে খাজুরা স্কুল হয়ে জলিল মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত ২ কিলোমিটার।

লেবুর বন ইদ্রিস হাওলাদারের বাড়ি থেকে কবিরের দোকান হয়ে কালাইয়াপাড়া মসজিদ পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার।

বাহামকান্দা হালিম ফরাজির বাড়ি সংলগ্ন মাদ্রাসা থেকে আলম শিকদারের বাড়ি পর্যন্ত আধা কিলোমিটার।

বাহামকান্দা হাকিম হাওলাদারের বাড়ি থেকে সাইদ ফকিরের বাড়ি সংলগ্ন কালভার্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার উল্লেখযোগ।

অভিভাবক ও এলাকাবাসীর দাবি, এটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিকে পড়তে হলে সাত-আট কিলোমিটার দূরে মহিপুর বা কুয়াকাটায় যেতে হয়, যা অধিকাংশ শিশুর জন্য প্রায় অসম্ভব। ফলে ঝরে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে ক্রমশ। ঝরেপড়া শিক্ষার্থী নাঈম ওই বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। এখন সে কুয়াকাটার একটি আবাসিক হোটেলে কাজ করে। নাঈম জানায়, তারমত অনেকে ছেলে মেয়েই নিয়মিত স্কুলে যেতে না পারায় একসময় পড়ালেখা বন্ধ করেছে। এভাবে মেয়েদের অনেকে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বলেও ঝরেপড়া শিক্ষার্থী নাঈম জানায়।

ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. শামসুল হক হাওলাদার বলেন, শিশুদের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে দুটি কালভার্ট ও সাত-আট কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ জরুরি। অন্যথায় এখানকার প্রাথমিক শিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

স্থানীয় অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, বহুবার এলজিইডিসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সাড়া মেলেনি। তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, লতাচাপলী ইউনিয়নের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা খাজুরা। এখানকার রাস্তাগুলো স্কিমভুক্ত আছে। দ্রুত পাকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করব। আশা করি শিগগির সমাধান হবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাহিদা বেগম বলেন, আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব এবং উপজেলা পরিষদের সভায় উত্থাপন করে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাব।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৩:০২ ● ১৮০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ